পদ্মার মহাসংযোগে বিশ্বরেকর্ড!

পদ্মার মহাসংযোগে বিশ্বরেকর্ড!

স্বপ্নের পদ্মাসেতু এখন বাস্তব। ১০ ডিসেম্বর বসানো হয়েছে সবশেষ ৪১তম স্প্যান। এতে দুই তীরের মহাসংযোগ সম্পন্ন। আর বছর দেড়েকের মধ্যে চলবে যানবাহন। খরস্রোতা এই নদী শাসন করে সেতু নির্মাণে অন্তত তিনটি বিশ্বরেকর্ড হয়েছে- এমন তথ্য দিচ্ছেন সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা।

এ যেন দুই তীরের মহামিলন!

দৃশ্যমান হলে পুরো পদ্মাসেতু। সংযুক্ত হলো পদ্মার এপার-ওপার। মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা। সবগুলো স্প্যান বসাতে লাগলো ৩ বছরের বেশি সময়। ২০২২ সালের ২৬ মার্চ সেতু উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। পদ্মানদীতে এখন দৃশ্যমান পদ্মাসেতুর ৬.১৫ কিলোমিটার। ১০ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে ৪১তম, অর্থাৎ সবশেষ স্প্যানটি। ৪০তম স্প্যান বসানোর ৬ দিনের মাথায় বসানো হলো এ স্প্যান। ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি স্প্যান বসানোয় ৬ হাজার ১৫০ মিটার সেতুর অবকাঠামো দৃশ্যমান হলো।

ঘন কুয়াশা, ঝড়-বৃষ্টি কিংবা নাব্যতা সংকট, এর কোনো একটি হলেই ফেরি ও লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রায়ই ফেরি পারের অপেক্ষায় ঘাটে আটকে থাকতে হয় কয়েক ঘণ্টা থেকে শুরু করে প্রায় আধাদিন বা একদিন। ফেরির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ঘাটে রোগীর মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটেছে। পদ্মা সেতুর কারণে এমন চরম ভোগান্তি থেকে অবশেষে মুক্তি পেতে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার জনগণ।

যেভাবে তিন বিশ্বরেকর্ড...

পদ্মাসেতু নির্মাণে তিনটি বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে। বিশ্বের দীর্ঘতম ১২২ মিটার পাইল স্থাপন, ১৫ টন ওজনের ৯৮ হাজার ৭২৫ কিলোনিউটন ক্ষমতাসম্পন্ন ফিকশন প্যান্ডিলাম বেয়ারিং ব্যবহার ও নদী শাসনের সর্বোচ্চ এক দশমিক এক বিলিয়ন (প্রায় ৮ হাজার ৮০০ কোটি) টাকার চুক্তি- এসব নিয়ে এই তিন রেকর্ড।

পদ্মাসেতুর যাত্রাপথ বহু চ্যালেঞ্জের। অর্থায়ন থেকে বিশ্বব্যাংকের সরে যাওয়া, বন্যা, অত্যাধিক পলি, ঘন কুয়াশা, নদীর তলদেশে মাটির গঠন ভিন্নতা, নানামুখী জটিলতা। সবদিক থেকেই যেন পদ্মাসেতু করতে প্রকৃতির বাঁধা। এসব প্রতিকূলতা জয় করতে এমন কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হয়েছে যা বিশ্বে বিরল।

পদ্মাসেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম গণমাধ্যমে জানিয়েছেন, এমন নদীর সাথে তুলনা চলে দক্ষিণ আমেরিকার আমাজান নদীর সাথে। ঝঞ্ছাবিক্ষুব্ধ নদীর এই পরিবেশের সাথে মানাতে না পেরে অনেক দেশিবিদেশি প্রকৌশলী চলেও গেছেন।

তারপরও থামেনি মানুষের প্রচেষ্টা। এরপর আবার বাঁধা পড়ে পদ্মাসেতুর কাজ। ২০১৭ সালের শেষের দিকে দেখা দেয় পাইলিং জটিলতা। সেতুর ২২টি পিলারের জায়গাতে নদীর তলদেশে শক্ত মাটির জায়গায় কাদামাটি পাওয়া যায়। সমাধান পেতে লেগে যায় প্রায় এক বছর।

সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সেতু বিভাগের সচিব বেলায়েত হোসেন জানান, প্রযুক্তিগত দিক বিবেচনায় পদ্মা সেতুতে তিনটি বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে। এই প্রকল্পে শীর্ষ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তাদের দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ২০১২ সালে অর্থায়ন থেকে সরে যায় বিশ্ব ব্যাংক। এরপর চ্যালেঞ্জ নেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। নিজেদের অর্থে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করা এখন বাংলাদেশের সক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল সেতুটি কংক্রিট ও স্ট্রিল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসাবে ৪১টি স্প্যান। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭-৩৮ নম্বর পিয়ারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে সেতু দৃশ্যমান হয়।

মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।

তমহ/বিবি/১১-১২-২০২০

ক্যাটেগরী: জাতীয়

ট্যাগ: জাতীয়

জাতীয় ডেস্ক, বিবি শুক্র, ডিসেম্বর ১১, ২০২০ ৭:২৩ পূর্বাহ্ন

Comments (Total 0)