রাজধানীতে ধুমচে বেচাকেনা হচ্ছে গরম কাপড়

রাজধানীতে ধুমচে বেচাকেনা হচ্ছে গরম কাপড়

 

পৌষ মাসের আগমনের সঙ্গে সঙ্গে শীত জেঁকে ধরেছে রাজধানীবাসীকে। উত্তরের হিমেল হাওয়া আর তাপমাত্রা কমার কারণে হঠাৎ করেই বেড়েছে শীতের তীব্রতা। বর্তমানে রাজধানীর তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রী সেলসিয়াসে নেমে এসেছে।

গত কয়েক বছর রাজধানীতে তেমন শীত না পড়লেও এ বছর পৌষ মাসের শুরুতেই রাজধানী কাঁপাচ্ছে শীতের তীব্রতা। এদিকে প্রচণ্ড শীতে জনজীবন যখন বিপর্যস্ত তখন গরমের কাপড় বিক্রিতে ব্যস্ত ফুটপাতসহ রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ও অভিজাত শপিং মলগুলো। তবে শীতের কাপড় বিক্রিতে সবচেয়ে বেশি জমে উঠেছে ফুটপাতের দোকানগুলো।

প্রতিবছর দেখা যায়, রাজধানীর মানুষ শীত বেশি না পড়ায় হালকা পাতলা কাপড় দিয়েই শীত নিবারণ করেন। কিন্তু এবার শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি যে, তারা শীতের কাপড় কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।

গুলিস্তানে শীতের কাপড় কিনতে আসা আব্দুর রহিমের বলেন, প্রতিবছর ফুলহাতা মোটা গেঞ্জি গায়ে দিলেই শীত আর লাগে না। তাই তেমন মোটা সোয়েটার বা জ্যাকেট গায়ে দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করি না। কিন্তু এবার শীতের তীব্রতা এতটাই বেশি যে এবার জ্যাকেট কিনতে বাধ্য হচ্ছি।

রাজধানীর মিরপুর, ফার্মগেট, গুলিস্তান, বায়তুল মুকাররম, বঙ্গবাজার ও নিউ মার্কেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, কম্বল, জ্যাকেট, সোয়েটার, শালসহ নানা ধরনের শীতের পোশাকের বেচাকেনার ধুম চলছে। প্রতিটা দোকানেই রয়েছে উপচে পড়া মানুষের ভিড়।

আজ রাজধানীর গুলিস্তানে বিভিন্ন ফুটপাত ঘুরেও দেখা যায় একই চিত্র। মানুষ যেমন বেশি তেমনি দামটাও একটু বেশি। পোশাকের বিভিন্ন রকমের দামে বিক্রি করছেন বিক্রেতারা। একদাম ২০০ থেকে শুরু করে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছেন তারা। বিভিন্ন সময় পুলিশ একটু ঝামেলা করলেও তারা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন।

গুলিস্তানের ফুটপাতে ফুলহাতা গেঞ্জি বিক্রি করছিলেন বরিশালের জামাল। তিনি প্রতিটি ফুলহাতা গেঞ্জি একদাম ২৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। কেমন বেচাকেনা চলছে জানতে চাইলে জামাল বলেন, এই কয়দিন বেচাকেনা অনেক ভালো হচ্ছে। প্রতিদিন কত টাকা বেচাকেনা হয়? জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয়। বঙ্গমার্কেট থেকে কিনে এখানে বিক্রি করি। এক দামে বিক্রি করছি তাই প্রতি পিস মালে ৯০ থেকে ১০০ টাকা লাভ হচ্ছে।

