পিইসি পরীক্ষায় বহিষ্কারের বিধান বাতিল

পিইসি পরীক্ষায় বহিষ্কারের বিধান বাতিল

এখন থেকে কোমলমতি শিশুদের পরীক্ষার হল থেকে বহিষ্কার করা হবে না। প্রাথমিক (পিইসি) ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষার নির্দেশনার শিশুশিক্ষার্থীদের বহিষ্কারসংক্রান্ত বিধানটি বাতিল করা হয়েছে।

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ বুধবার এ তথ্য জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। আদালতের নির্দেশ অনুসারে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থীদের পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে বলে আদালতকে জানান প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আইনজীবী। শুনানি নিয়ে আদালত এ–সংক্রান্ত রুল নিষ্পত্তি করে দিয়েছেন।

গত ১৮ ডিসেম্বর দেওয়া নির্দেশ অনুসারে আজ সকালে আদালতে হাজির হন প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সোহেল আহমেদ। আদালতে অধিদপ্তরের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী শেখ শফিক মাহমুদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার। গণমাধ্যমের প্রতিবেদন নজরে আনা আইনজীবী এ এম জামিউল হকও শুনানিতে ছিলেন।

নির্দেশনা বাস্তবায়নের প্রতিবেদন দাখিল করে শুনানিতে আইনজীবী শেখ শফিক মাহমুদ বলেন, বহিষ্কার করা শিক্ষার্থীদের পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে ও ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আদালত বলেন, নির্দেশনা সময়মতো বাস্তবায়ন করলে মহাপরিচালককে আদালতে আসতে হতো না।

নীতিমালার (বহিষ্কারসংক্রান্ত) সংশ্লিষ্ট বিধানটি বাতিল করা হয়েছে? জবাবে শফিক মাহমুদ বলেন, পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে। আদালত বলেন, বিধানটির ব্যাপারে কী হলো? একপর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার বলেন, ইতিমধ্যে নীতিমালার বিধান বাতিল করেছে।

আদালত বলেন, রুলের টার্ম ছিল অধিদপ্তরের জারি করা নির্দেশনার ১১ নম্বর দফা (কেন্দ্রে শৃঙ্খলা লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা) কেন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করা হবে না। জেএসসির ব্যপারেও কি একই নিয়ম আছে কি না? তখন শফিক মাহমুদ বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড এটি দেখে।

আইনজীবী এ এম জামিউল হক বলেন, অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আসতে বলা হয়েছিল। অথচ যিনি এসেছেন, তিনি অতিরিক্ত মহাপরিচালক। তখন শফিক মাহমুদ বলেন, মহাপরিচালক গত ৩১ ডিসেম্বর অবসরে গেছেন। এখন যিনি দায়িত্বে আছেন, তিনিই এসেছেন।

তখন এই আইনজীবীর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘মক্কেলদের বলবেন, আদালতের আদেশ বাস্তবায়ন না করলে, আমাদের ডাকতে হয়। মাত্র সাত দিনের মধ্যে যদি পরীক্ষা না নিতেন, তাহলে সমস্যা দেখা দিত। রুল নিষ্পত্তি করে দেওয়া হলো। শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’

‘পিইসি পরীক্ষায় শিশু বহিষ্কার কেন’ শিরোনামে গত ১৯ নভেম্বর একটি দৈনিকে প্রতিবেদন ছাপা হয়। এটি আদালতের নজরে এনে প্রয়োজনীয় নির্দেশনার আরজি জানান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ এম জামিউল হক। এর পরিপ্রেক্ষিতে ২১ নভেম্বর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত রুল দেন।

রুলে সমাপনী পরীক্ষায় শিশু পরীক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা কেন অবৈধ হবে না এবং বহিষ্কার হওয়া শিশু পরীক্ষার্থীদের পুনরায় পরীক্ষা নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

পরীক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের জারি করা নির্দেশনার ১১ নম্বর দফা (কেন্দ্রে শৃঙ্খলা লঙ্ঘনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা) কেন অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা–ও জানতে চাওয়া হয় রুলে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষা একাডেমির মহাপরিচালক ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানকে দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

এই মামলায় গত ১৮ ডিসেম্বর ধার্য তারিখ ছিল। সেদিন রুলের জবাব না দেওয়ায় আদালত অসন্তোষ প্রকাশ করেন। সারা দেশে পিইসি ও ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় বহিষ্কার হওয়া শিশুশিক্ষার্থীদের ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে পরীক্ষা নিতে এবং ৩১ ডিসেম্বরের মধ্য ফল প্রকাশ করতে বলা হয়।

এ ছাড়া বহিষ্কারসংক্রান্ত তথ্যাদি না জানানোয় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেন। এই অনুসারে আজ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) সোহেল আহমেদ আদালতে হাজির হন।

হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ২২ ডিসেম্বর নতুন পরীক্ষাসূচি প্রকাশ করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, সে অনুসারে পুনরায় পরীক্ষা নেওয়া হয়। অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, ২০১৯ সালে পিইসিতে ৮২ শিক্ষার্থী এবং ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ১৫৮ শিক্ষার্থী বহিষ্কৃত হয়।

এ হিসেবে মোট বৃহিষ্কৃত হয় ২৪০ শিশুশিক্ষার্থী। এর মধ্যে পরবর্তী সময়ে ২০ জন পিইসি এবং ইবতেদায়ী শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় ৯০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। যার মধ্যে পিইসিতে ৯ ও ইবতেদায়ী সমাপনীতে ৭৫ জন উত্তীর্ণ হয়।

ক্যাটেগরী: শিক্ষা

ট্যাগ: শিক্ষা

শিক্ষা ডেস্ক, বিবি বুধ, জানুয়ারী ১৫, ২০২০ ১০:৩৭ পূর্বাহ্ন

Comments (Total 0)