পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরি হারিয়ে গেছে?

পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরি হারিয়ে গেছে?

প্রতি বছরই বাংলা একাডেমির আয়োজনে একুশে বইমেলা হয়। ইদানীং মেলার একটি বিষয় আলাদা করে চোখে পড়ে। তা হলো শিশুদের আনাগোনা বেড়ে যাওয়া। এর কারণ হলো শুক্র শনিবারের শিশু প্রহর। সিসিমপুরের আয়োজন। বর্তমানে গার্ডিয়ানরাও শিশুদের বই পড়াতে আগ্রহী। আমাদের সময় পরিস্থিতি এরকম ছিলো না। ছোটদের নিয়ে বইমেলায় যাওয়ার বিষয়টি সীমিত ছিলো। তবে লাইব্রেরি থেকে বই সংগ্রহের চর্চা তখন শিশু কিশোরদের মধ্যে আরো বেশি ছিলো।

নিজের কথা যদি বলি ছোটবেলা থেকেই আমার আউট বই পড়ার অভ্যাস। সেই সময় পাঠ্যবইয়ের বাইরে কিছু পড়া মানে আউট বই। সেই ছোট বয়সেই নিয়মিত পড়তাম দৈনিক পত্রিকা। মনে পড়ে, স্কুলের লাইব্রেরি থেকে বই নিয়ে পড়তাম। আব্বার চাকরির সূত্রে থাকতাম পাবনা। স্কুলের লাইব্রেরির সঙ্গে আমার একটা বিশেষ সম্পর্ক গড়ে উঠে। যারা আউট বইয়ে আগ্রহী, এমন বন্ধুবান্ধবই বেশি ছিলো। আমাদের সবার গল্প বই পড়ার প্রতি টান ছিলো। একে অন্যের সঙ্গে বই বিনিময় করতাম। আজিমপুর গ্যারেজ মাঠের পাশে সরকারি কলোনিতে থাকা দুই ভাই আমার বন্ধু ছিলো। ওদের বাবা সচিব ছিলেন। শাহীন ও শাহজাদা নামের সেই দুই সহোদরের বাসায় ব্যক্তিগত বইয়ের সংগ্রহ অনেক সমৃদ্ধ ছিলো। বুকসেলফ ভর্তি বই আর বই। ওদের কাছ থেকে বেশি আনতাম থ্রিলার বই। বিশেষ করে রোমেনা আফাজের লেখা দস্যু বনহুরের কথা বেশি মনে পড়ে। সত্তর দশকের শেষদিকে ১৯৭৬ ৭৭ সালের দিকে তখনো কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগার ছিলো বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরি বিল্ডিংয়ে। বই পড়তে সেখানে নিয়মিতই যেতাম। আমার ভাইয়েরাও যেতো। গুলিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনের একটি লাইব্রেরি ছিলো। সেখানেও যাওয়া হতো। মোটকথা বইপত্র যেখানে পাওয়া যেতো, সেখানেই যেতে চেষ্টা করতাম। লাইব্রেরি বা এলাকার নাম মনে করতে পারছি না। পুরান ঢাকার একটি লাইব্রেরি থেকে বই ভাড়া করে বাসায় নিয়ে এসে পড়তাম। সেবা প্রকাশনীর মাসুদ রানা আর কুয়াশা সিরিজের বইগুলো নিয়মিতভাবে পড়ার নেশা ছিলো। এই বয়সে এসে সেই সময়কার অনেক বিষয়ই পাগলামি মনে হয়। বইয়ের ব্যাপারেও কিছু সেই অনুভূতি কাজ করে। লাইব্রেরির প্রতি আগ্রহ থাকার সেই সময়গুলো এখন মধুর স্মৃতি হয়ে দেখা দেয়।

এখনকার সমাজ বাস্তবতায় এই ঢাকা শহরের শিশুদের আমরা লাইব্রেরিতে যাওয়ার পথ কতটা উন্মুক্ত রাখতে পেরেছি এটা একটা বড় প্রশ্ন। এখন তো ফ্ল্যাটের মধ্যে আমরা শিশুদের জীবন আটকে রেখেছি। সারাক্ষণ ক্লাশ, পাঠ্যবই, কোচিং, স্কুলব্যাগ এসব নিয়েই থাকতে হচ্ছে তাদের। পাশের ফ্ল্যাটের শিশুদের পর্যন্ত চেনার বা জানার সুযোগ নেই। এ অবস্থায় লাইব্রেরিতে যাওয়ার সুযোগ অনেক কম। ঢাকা থেকে পাড়া সংস্কৃতিও হারিয়ে গেছে। এ অবস্থায় পাড়ায় পাড়ায় লাইব্রেরির সংস্কৃতি চিন্তাই করা যায় না। বইমেলার পাশাপাশি তাই লাইব্রেরি আন্দোলনে নতুন করে সবার মনোযোগ প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।

ইয়াহিয়া মির্জা: হেড অব পাবলিক রিলেশনস অ্যান্ড মিডিয়া ডিভিশন, সিটি ব্যাংক

#তমহ/বিবি/১৯ ০৩ ২০২২


ইয়াহিয়া মির্জা
Published at: সোম, এপ্রিল ৪, ২০২২ ১২:২৭ অপরাহ্ন
Category: মত
Share with others:
ad

Recent Posts

Recently published articles!