মায়ের দুধের গুণাগুণ

মায়ের দুধের গুণাগুণ

সন্তানের জন্যে মায়ের দুধের বিকল্প নেই। ফর্মুলা ফিডিং করে আর যাই হোক, শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব নয়। আমরা সবাই জানি মায়ের দুধের উপকারিতা।কিন্তু আসলে কত উপকারী তা কি জানি? সন্তান জন্মের আগে থেকেইমায়ের স্তনে দুধ জমতে থাকে এবং শিশু জন্ম দানের পর কলোস্ট্রাম বা শালদুধনিঃসৃত হয় যা একটি শিশুর জন্যে প্রথম টিকা স্বরূপ।

মায়ের বুকে দুধ আসে কিভাবে?

শিশু পেটে আসার পর থেকেই মায়ের বুকে দুধ তৈরি হওয়া শুরু হয়৷ এর জন্য সাহায্য করে প্রোজেস্টেরন এবং প্রোলাকটিন নামের দুটি হরমোন৷ এই দুধ শিশুকে জন্মের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই পান করানো যায়৷ তবে শিশু কতটা দুধ পাবে তা নির্ভর করে প্রথম স্তন্যপানের ওপর৷ অর্থাৎ শরীরের প্রোলাকটিন হরমনই মায়ের নার্ভ সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেভাবেই প্রয়োজনীয় দুগ্ধ উৎপাদন করে৷

শিশুদের জন্য সবচেয়ে ভালো

মায়ের দুধ শিশুদের শরীরে ম্যাজিকের মতো কাজ করে৷ শিশুর জন্মের প্রথমসপ্তাহে মায়ের দুধ পান করলে তা বাচ্চাকে অন্ত্র সংক্রমণ থেকে রক্ষা করে এবংহজম করতে ও দুধ পান করার সময় পেটে বাতাস জমা থেকে রেহাই পেতেও সহায়তা করে৷মায়ের দুধ শিশুর প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং অ্যালার্জির বিরুদ্ধে কাজকরে৷ তাছাড়া মায়ের দুধ পান করার কারণে শিশুর মুখের তালু এবং মাড়ি শক্তহয়৷

মায়ের দুধে কী আছে?

মায়ের দুধে কী আছে তার হিসেব অনেক লম্বা৷ এতে রয়েছে মিনারেল, ভিটামিন, ফ্যাট, পানি ইত্যাদি৷ মায়ের দুধে বিশেষ এক রকম ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যাশিশুর চোখের জ্যোতি বাড়াতেও সাহায্য করে থাকে৷

শালদুধ

সদ্য প্রসূতির স্তন থেকে বের হওয়া প্রথম দুধ৷ হলদেটে রং এর এই দুধপরিমাণে কম হলেও এতে থাকে শ্বেতকণিকা এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা৷ শালদুধশিশুর জন্য অত্যন্ত উপকারি, যা শিশুর জীবনের প্রথম টিকা হিসাবেও কাজ করে৷শালদুধে থাকে আমিষ ও প্রচুর ভিটামিন এ৷ শালদুধ শিশুর পেট পরিষ্কার করে এবংশিশুর জন্ডিস হবার সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়৷

মায়ের দুধ কী যথেষ্ট?

নবজাতকের মা এক লিটারের মতো দুধ উৎপাদন করে থাকেন৷ শিশুরা সাধারণতপ্রতিবার ২০০ থেকে ২২৫ মিলিগ্রাম দুধ পান করে৷ তবে একজন শিশুর যতটা দুধপ্রয়োজন শিশু চাইলে ঠিক ততটুকুই পায়৷

কত বয়স পর্যন্ত স্তন্যপান করা উচিত

মায়ের দুধ শিশুদের আদর্শ পুষ্টিকর খাবার৷ তবে এ দুধ কতদিন শিশু পান করবে – সে বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে৷ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও জার্মানির জাতীয় মাতৃদুগ্ধ পান কমিশনের পরামর্শ: কমপক্ষে ছয়মাস মায়ের দুধপান করানো উচিত৷ তবে চার মাসের পর থেকে নবজাতকদের মায়ের দুধের পাশাপাশি অন্য খাবারও দেয়া যেতে পারে৷ মায়ের দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে একেক দেশে একেক রীতি প্রচলিত৷ যেমন মধ্য আফ্রিকার ‘বফি’ তে সাধারণত সাড়ে চার বছর পর্যন্ত মায়ের দুধ পান করানো হয় বাচ্চাদের৷ অবাক করার মতো হলেও অনেক মা ১৬,০০০ লিটার দুধ উৎপাদন করে থাকেন৷ তবে সারা বিশ্বে গড়ে মায়েরা ৩০ মাস পর্যন্ত মাতৃদুগ্ধ পান করিয়ে থাকেন৷

প্রকাশ্যে দুধ পান করানো

মা তাঁর শিশুকে প্রকাশ্যে দুধ পান করাচ্ছেন – এটা কিছু দেশের মানুষের কাছে তেমন পছন্দ নয়৷ তাই সেসব দেশে মা শিশুকে দুধ খাওয়াচ্ছে এমন ছবি কেউ ফেসবুকে দিলে সেগুলো ফেসবুক থেকে মুছে ফেলা হয়৷

শুধু শিশু নয়, মায়েরও উপকার হয়

যে মা তাঁর শিশুকে বুকের দুধ পান করান সেই মায়ের জরায়ু, স্তন ও ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের ঝুঁকি কমে যায়৷ তাছাড়া দুধ খাওয়ানোর মধ্য দিয়ে সন্তান ও মায়ের মধ্যে তৈরি হয় এক নিবিড় সম্পর্ক৷

# টিএমএইচ/২৫ ০৮ ২০১৯/বিবি


খাবার ডেস্ক, বিবি
Published at: শনি, আগষ্ট ২৪, ২০১৯ ৯:০৮ অপরাহ্ন
Share with others:

Recent Posts

Recently published articles!