পথ পাড়ি দিয়ে বাঘের রেকর্ড

পথ পাড়ি দিয়ে বাঘের রেকর্ড

পাঁচ মাসে ১৩০০ কিলোমিটার বা ৮০৭ মাইল পথ পাড়ি দিয়ে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে ভারতে একটি বাঘ । বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন সম্ভবত শিকার, নিজের জন্য একটি এলাকা কিংবা একজন সঙ্গীর খোঁজে দীর্ঘ পথ হেঁটে পাড়ি দিয়েছেএই বাঘটি।

বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানায়, আড়াই বছর বয়সী এই নারী বাঘটির নাম সি ওয়ান। মহারাষ্ট্রের টিপেশ্বর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে জন্ম নেয়া বাঘটি গত জুন মাসে অভয়ারণ্য থেকে বেরিয়ে পড়ে। প্রাণীটির গলায় বেঁধে দেওয়া রেডিও কলার থেকে পাওয়া তথ্যে জানা যায়, বাঘটি বহু মাঠ ঘাট, জমি জমা, খাল বিল পার হয়ে ও মহাসড়ক ধরে প্রতিবেশী একটি রাজ্যে গিয়ে পৌঁছায়।

পথিমধ্যে মাত্র একবার তার মানুষের সাথে সংঘাত হয়েছে। এতে একজন আহত হয়েছেন। ওই লোকটি একটি দলের সঙ্গে জঙ্গলে ঘুরতে ঘুরতে বাঘটি যে ঝোপের ভেতর বিশ্রাম নিচ্ছিল, সেখানে ঢুকে পড়ে।

ধারণা করা হয়, মহারাষ্ট্রের টিপেশ্বর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে ১০টির মতো বাঘ আছে। সেখানে গত ফেব্রুয়ারি মাসে সি ওয়ান নামের বাঘটির গলায়ও একটি রেডিও কলার বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। তার পর সে এই বনের ভেতরেই ঘুরে বেড়াতো। কিন্তু বর্ষাকাল আসার পর "উপযোগী" একটি জায়গার খোঁজে জুন মাসে সেখান থেকে সে বের হয়ে যায়। এরপর মহারাষ্ট্রেরই সাতটি জেলার ভেতর দিয়ে হেঁটে হেঁটে সে পার্শ্ববর্তী তেলেঙ্গানা রাজ্যে গিয়ে পৌঁছায়।

বন্যপ্রাণী বিষয়ক কর্মকর্তারা বলছেন, বাঘটি কোন সোজা পথে চলাচল করেনি। সামনে গেছে, আবার পেছনের দিকে হেঁটে চলে গেছে অন্যদিকে। জিপিএস স্যাটেলাইটের সাহায্যে এর গতিবিধির ওপর নজর রাখা হয়েছিল। প্রত্যেক ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাঘটির অবস্থান সম্পর্কে তথ্য নেওয়া হয়েছে। তাতে দেখা গেছে বাঘটি গত নয়'মাসে ৫,০০০ জায়গায় গিয়েছিল।

ভারতের বন্যপ্রাণী ইনস্টিটিউটের একজন গবেষক ড. বিলাল হাবিব বলেন, বাঘটি তার নিজের জন্য একটি বসতি খুঁজছিল, অথবা খুঁজছিল খাদ্য কিংবা একজন সঙ্গী। ভারতে বাঘের জন্য যেসব এলাকা আছে সেগুলোতে নতুন বাঘের কোন জায়গা নেই। ফলে বসবাসের জন্য তাদেরকে নতুন এলাকা খুঁজে বের করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, দিনের বেলায় বাঘটি বেশির ভাগ সময় লুকিয়েছিল, ভ্রমণ করেছে রাতের বেলায়। বন্য শূকর আর গবাদিপশু শিকার করেই তাকে খাদ্য জোগাড় করতে হয়েছে। লোকজন জানতেও পারেনি যে তাদের বাড়ির পেছনেই হয়তো একটি বাঘ ঘুরে বেড়াচ্ছে।

বন্যপ্রাণী কর্মকর্তারা বলছেন, অবস্থা এমন হয়েছে যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এখন বাঘটিকে ধরে হয়তো কাছেরই একটি জঙ্গলে ছেড়ে দিতে হবে। তাদের আশঙ্কা হচ্ছে, খুব শিগগিরই হয়তো এই বাঘটি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতে পারে, কারণ ইতিমধ্যেই রেডিও কলারের ব্যাটারি ৮০ শতাংশ ফুরিয়ে গেছে।

ভারতে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে যে সম্প্রতি বাঘের সংখ্যা বেড়েছে। তবে তাদের বসতি আগের তুলনায় সংকুচিত হয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রত্যেক বাঘের জন্য এমন একটি এলাকা প্রয়োজন যেখানে তার শিকার করার মতো ৫০০টি প্রাণী থাকবে, যাতে তার কখনো খাদ্যের অভাব না হয়।

#এসএস/বিবি/০২ ১২ ২০১৯


ফিচার ডেস্ক, বিবি
Published at: রবি, ডিসেম্বর ১, ২০১৯ ১০:২৬ অপরাহ্ন
Share with others:
ad

Recent Posts

Recently published articles!