করোনাকালে বাজেটের চাপ ব্যাংকে...

করোনাকালে বাজেটের চাপ ব্যাংকে...

২০২০ ২১ অর্থবছরে বাজেটের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন থেকে বড় অঙ্কের ঘাটতি থাকবে রাজস্ব আদায়ে। ব্যয় ঠিক রাখতে এ ঘাটতি মেটাতে হবে ব্যাংকঋণ নিয়ে। আবার করোনা পরিস্থিতিতে এক লাখ কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনার প্যাকেজ বাস্তবায়নের চাপ রয়েছে ব্যাংকের ওপর। এ দিকে আমানতপ্রবাহ কমে গেছে। এতে ব্যাংকের অর্থসঙ্কট রয়েছে।

পাশাপাশি আগামী অর্থবছরে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রেও চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এতে সব চাপ বর্তাবে দেশের ব্যাংক খাতের ওপর। এমনি পরিস্থিতিতে নতুন বছরে সরকারের অর্থের জোগান দেয়া কঠিন হবে ব্যাংক খাতের জন্য। সেই সাথে কাঙ্ক্ষিত ঋণ পাওয়া কষ্টকর হবে বেসরকারি খাতের জন্য।

চলতি অর্থবছরে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল প্রায় ৪৭ হাজার কোটি টাকা। কিন্তু গত এপ্রিল পর্যন্ত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ঘাটতি হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা। এতে সরকারের রাজস্ব ব্যয় কমেনি, বরং করোনার কারণে বেড়ে গেছে। এর ফলে ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ২৬ হাজার কোটি টাকা বাড়িয়ে প্রায় ৭২ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা পুনর্নির্ধারণ করা হয়।

কিন্তু সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা থেকেও ১৫ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত ঋণ নিতে হবে চলতি অর্থবছরে। কারণ গত মে মাস পর্যন্ত সরকারের ব্যাংক খাত থেকে নিট ঋণ নিয়েছিল ৭৪ হাজার কোটি টাকা। আর চলতি মাসে অর্থাৎ জুনে নিট ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ২০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে চলতি অর্থবছর শেষে সরকারের নিট ব্যাংকঋণ দাঁড়াবে ৮৮ হাজার ২০০ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত ৮ মে পর্যন্ত সরকার শুধু ট্রেজারি বিল ও বন্ডের মাধ্যমে ব্যাংক খাত থেকে ঋণ নিয়েছে ৭৫ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। মঙ্গলবার আরো ৩ হাজার কোটি টাকার ঋণ নেয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

এ দিকে চলতি অর্থবছরে সংশোধিত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৫০০ কোটি টাকা। রাজস্ব আদায় হতে পারে ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের তুলনায় প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা কম। যদিও গত জুলাই থেকে এপ্রিল পর্যন্ত ১০ মাসের হিসাবে রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি হয়েছে ৬০ হাজার কোটি টাকা।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) মনে করে চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ে ১ লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা ঘাটতি থাকবে। এ ঘাটতিকে বিবেচনায় না নিয়ে আগামী অর্থবছরের বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ বেশি। যা বাস্তবসম্মত নয় বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করেন। এ উচ্চাভিলাষী রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা আদায়ের বিষয়ে অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন, করোনার কারণে এমনিতেই ব্যবসা বাণিজ্যের বেহাল অবস্থা। আমদানি রফতানির অবস্থা খুবই খারাপ। ফলে এ উচ্চাভিলাষী রাজস্ব আদায় বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব হবে তা সময়ই বলে দেবে।

এ দিকে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নে কাঙ্ক্ষিত হারে বিদেশী ঋণ পাওয়াও কঠিন হবে। কারণ, করোনার কারণে বিশ্বব্যাপীই অর্থনীতি চাপে থাকবে। এতে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা এডিবি, বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ ছাড়া অন্য উৎস থেকে বিদেশী ঋণ বা অনুদান পাওয়া কষ্টকর হবে। ফলে আগামী অর্থবছরের যে বিশাল অঙ্কের ঘাটতি বাজেট দেয়া হচ্ছে তা অর্থায়ন করা দুষ্কর হয়ে পড়বে। শেষ পর্যন্ত ব্যাংক খাতের ওপরই অর্থায়নের চাপ বাড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোর আমানতপ্রবাহ কমে গেছে। করোনার কারণে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যে এক লাখ কোটি টাকার ওপরে প্রণোদনা দেয়া হয়েছে ওই প্রণোদনাও বাস্তবায়ন হবে ব্যাংক খাতের মাধ্যমে। এ দিকে ঘাটতি বাজেট অর্থায়নের চাপ, অপর দিকে বাজেট ঘাটতি অর্থায়নের চাপ। দুই মিলেই নতুন অর্থবছরে ব্যাংক খাতকে হিমশিম খেতে হবে। সে ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতে ঋণ বিতরণ করা বলা চলে অসম্ভব হবে ব্যাংক খাতের জন্য।

ইতোমধ্যে গত এপ্রিল পর্যন্ত বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহ তলানিতে নেমে গেছে। কোনো হিসাব কিতাব মেলাতে পারছে না দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মুদ্রানীতিতে বেসরকারি খাতের ঋণপ্রবাহের লক্ষ্যমাত্রার ধারের কাছেও যেতে পারছে না। বেসরকারি খাতে বেশি মাত্রায় বিনিয়োগ করতে না পারলে কাঙ্ক্ষিত হারে কর্মসংস্থান হবে না। এতে বেকারত্বের হার আরো বেড়ে যাবে।

#এসকেএস/বিবি/১২ ০৬ ২০২০


ব্যাংক ডেস্ক, বিবি
Published at: বৃহঃ, জুন ১১, ২০২০ ৩:০১ অপরাহ্ন
Share with others:

Recent Posts

Recently published articles!