নানান দেশে রকমারি উৎসব
সারা বিশ্বে নতুন বছরকে নানাভাবে স্বাগত জানানো হয়। প্রতিটি দেশেই রয়েছে আলাদা আলাদা রীতি। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো। আজ আমরা এমনই কয়েকটি অদ্ভুত রীতিনীতি নিয়েই কথা বলব।
নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে যেখানে সারা বিশ্ব, নেচে গেয়ে, আতসবাজির রোশনাইয়ে ভেসে যায়, সেখানে ডেনমার্কে নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পালিত হয় এক অদ্ভুত রীতি। ডেনমার্কবাসীরা নতুন বছরকে স্বাগত জানান প্লেট ভেঙে। নতুন বছরের আগের দিন অর্থাৎ নিউ ইয়ার ইভের দিন ডেনিসরা সকলে তাদের বন্ধুবান্ধবদের বাড়ির সামনে ব্যবহৃত কাঁচের বা চিনামাটির ভেঙে আসেন। তাঁদের ধারণা যার বাড়ির সামনে যতবেশি প্লেট ভাঙা হবে নতুন বছর তার তত ভাল যাবে। এই বিশেষ প্রথার জন্য ডেনমার্কের বিভিন্ন পোর্সেলিন বাসনপত্রের কারখানা থেকে প্রচুর প্লেট সরবরাহ করা হয়। তারপর গ্রামে এবং শহরের মানুষ সেই প্লেট কিনে রাখে। ৩১শে ডিসম্বরের আগে থেকেই সকলে তাদের বাড়ির অব্যবহৃত বাসনপত্র জমাতে থাকে।
স্পেন এবং অন্যান্য লাতিন আমেরিকার কিছু দেশে নতুন বছর পালনের এক অদ্ভুত প্রথা রয়েছে। স্পেনীয়রা ঘড়ির কাঁটা ধরে ১২টি আঙুর খেয়ে এই দিনটি পালন করে। তবে শুধু আঙুর খেলেই হবে না। আঙুর খাওয়ার একটি নির্দিষ্ট নিয়মও আছে। মাঝ রাতে ঘড়ির কাঁটা বারোটা ছুঁলে ঘড়ির ১২টি ঘন্টার আওয়াজের প্রতিটি ঘন্টার শব্দে একটি করে আঙুর খেতে হবে এটাই রীতি।
তবে ব্যাপারটা শুনতে যতটা সহজ মনে হচ্ছে কাজটা ততটাও সহজ নয়। প্রথম আঙুরে একটা কামড় দিতে হবে তারপর পুরো আঙুরটিকে একেবারে গিলে ফেলতে হবে। এক গ্লাস শ্যাম্পেন সম্ভবত আপনাকে সাহায্য করতে পারে গলায় জমে থাকা আঙুরকে নীচের দিকে নামাতে। এই প্রথাটির শুরু হয় ১৯০৯ সালে যখন আঙুর চাষীরা এই পরিকল্পনাটি করেন আরও বেশি আঙুর বিক্রি হওয়ার আশায়। স্পেনীয়রা বিশ্বাস করেন যে যদি এই ১২টি আঙুর সফলভাবে খাওয়া যায় তাহলে তা তাদের আগামি বছর সৌভাগ্য এনে দেবে।
ইক্যুয়েডরের মানুষ আবার কুশপুতুল পুড়িয়ে নতুন বছর পালন করেন। তারা সে দেশের রাজনেতা, পপ তারকা এবং অন্যান্য সেলিব্রেটিদের কুশপুতুল পুড়িয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানান। নতুন বছরের আগের দিন অর্থাৎ নিউ ইয়ার ইভের দিন অ্যানো ভেইজো ( Año Viejo, পুরোনো বছর) অর্থাৎ পুরোনো বছরের কুশ পুতুল পোড়ায়। এর মানে হলো পুরোনো বছরের যা কিছু অশুভ তা নতুন বছরের জন্য নষ্ট করে দেওয়া। এই পুরোনো বছরের কুশপুতুল তৈরি হয় পুরোনো জামাকাপড়, খবরের কাগজ বা কাঠের গুঁড়ো দিয়ে, এবং সবশেষে একটি মাস্ক পড়িয়ে দেওয়া হয় পুতুলের মুখে। ইক্যুয়েডরের এই প্রথাটি সম্ভবত এসেছিল গ্যায়াকুয়েল শহর থেকে। ১৯৮৫ সালে এই শহরে হলুদ জ্বরের মহামারী ছড়িয়ে পড়েছিল, সেই সময় কফিনে করে রোগীর জামা কাপড় শুদ্ধিকরণের উদ্দেশ্যে পোড়ানো হত।
নেপালের নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর রীতিটি দারুণ মজার। তারা বাড়ির ব্যালকনি থেকে আসবাব ছুঁড়ে ফেলে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। নিউ ইয়ারের আগের দিন যা কিছু পুরোনো তা সে টোস্টার হোক বা ফ্রিজ এমনকী আসবাবপত্রও বাড়ির ব্যালকনি থেকে ছুঁড়ে ফেলা হয়। পুরোনোকে ছুঁড়ে ফেলার প্রতীক হলো নতুন বছরে নতুন করে শুরু করা। এই জিনিসপত্র ছুঁড়ে ফেলতে গিয়ে যাতে কেউ আহত না হয় তার জন্য বর্তমানে নেপালের বাসিন্দারা ছোটো আর নরম কিছু জিনিসকে ছুঁড়ে ফেলেন নিজেদের বাড়ির ব্যালকনি থেকে। এটা কিন্তু বেশ অভিনব পদ্ধতি নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর।
রাশিয়াও নতুন বছর পালনের অদ্ভুত নিয়ম থেকে পিছিয়ে নেই। ডিসেম্বরের শেষ দিনে সকলে তাদের মনের ইচ্ছে একটি কাগজে লেখে এবং তা পুড়িয়ে ফেলে। এই ইচ্ছার কথা কাউকে বলতে নেই।এরপর পোড়া কাগজ শ্যাম্পেনের গ্লাসে ঢেলে খেয়ে ফেলতে হয়।
থাইল্যান্ডের নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রথা বেশ মজাদার এবং অভিনব। নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রথাকে থাইল্যান্ডে বলা হয় সংক্রাণ। এই রেওয়াজ অনুযায়ী সেদিন মানুষজন একে অপরের গায়ে জল ছোড়ে। অনেকে বৌদ্ধমূর্তির গায়ে জল ঢেলে নতুন বছরকে স্বাগত জানায়। তারা মনে করেন সারাবছরের যাবতীয় অশুভ ঘটনা এই জলের সঙ্গে ভেসে চলে যায়।
#তমহ/বিবি/০১ ০১ ২০২২
Share with others:
Recent Posts
Recently published articles!
-
শেয়ারবাজার ডেস্ক, বিবি
-
ব্যবসা ডেস্ক, বিবি
-
শেয়ারবাজার ডেস্ক, বিবি
-
ভূমি ডেস্ক, বিবি
-
প্রবাস ডেস্ক, বিবি