বাড়িভাড়া নিয়ে হাই কোর্টের রুল

বাড়িভাড়া নিয়ে হাই কোর্টের রুল

১৯৯১ সালের বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৫ ধারা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না এবং ‘ভাড়া নিয়ন্ত্রক’ নিয়োগসহ বাড়িভাড়ার বিদ্যমান অসঙ্গতি দূর করে ‘মানসম্মত বাড়ি ভাড়া নির্ধারণের জন্য সুপারিশ প্রণয়নে ১৯৫৬ সালের অনুসন্ধান আইনের ৩(১) ধারা অনুযায়ী অনুসন্ধান কমিশন গঠনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, সংসদ সচিবালয়ের সচিব, আইন সচিব ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্টদের চার সপ্তাহের মধ্যে এর জবাব দিতে বলা হয়েছে। হিউম্যান রাইট্স অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের (এইচআরপিবি) করা একটি রিটের সম্পূরক আবেদনের শুনানি শেষে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর হাই কোর্ট বেঞ্চ রোববার এ রুল জারি করে।

বাড়িভাড়া আইনের ১৫ ধারায় বলা হয়েছে, বাড়ির মালিক বা ভাড়াটিয়ার আবেদনের ভিত্তিতে ভাড়া নিয়ন্ত্রক কোনো বাড়ির ‘মানসম্মত’ ভাড়া নির্ধারণ করবেন। এমনভাবে তা করতে হবে যেন ওই ভাড়ার বার্ষিক পরিমাণ বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে স্থির করা ওই বাড়ির বাজার মূল্যের ১৫ শতাংশের সমান হয়।

তবে শর্ত থাকবে যে, যেসব ক্ষেত্রে ১৯৮৬ সালের প্রেমিসেস রেন্ট কন্ট্রোল অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী ‘মানসম্মত ভাড়ার’ পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে, সেইসব ভাড়ার পরিমাণ ভাড়া নিয়ন্ত্রক সংশোধন বা পরিবর্তন না করা পর্যন্ত পুরনো পরিমাণই ‘মানসম্মত ভাড়া’ হিসেবে গণ্য হবে।

বাড়ি ভাড়া নিয়ে হিউম্যান রাইট্স অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের একটি রিট আবেদনে ২০১০ সালের ১৭ মে হাই কোর্ট রুল জারি করেছিল। দীর্ঘ শুনানির পর ২০১৫ সালের ১ জুলাই পর্যবেক্ষণসহ সেই রুল যথাযথ ঘোষণা করে রায় দেয় আদালত।

কিন্তু রায় প্রকাশের আগেই ওই বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারক বজলুর রহামন মারা যাওয়ায় বাদীপক্ষ আর রায়ের অনুলিপি পায়নি। পরবর্তীতে রিট মামলাটি বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ ও বিচারপতি মো. সোহরাওয়ারদীর বেঞ্চে আসে।

আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, ১৯৯১ সালের বাড়িভাড়া আইনে ভাড়া নির্ধারণ করার যে পদ্ধতি বলা আছে, সে পদ্ধতি অনুযায়ী এখন যে বাসার ভাড়া ৩০ হাজার টাকা সে বাসার ভাড়া হবে ৯০ হাজার টাকা। প্রচলিত আইনে এমনটাই আছে।

“এই কারণে ভাড়া নির্ধারণের জন্য মালিক এবং ভাড়াটিয়ার মধ্যে যে বিধান ছিল সে ব্যপারে কেউ আদালতে যাচ্ছে না। কারণ এটা অসম্ভব এবং অকার্যকর। এই প্রেক্ষিতেই এইচআরপিবি’র পক্ষ থেকে আইনটিকে আমরা চ্যালেঞ্জ করেছি। আদালত শুনেছেন।”

মনজিল মোরসেদ বলেন, মানসম্মত বাড়ি ভাড়া নির্ধারণ করার কথা সরকারের। কিন্তু সরকার সেটি করেনি। ফলে ভাড়াটিয়া এবং বাড়িওয়ালাদের মধ্যে প্রায়ই বিরোধ হচ্ছে। অনেক বাড়িওয়ালা ইচ্ছেমত ভাড়া বাড়াচ্ছেন, অনেক ভাড়াটিয়কে বাড়ি থেকে বের করে দিচ্ছেন। এসব নিয়ে নানা জটিলতা হচ্ছে।

“কিন্তু কোনো ভাড়াটিয়া যে আদালতে গিয়ে প্রতিকার পাবেন, আইনি জটিলতা এতটাই বড় যে সেটা তারা পারছেন না। এই কারণে আমরা একটি আবেদন করেছিলাম কমিশন গঠনের জন্য। সেই আবেদন শুনে আদালত রুল জারি করেছে।”

সরকার ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিল বিদ্যমান বাড়ি ভাড়া আইনের গেজেট জারি করে। পরে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ঢাকা মহানগরীকে ১০টি রাজস্ব অঞ্চলে ভাগ করে তিনটি ক্যাটাগরিতে ভাড়া নির্ধারণ করে দেয় সিটি করপোরেশন (ডিসিসি)।

তিন বছর পর ২০১০ সালের ২৫ এপ্রিল হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষ থেকে হাই কোর্টে রিট করা হয়। সেখানে বলা হয়, বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ আইনে ভাড়ার রশিদ ও বাড়ি ছাড়ার জন্য নোটিস দেওয়াসহ বিভিন্ন বিধান থাকলেও বেশিরভাগ সময় বাড়ির মালিকেরা সেটা পালন করছেন না। এমনকি ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা অনুযায়ীও ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না।

প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ওই বছর ১৭ মে রুল জারি করে হাই কোর্ট। বাড়ি ভাড়া নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত আইন ও বিধি বিধান কার্যকর করতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানাতে চাওয়া হয় রুলে। ৫ বছর পর রুলের চূড়ান্ত শুনানি করে ২০১৫ সালের ১ জুলাই বিচারপতি বজলুর রহমান ও বিচারপতি রুহুল কুদ্দুসের হাইকোর্ট বেঞ্চ রায় দেয়। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের আগেই মারা যান বেঞ্চের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি বজলুর রহমান।

এরপর মামলাটি প্রধান বিচারপতির কাছে গেলে প্রধান বিচারপতি মামলাটির নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে পাঠায়। এর মধ্যে বাড়ি ভাড়া আইনটির ১৫ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ এবং বাড়ি ভাড়া নির্ধারণে কমিশন গঠনে সম্পূরক আবেদন করে এইচআরপিবি। সেটির শুনানি করেই আদালত এ রুল জারি করল।

#এসএস/বিবি/০১ ১২ ২০১৯


জাতীয় ডেস্ক, বিবি
Published at: শনি, নভেম্বর ৩০, ২০১৯ ১১:৫০ অপরাহ্ন
Share with others:
ad

Recent Posts

Recently published articles!