গুগল-ফেসবুক থেকে রাজস্ব কবে?

গুগল-ফেসবুক থেকে রাজস্ব কবে?

গুগল, ফেসবুকসহ অন্যান্য ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বাংলাদেশ রাজস্ব আদায় করতে পারছে না এখনো। তবে প্রচলিত আইন অনুযায়ী সব ধরনের ট্যাক্স, ভ্যাট এবং অন্যান্য রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। এর বাস্তবায়ন কবে, কীভাবে হবে- তা এখনো স্পষ্ট নয়। সরকারের সংশ্লিষ্টরা এ বিষয়ে অবশ্য কাজ করছে।
সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, আন্তর্জাতিক এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো উৎস কর বা ভ্যাট এবং শুল্ক না দেয়ায় সরকার এবং দেশীয় গণমাধ্যম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
অন্যদিকে বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, গুগলসহ অন্যান্য মাধ্যমগুলো বিষয়টিতে ঢাকায় সরকারের সাথে আলোচনা চালাচ্ছে। তারা ভ্যাট দেয়ার ক্ষেত্রে আইনগত দুর্বলতার কথা বাংলাদেশ সরকারকে জানিয়েছে বলে জানা গেছে।

আদালতের নির্দেশনা: এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে থাকা রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে এ ৮ নভেম্বর রোববার বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল এবং বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব। তাকে শুনানিতে সহযোগিতা করেন ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার, ব্যারিস্টার মো. মাজেদুল কাদের, ব্যারিস্টার মোজাম্মেল হক ও ব্যারিস্টার সাজ্জাদুল ইসলাম।
একইসঙ্গে আদালত তার রায়ে পাঁচ দফা নির্দেশনা দিয়েছেন। এগুলো হলো—
এক. অনতিবিলম্বে সব ইন্টারনেট, যেমন—গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব, অ্যামাজন কোম্পানিগুলোকে পরিশোধিত (বাংলাদেশি কোম্পানিগুলো) অর্থ থেকে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী, সব প্রকার ট্যাক্স, ভ্যাট এবং অন্যান্য রাজস্ব আদায় করতে হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, বাংলাদেশ ব্যাংক, বিটিআরসিসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি দফতরগুলোকে এ আদেশ প্রদান করা হয়েছে।

দুই. ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশ থেকে বিগত পাঁচ বছরে পরিশোধিত অর্থের বিপরীতে আনুপাতিক হারে বকেয়া রাজস্ব আদায় করতে হবে।

তিন. উক্ত রাজস্ব আদায়ের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর হলফনামা আকারে অগ্রগতি প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করবে।

চার. এই রায়টি একটি চলমান আদেশ বা কন্টিনিউয়াস ম্যানডামাস হিসেবে বলবৎ থাকবে; এবং

পাঁচ. এই রায় বাস্তবায়নে কোনও ধরনের ব্যত্যয় ঘটলে বাংলাদেশের যেকোনও নাগরিক যেকোনও সময় আদালতে আবেদন দাখিল করে প্রতিকার চাইতে পারবেন।

পরে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির পল্লব বলেন, ‘ইন্টারনেটভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া এবং বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধনের লক্ষ্যে জনস্বার্থে রিট দায়ের করা হয়েছিল। সেই রিটের ওপর জারি করা রুলের যথাযথ ঘোষণা করে পাঁচটি নির্দেশনাসহ রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট। ফলে এই রায়টি ঐতিহাসিক এবং যুগান্তকারী হয়ে রইলো।’

তিনি আরও বলেন, ‘রায় ঘোষণা করার সময় আদালত সরকারি বিভিন্ন দফতরের কর্মকাণ্ডে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন।  জনস্বার্থে আমাদের দায়েরকৃত রিট পিটিশনের আদেশের পর দীর্ঘ আড়াই বছর অতিবাহিত হলেও সরকারি দফতরগুলো রাজস্ব আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। দীর্ঘ আড়াই বছরেও ইন্টারনেট কোম্পানিগুলো থেকে রাজস্ব আদায়ে দফতরগুলো তেমন কোনও অগ্রগতি দেখাতে পারেননি। এই রায়টি বাস্তবায়ন করা গেলে বাংলাদেশের রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে একটি যুগান্তকারী বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করা সম্ভব। কারণ, প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা এই কোম্পানিগুলোকে বাংলাদেশ থেকে পরিশোধ করা হয়ে থাকে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে একটি পত্রিকার প্রতিবেদন সংযুক্ত করে এবং সারা বিশ্বে গুগল-ফেসবুক কর্তৃক ট্যাক্স ফাঁকি দেওয়ার বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার মো. হুমায়ুন কবির পল্লব, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ কাওছার, ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মাজেদুল কাদের, ব্যারিস্টার মো. সাজ্জাদুল ইসলামসহ ৬ জন আইনজীবী জনস্বার্থে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন।

ওই রিট আবেদনে অর্থ মন্ত্রণালয় সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, আইন মন্ত্রণালয় সচিব, ডাক ও  টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় সচিব, বিটিআরসি চেয়ারম্যান, তথ্য মন্ত্রণালয় সচিব, বাংলাদেশ নিউজপেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট, গুগল, ফেসবুক, ইয়াহু কোম্পানিগুলোকে বিবাদী করা হয়। এরপর ওই রিটের শুনানি নিয়ে রুল জারি করেছিল হাইকোর্ট। দীর্ঘদিন পর সেই রুলের শুনানি শেষে রায় ঘোষণা করা হলো।

বিবি/টিএমএইচ/১১-১১-২০২০

ক্যাটেগরী: প্রযুক্তি

ট্যাগ: প্রযুক্তি

প্রযুক্তি ডেস্ক, বিবি বুধ, নভেম্বর ১১, ২০২০ ১:৩২ পূর্বাহ্ন

Comments (Total 0)