আলুর দাম লাগামছাড়া

আলুর দাম লাগামছাড়া

পেঁয়াজসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে আলুর দাম রেকর্ড ভেঙেছে। অভিযোগ উঠেছে, পেঁয়াজের মতো কারসাজি করে বাড়ানো হয়েছে আলুর দাম। এখন প্রতি কেজি আলু খুচরা কিনতে খরচ হচ্ছে ৫০ টাকার উপরে। যা নিয়ে ক্রেতা সাধারণের মধ্যে বিরাজ করছে ক্ষোভ। যে কারণে প্রথমবারের মতো আলুর দাম বেধে দিয়েছে সরকার। ভোক্তা পর্যায়ে সর্বোচ্চ ৩০ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।

ক্রেতাদের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরে রান্নার অন্যতম অনুসঙ্গ পেঁয়াজের পর এবার কারণ ছাড়াই দাম বাড়িয়ে পকেট কাটছে আলু। কারণ সরকারি দপ্তরও বলছে দেশে উৎপাদন ও চাহিদা অনুযায়ী আলুর এত দাম অযৌক্তিক। তবে বাজারের বাস্তব অবস্থা আর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে দাবি করা আলুর দামে বিশাল ফারাক। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি আলু খুচরা পর্যায়ে ৩৮ থেকে ৪২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

লালবাগ থেকে সোমবার রাতে ৫০ টাকায় এক কেজি আলু কিনেছেন বলে জানিয়েছেন সদর উদ্দিন। ঢাকা টাইমসকে তিনি বলেন, ‘সবজির বাজারে তো রীতিমত আগুন। ভাবছিলাম আলু কিনে একটু স্বস্তি পাবো। কিন্তু তাও সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের নজরদারি বাড়ানোর বিকল্প নেই।’

তবে সরকার দাম বেধে দিলেও পেঁয়াজের মতো আলু নির্ধারিত দামে বিক্রি হবে কি না তা নিয়ে সংশয় আছে এই ক্রেতার। কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে ৬৪ জেলার জেলা প্রশাসকের কাছে আলুর দাম বেধে দিয়ে চিঠি দেয়া পাঠানো হয়। এতে বলা হয়েছে, দেশে মোট আলুর চাহিদা প্রায় ৭৭ লাখ ৯ হাজার টন। কিন্তু গত আলুর মৌসুমে দেশে প্রায় এক কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে। যদিও আগের বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন কম হয়েছে আলুর। তারপরও এবছর প্রায় ৩১ লাখ ৯১ হাজার টন আলু উদ্বৃত্ত থাকার কথা। কিছু পরিমাণ আলু রপ্তানি হলেও ঘাটতির আশঙ্কা একেবারেই ক্ষীণ।

এদিকে দিনে দিনে আলুর দাম বেড়ে হাফসেঞ্চুরি পার করলেও কেন কি কারণে দাম বেড়েছে তার দায় নিতে যাচ্ছে না কেউ। উল্টো অন্যান্য নিত্যপণ্যের মতো আলুর দাম নিয়েও হিমাগরের মালিক ও ব্যবসায়ীরা বেশ কিছু যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন। তাদের যুক্তি করোনা ও বন্যার কারণে এ বছর ত্রাণ হিসেবে বিপুল আলু বিতরণ করা হয়েছে, বাজারে অন্যান্য সবজির দাম বেশি হওয়ায় চাহিদা বেড়ে গেছে এবং আলুর রপ্তানি বেড়েছে।

বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্যানুযায়ী, গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর সময়ে ১ কোটি ৪৮ লাখ ডলারের আলু রপ্তানি হয়েছে। গত বছর একই সময়ে রপ্তানি ছিল ৯ লাখ ডলারের কিছু বেশি।

এদিকে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) তথ্যমতে, দুই দশকের আলুর দাম বেড়েছে ৪৫০ শতাংশ। সংগঠনটির হিসেব বলছে, ২০০০ সালে ঢাকায় ১ কেজি আলুর গড় দাম ছিল ১০ টাকা। ২০২০ সালে এসে এই সপ্তাহে কেজিপ্রতি আলুর দাম দাঁড়িয়েছে ৫৫ টাকা।

জেলা প্রশাসকদের কাছে পাঠানো চিঠিতে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর বলছে বাজারে যে মূল্যে আলু বিক্রি হচ্ছে তা অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য। এতে বেধে দেয়া দামে কোল্ডস্টোরেজ, পাইকারি বিক্রেতা এবং ভোক্তা পর্যায়ে খুচরা বিক্রেতাসহ তিনপক্ষই যাতে আলু বিক্রি করে তা কঠোর মনিটরিং ও নজরদারির ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেছেন, ‘কৃষকের ১০ থেকে ১২টাকা কেজিতে বিক্রি করা কোনোভাবেই ২০ টাকার বেশি হয় না। তারপরেও হিমাগার থেকে ২৩ টাকা কেজি ধরে আলু বিক্রি করতে বলা হয়েছে। পাইকারি ও খুচরা পর্যায়েও যথেষ্ট যৌক্তিক মুনাফা ধরেই দাম বেঁধে দেওয়া হয়েছে।’

#এসকেএস/বিবি/১৫ ১০ ২০২০


অর্থনীতি ডেস্ক, বিবি
Published at: বুধ, অক্টোবর ১৪, ২০২০ ১০:১৫ পূর্বাহ্ন
Share with others:
ad

Recent Posts

Recently published articles!