এছাড়া রাজধানীর প্রায় অনেক জায়গাতেই বিক্রি হচ্ছে শীতের পোশাক। অনেকে দেখা যাচ্ছে নিয়মিত ব্যবসায়ী। আবার অনেকে রয়েছেন মৌসুমী ব্যবসায়ী। সবাই যেন এই শীতের আগমনে ব্যবসায়ে মেতে উঠেছেন। কারণ ক্রেতার সাঁড়া পেয়ে  খুবই খুশি ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ সংলগ্ন মার্কেটে শীতের পোশাক কিনতে আসা এক ক্রেতার জানান, গত ৭-৮ বছর ঢাকায় আছি। এতো শীত এর আগে ঢাকায় দেখিনি। তীব্র শীত আর হালকা বাতাসে শরীরের মধ্যে যেন কেঁপে উঠছে। তাই বাধ্য হয়েই আসলাম শীতের পোশাক কিনতে।

নিউমার্কেটের বিভিন্ন দোকান ঘুরে দেখা গেল, শীতের কাপড় কেনা ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। দোকানগুলো যেন ক্রেতার চাপে ঢোকার অবস্থা নেই। ঈদেও যেন এমন ভিড় দেখা যায় না বলে জানান কয়েকজন ক্রেতা।

মিরপুর-১ ও ১০ নাম্বর ফুটপাতগুলোতে দেখা যায় একই চিত্র। অনেকগুলো দোকান থাকার পরেও কোন ক্রেতার সংকট নেই। চলছে জমজমাট বেচাকেনা। সেখানে শীতের পোশাক বিক্রতা জিহাদ বলেন, সকাল নয়টায় দোকান খুলি আর বন্ধ করি রাত বারোটায়। দোকানে ভালো বেচাকেনা চলছে। তবে গত কয়দিনে পুলিশ ঝামেলা করায় তেমন একটা বসতে পারছি না। ফলে ভালো সময়ে আমরা বেচাকেনা করতে একটু সমস্যা হচ্ছে।

এদিকে রাজধানীর বিপণিবিতান গুলোতেও দেখা যায় একই অবস্থা। শীতের পোশাকের দোকানগুলোতে রয়েছে উপচে পড়া ভিড়। দোকানগুলোতে নানা ডিজাইনের বিভিন্ন পোশাক সাজান। বেচাকেনা ভরপুর। এ সব দোকানে পাওয়া যাচ্ছে হাজার থেকে শুরু করে পনের-বিশ হাজার টাকা দামেরও বাহারি পোশাক।

মিরপুর-১০ নম্বর শাহ আলী মার্কেটের ব্যবসায়ী জমির জানান,  এই কয়দিন শীত বাড়ায় বেচাকেনা একটু বেড়েছে। প্রতিবারের চেয়ে এবার ক্রেতাদের মোটা কাপড়ের চাহিদা একটু বেশি। তবে মার্কেটের তুলনায় ফুটপাতে বেশি ক্রেতা বলেও জানান তিনি।

এছাড়া রাজধানীর বসুন্ধরা ও যমুনা ফিউচার পার্কেও দেখা যায়, বেচাকেনার ধুম। শীত নামায় বেচা-বিক্রি বেড়েছে ব্যবসায়ীদের। সমাজের মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্তরা সাধারণত পোশাক কিনতে ভিড় জমান এখানে।

সব মিলিয়ে রাজধানীজুড়ে তীব্র শীতে জমে উঠেছে শীতের পোশাক বেচাকেনা। যার যার সামর্থ অনুযায়ী যেন খুঁজে নিচ্ছেন তার পছন্দের পোশাকগুলো। যারা একটু কম দামে শীত নিবারণ করতে চান তারা ফুটপাত থেকে শীতের পোশাক কিনে ফেলছেন। যারা আরেকটু ভালো আর আকর্ষণীয় পোশাক চান তারা পছন্দের পোশাকটি কিনতে ঝুঁকছেন রাজধানীর বিপণিবিতানগুলোতে। আর উচ্চবিত্তরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী দেশের বড় মার্কেট থেকে শুরু করে দেশের বাইরে থেকেও কিনছেন নিজেদের আকর্ষণীয় পোশাকটি।

ক্যাটেগরী: রাজধানী

ট্যাগ: রাজধানী

রাজধানী ডেস্ক, বিবি সোম, ডিসেম্বর ২৩, ২০১৯ ১:১২ অপরাহ্ন

Comments (Total 0)