গরিব গ্রাম যেভাবে ধনী হলো...
প্রতিটি পরিবার বাঁশ ও কাঠের ঘরে থাকে; রান্নার জন্য তেমন কিছুই নেই
এটি ছিল চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ছি সি গ্রামের বাস্তবতা। তবে বহু বছর চেষ্টার পর ‘চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের প্রথম গ্রাম’ হিসেবে পরিচিত এই ছোট গ্রাম সম্পূর্ণ দারিদ্র্যমুক্ত হয় এবং ধীরে ধীরে ধনী হয়ে ওঠে।
২০১৬ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ছি সি গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে ভিডিও লিংকের মাধ্যমে কথা বলেন। এসময় তাদের দারিদ্র্যবিমোচন কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন প্রেসিডেন্ট সি।
আগে ছি সি গ্রাম কেমন ছিল? ৩০ বছরেরও বেশি সময় সেখানের উন্নয়নের প্রক্রিয়া কেমন ছিল? আজকের অনুষ্ঠানে এই ছোট গ্রামের গল্প আপনাদের কাছে তুলে ধরবো।
থাই লাউ পাহাড়ের নিচে ছি সি পাহাড়। সেখানে আকাশের সাতটি তারা পড়ে; স্থানটি সৌভাগ্যের......এই লোকসংগীত চীনের স্য জাতির, এতে পাহাড় ও সমুদ্রের মধ্যে যে সুন্দর জায়গার বর্ণনা করা হয়েছে, তা ফুচিয়ান প্রদেশের ছি সি’র স্য জাতির গ্রাম। কল্পনা করা যায় না, এমন সুন্দর গ্রামীণ স্থান, আগে ছিল দারিদ্রের অপর নাম! স্থানটিকে ‘চীনের দারিদ্র্যবিমোচনের প্রথম গ্রাম’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ছি সি গ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং। তিনি স্থানীয় দারিদ্র্যবিমোচন কাজের স্বীকৃতি দেন। তিনি বলেন: যখন তিনি নিং দ্য শহরের সিপিসি সম্পাদক ছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, দীর্ঘ সময় ধরে পানির ফোঁটার আঘাতে যেমন পাথরে গর্ত হতে পারে, তেমনি কঠিন কাজ তোমরা বাস্তবায়ন করেছ। আর তোমাদের অনুশীলন আমাদের বর্তমান নীতির সত্যতা প্রমাণ করেছে। তা হল দারিদ্র্যবিমোচন কাজের জন্য স্থানীয় অবস্থা অনুযায়ী বিশেষ ব্যবস্থা নিতে হয়।
নিং দ্য শহরের ছি সি গ্রামে, পাহাড়ের পর পাহাড়, আবাদি জমি অনেক কম। অতীতে, গ্রামবাসীরা কাঠ ও ঘাসের বাড়িঘরে থাকত, কিছু গ্রামবাসীর কাপড়ও ছিল না, অন্যের সঙ্গে পোশাক ভাগাভাগি করতে হতো।
ওয়াং সাও জুই স্থানীয় মিন তুং দৈনিক পত্রিকার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি গত শতাব্দীর ৮০ দশ থেকে দারিদ্র্যবিমোচন সম্পর্কে প্রচার কাজ শুরু করেন। খবর লেখা এবং গ্রাম পরিদর্শন করে তাঁর লেখা ‘দরিদ্র পাহাড়ি অঞ্চল বিশেষ নীতির আলোকে দারিদ্র্য দূর করতে চায়’ ১৯৮৪ সালের ২৪ জুন চীনের পিপলস ডেইলি পত্রিকায় তা প্রকাশিত হয়। এরপর কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে অনেক গুরুত্ব দেয়। সেই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে চীন সরকার ও রাষ্ট্রীয় পরিষদ ‘দরিদ্র এলাকার অবস্থা উন্নয়নের নির্দেশনা’ দেয়। তখন থেকে চীনে নতুন যুগে দারিদ্র্যবিমোচন কাজের সূচনা হয়। এই কারণে ছি সি গ্রামকে চীনের ‘দারিদ্র্যবিমোচনের প্রথম গ্রাম’ বলা হয়।
ছি সি গ্রামের সিপিসি’র সাবেক সম্পাদক হুয়াং কুও লাই বলেন, শুরুর দিকে সরকার তাদেরকে টাকা দিত, গাছের চারা দিত, ছাগল দিত, তবে পাহাড়ে কোনও আবাদি জমি ছিল না, গাছ ও ছাগল চাষ করা যেত না।
