আরও বিনিয়োগমুখী হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং

আরও বিনিয়োগমুখী হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকিং

শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলো সুদভিত্তিক ব্যাংকের মতো ঋণ না দিয়ে বিনিয়োগ আকারে অর্থায়ন করে থাকে। আর একারণে বাংলাদেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমর্থন ও গ্রাহকের উচ্চ চাহিদার ফলে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। বিশ্বের ২১টি দেশের শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০১৮ সাল শেষে বেড়ে এক লাখ ৭৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে।

গত সেপ্টেম্বরে এ খাতের ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগে বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশ, যেখানে প্রথাগত ব্যাংকসহ গোটা ব্যাংক খাতের বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১০ দশমিক ৬৬ শতাংশ।

মূলত গত এক দেড় বছর ধরেই প্রথাগত ব্যাংকিংয়ে ঋণ প্রবৃদ্ধিতে নিম্নগতি দেখা যাচ্ছে। গত জুনে গোটা ব্যাংক খাতে বেসরকারি ঋণের প্রবৃদ্ধি ছিল ১১ দশমিক ৩২ শতাংশ। গত মার্চে এই প্রবৃদ্ধি ছিল ১২ দশমিক ৪২ শতাংশ, ডিসেম্বরে ছিল ১৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ এবং গত বছরের সেপ্টেম্বরে ছিল ১৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ।

অন্যদিকে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ছিল ১৪ দশমিক ০২ শতাংশ। ডিসেম্বরে এই হার কিছুটা বেড়ে ১৪ দশমিক ৮২ শতাংশ হয়। গত মার্চে এই হার কিছুটা কমে ১৩ দশমিক ৪৫ শতাংশে নেমে আসে। গত জুনে বিনিয়োগে প্রবৃদ্ধি আরও কিছুটা কমে ১৩ দশমিক শূন্য আট শতাংশে নেমে আসে। তবে চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এ খাতের বিনিয়োগের হার কিছুটা বেড়ে ১৩ দশমিক ৬১ শতাংশে উঠে আসে।

শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর শাখার সংখ্যা এক হাজার ২২১টি, যেখানে দেশের গোটা ব্যাংক খাতে শাখার সংখ্যা ১০ হাজার ৪০৬টি। এছাড়া ৯টি প্রথাগত ব্যাংকের ১৯টি শাখা এবং আটটি প্রথাগত ব্যাংকের ৬১টি ইসলামিক ব্যাংকিং উইন্ডো দেশে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

দেশের পুরো ব্যাংক খাতের আমানত ও বিনিয়োগ উভয় দিক দিয়েই এক চতুর্থাংশ শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর দখলে। গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতে মোট আমানতের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ৯৩ হাজার ২৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর সংগৃহীত আমানতের পরিমাণ ছিল দুই লাখ ৬২ হাজার ১১০ কোটি টাকা, যা মোট আমানতের প্রায় ২৪ শতাংশ।

অন্যদিকে গত সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ব্যাংক খাতের বিনিয়োগকৃত অর্থ বা ঋণের স্থিতি ছিল ১০ লাখ ১৭ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ ছিল দুই লাখ ৫০ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা, যা গোটা ব্যাংক খাতের বিনিয়োগের ২৪ শতাংশেরও বেশি।

রেমিট্যান্স আনার ক্ষেত্রেও এগিয়েছে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলো। গত জুনে রেমিট্যান্সের ২৫ দশমিক ২৭ শতাংশ এসেছিল এ খাতের ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে। সেপ্টেম্বরে এই হার বেড়ে হয়েছে ৩১ দশমিক ১২ শতাংশ।

শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোকে নিয়ে করা বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে দেশের ব্যাংক খাতের বিতরণ করা কৃষিঋণের স্থিতি ছিল ৪২ হাজার ২২৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা কৃষিঋণের পরিমাণ ছিল মাত্র ৮৭৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা, যা ব্যাংক খাতের মোট বিতরণ করা কৃষিঋণের মাত্র দুই দশমিক শূন্য সাত শতাংশ। গত জুনে এই হার ছিল তিন দশমিক ৩১ শতাংশ এবং গত মার্চে এই হার ছিল ৯ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ।

বর্তমানে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে মোট জনশক্তি রয়েছে ৩৬ হাজার ৩৩৭ জন, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় তিন হাজার ২৭৯ জন বেশি।

বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, বাংলাদেশের সরকার ও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সমর্থন ও গ্রাহকের উচ্চ চাহিদার ফলে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং দ্রুত প্রসারিত হচ্ছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, বিশ্বের ২১টি দেশের শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকের মোট সম্পদের পরিমাণ ২০১৮ সাল শেষে বেড়ে এক লাখ ৭৫ হাজার ৪০০ কোটি ডলারে দাঁড়িয়েছে। ২০১৭ সালের ডিসেম্বর শেষে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ৬৮ হাজার ৪০০ কোটি ডলার।

তবে গত কয়েক মাসে দেশের ব্যাংক খাত কিছুটা তারল্য সংকটের মধ্য দিয়ে যায়, যে কারণে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে উদ্বৃত্ত তারল্যেও কিছুটা টান পড়ে। তবে গত সেপ্টেম্বরে এ খাতের উদ্বৃত্ত্ব তারল্য আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৭ দমমিক ৮৩ শতাংশ বেড়ে ছয় হাজার ১৩০ কোটি টাকা হয়।

এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া বলেন, শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থা একটি কল্যাণমুখী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। এ খাতের ব্যাংকগুলো অনেক বেশি মানবিক, যে কারণেই এ খাতের ব্যাংকগুলোর আমানত ও বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি প্রথাগত ব্যাংকগুলোর তুলনায় অনেক বেশি স্থিতিশীল।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে আটটি ব্যাংক পূর্ণাঙ্গরূপে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এগুলো হলো ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, এক্সপোর্ট ইমপোর্ট ব্যাংক (এক্সিম) লিমিটেড, আল আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ইউনিয়ন ব্যাংক ও আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড।


ব্যাংক ডেস্ক বিবি
Published at: শনি, নভেম্বর ৩০, ২০১৯ ৮:৩২ অপরাহ্ন
Share with others:

Recent Posts

Recently published articles!