হালখাতা হারিয়ে যাচ্ছে?

হালখাতা হারিয়ে যাচ্ছে?

বাংলা সন চালু হওয়ার পর নববর্ষ উদযাপনে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে হালখাতা দ্বিতীয় বৃহৎ অনুষ্ঠান হয়ে দাঁড়িয়েছিল। দেনাদার ও পাওনাদারের মধ্যে বিশ্বাস, আস্থা ও গভীর সম্পর্কের প্রকাশ ঘটতো হালখাতার মাধ্যমে। এটা ছিল সৌজন্য প্রকাশের এক ঐতিহ্য। বাংলা নববর্ষ সাংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হিসেবেই বারে বারে ফিরে আসে বাঙালির দুয়ারে। বর্তমান সময়ে প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাংলা সনের প্রথম দিনে দোকানের হিসাব আনুষ্ঠানিক হালনাগাদের এ প্রক্রিয়ায় নেই আগের জৌলুস। রং ফিকে হয়ে এলেও এখনও রাজধানী ঢাকাসহ অন্যান্য শহরে, গ্রামে ও গঞ্জে ছোট পরিসরে পালন করেন কিছু কিছু ব্যবসায়ী।

তথ্য অনুযায়ী, মোগল আমলে খাজনা আদায় করা হতো হিজরি বর্ষপঞ্জি অনুসারে। কিন্তু হিজরি বর্ষপঞ্জি চন্দ্র মাসের হিসাবে চলার কারণে এখানে কৃষি খাজনা আদায়ে অসুবিধা হতো। খাজনা আদায়ের শৃঙ্খলা আনা ও প্রজাদের অনুরোধে মোগল সম্রাট আকবর বিখ্যাত জ্যোতিষবিদ আমির ফতেহউল্লাহ সিরাজীকে বাংলা সালের সংস্কার আনার নির্দেশ দেন। তিনি সেই নির্দেশ অনুসারে হিন্দু সৌর ও হিজরি পঞ্জিকা বিশ্লেষণ করে নতুন বাংলা সনের নিয়ম নির্ধারণ করেন।

বাংলা সনের ইতিহাস সুস্পষ্টভাবে জানা না গেলেও অধিকাংশ ঐতিহাসিক ও পণ্ডিত মনে করেন, ১৫৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১০ ১১ মার্চ সম্রাট আকবরের বাংলা সন প্রবর্তনের পর থেকেই ‘হালখাতার প্রচলন হয় তৎকালীন ভারতবর্ষে। পুরনো বছরের হিসাব বন্ধ করে নতুন হিসাব খোলা হয় যে খাতায়, তাই ‘হালখাতা’নামে পরিচিত। পশ্চিমবঙ্গেও এ অনুষ্ঠানটি বেশ ঘটা করে পালন করা হয়।

আধুনিক গবেষকদের মধ্যে কেউ কেউ মনে করেন, আকবর সর্বভারতীয় যে ইলাহী সন প্রবর্তন করেছিলেন তার ভিত্তিতেই বাংলায় তার কোনো প্রতিনিধি বা মুসলমান সুলতান বা নবাব বাংলা সনের প্রবর্তন করেন। সে জন্য একে ‘সন’ বা ‘সাল’বলা হয়। ‘সন’কথাটি আরবি, আর ‘সাল’ হলো ফারসি। প্রথমে এ সালের নাম রাখা হয়েছিল ফসলি সন, পরে বঙ্গাব্দ বা বাংলা নববর্ষ হিসেবে পরিচিতি পায়। এরপর চৈত্র মাসের শেষ দিনে (সংক্রান্তি) জমিদারি সেরেস্তারা প্রজাদের কাছ থেকে কৃষি ও রাজস্ব কর বা খাজনা আদায় করতেন।

একই ধারাবাহিকতায় ১৬১০ সালে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গীরের নির্দেশে ঢাকায় সুবেদার ইসলাম খান চিশতি তাঁর বাসভবনের সামনে প্রজাদের শুভ কামনা করে মিষ্টি বিতরণ ও উৎসবের আয়োজন করতেন। খাজনা আদায় ও হিসাব নিকাশের পাশাপাশি চলতো মেলা, গান বাজনা ও হালখাতার অনুষ্ঠান। পরবর্তী সময় ব্রিটিশ আমলে ঢাকার মিটফোর্ডের নলগোলার ভাওয়াল রাজার কাচারিবাড়ি, ফরাশগঞ্জের রূপলাল হাউস, পাটুয়াটুলীর সামনে প্রতিবছর পয়লা বৈশাখে পুণ্যাহ অনুষ্ঠান হতো।

#তমহ/বিবি/১৪ ০৪ ২০২২


অর্থনীতি ডেস্ক, বিবি
Published at: বুধ, এপ্রিল ১৩, ২০২২ ১০:২৭ অপরাহ্ন
Share with others:
ad

Recent Posts

Recently published articles!