একদিকে আবাদি জমির পরিমাণ কম, অন্যদিকে পাহাড় ও সামুদ্রিক সম্পদ অনেক বেশি। ১৯৮৮ সালে যখন সি চিন পিং নিং দ্য শহরের সিপিসি’র সম্পাদক ছিলেন, তখন তিনি ওই অঞ্চল পরিদর্শনের পর বলেন, পাহাড়ের কাছে কৃষিকাজে জড়িত থাকলে তার ওপর নির্ভর করতে হয়, সমুদ্রের কাছে থাকলে সমুদ্রের ওপর নির্ভর করে জীবনযাপন করতে হয়। গ্রামীণ প্রতিষ্ঠান, কৃষি, বন, পাশুপালন এবং মাছ চাষের কাজ একসাথে উন্নত করতে হয়।
সি চিন পিং উল্লেখ করেছিলেন, পাহাড়ে ভালোভাবে কাজ করলে ধনী হওয়া যাবে। ১০, ১৫, ২০ বছর স্থায়ী হলে এই পাহাড় মানুষের কাছে ‘ব্যাংকের’ মতো সম্পদে পরিণত হবে।
স্থানীয় অবস্থা অনুযায়ী বিশেষ ব্যবস্থা প্রণয়নের পর ছি সি গ্রামের দারিদ্র্যবিমোচনের দৃষ্টিভঙ্গি যেন আরও সম্প্রসারণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে স্থানীয় সরকার সৃজনশীল দৃষ্টিতে ‘পুরো গ্রাম স্থানান্তরের’ সিদ্ধান্ত নেয়। ১৯৯৫ সালে সিয়া সান সি গ্রামের ২২টি স্য জাতির পরিবার ফু চিয়ান প্রদেশের ‘পুরো গ্রাম স্থানান্তরকারী’ প্রথম দফা মানুষ হন। তারা নতুন বাড়িঘরে স্থানান্তরিত হয়েছেন। এরপর ২০ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে স্থানীয় ১২টি গ্রামের ৩৫০টি পরিবার নতুন বাড়িঘরে স্থানান্তরিত হয়।
ছি সি গ্রামের বাসিন্দা লান ইয়ু সিয়াং জানান, তা যেন স্বপ্নের মতো। নতুন বাড়িঘর নির্মাণের সব খরচ সরকার দিয়েছে, আমরা শুধু ৮০টি কাঠ দিয়েছি। বাসা স্থানান্তরের সেই রাত আমি আনন্দে ঘুমাতে পরিনি।
২০১৫ সালের পর থেকে ফু তিং শহরের সরকারি কর্মকর্তা ছি সি গ্রামে এসে দারিদ্র্যবিমোচন কাজে সহায়তা করেন। তারা দেখেছেন যে, যদিও গ্রামের আবাদি জমি অনেক কম, তবে আবহাওয়া, পাহাড় ও জমির অবস্থা সাদা চা চাষের জন্য উপযোগী। এখন গ্রামে চা চাষ ও উত্পাদনের শিল্প চেইন স্থাপন করা হয়েছে। ছোট চা পাতা এখন ছি সি গ্রামের ‘দারিদ্র্যমুক্ত’ ও ধনী হওয়ার ‘সোনালি পাতায়’ পরিণত হয়েছে।
ছি সি গ্রামের সিপিসি সম্পাদক দু চিয়া জু বলেন, শুধু সাদা চা চাষের এই প্রকল্পের মাধ্যমে গ্রামের মাথাপিছু বার্ষিক আয় ৭ হাজার ইউয়ান বেড়েছে। ২০১৯ সালে ছি সি গ্রামের মাথাপিছু আয় ছিল ২১৬০০ ইউয়ান। শিল্পের মাধ্যমে দারিদ্র্যবিমোচনের পদ্ধতি মানুষের জন্য কল্যাণকর হয়েছে।
ছি সি গ্রামের ইয়ুন তিং কাঁচের সেতু এখন বিখ্যাত দর্শনীয় স্থান। ছি সি গ্রাম প্রাকৃতিক সম্পদের ভিত্তিতে পুরো গ্রামকে দর্শনীয় স্থানে পরিণত করেছে। বার্ষিক পর্যটকের সংখ্যা ২.৭ লাখ ছাড়িয়েছে। পরিচ্ছন্ন পানি ও সবুজ পাহাড় সত্যিই স্থানীয় মানুষের জন্য ‘সোনালি পাহাড় ও রৌপ্যের পাহাড়ে’ পরিণত হয়েছে। ছি সি গ্রামের ৩০ বছরেরও বেশি সময়ে দারিদ্র্যমুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া, চীনের দারিদ্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি দারুণ উদাহরণ।
মূলপ্রকাশক:
Bengali.cri.cn/20211217/7Fe5Adc3 A4Dd 8Eee 79F4 9F94Dd36A658.Html
#তমহ/বিবি/২০ ১২ ২০২১
Share with others:
Recent Posts
Recently published articles!
-
শেয়ারবাজার ডেস্ক, বিবি
-
ব্যবসা ডেস্ক, বিবি
-
শেয়ারবাজার ডেস্ক, বিবি
-
ভূমি ডেস্ক, বিবি
-
প্রবাস ডেস্ক, বিবি