প্রতি উপজেলায় এক হাজার জনকে চাকরি দেবে সরকার

প্রতি উপজেলায় এক হাজার জনকে চাকরি দেবে সরকার

দেশের প্রতি উপজেলায় প্রতিবছর এক হাজার জনকে সরকার চাকরি দেবে। ২০৪১ সালের মধ্যে নিরঙ্কুশ দারিদ্র সর্বাংশে দূরীকরণসহ উচ্চ আয়ের মর্যাদা অর্জনের জন্য মূল প্রবৃদ্ধি ও দারিদ্র্য নিরসন সংশ্লিষ্ট অভিষ্ঠ সামনে রেখে মানব উন্নয়নের জন্য এ উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

১০ সেপ্টেম্বর, রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘রূপকল্প রুপায়ন: বাংলাদেশের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০২১ ২০৪১ জন অবহিতকরণ’ সভায় এ তথ্য জানানো হয়।

প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় (২০২১ ২০৪১) মানসম্মত শিক্ষার মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন এবং জনমিতিক লভ্যাংশ আহরণ বিষয়ে বলা হয়েছে, ২০৪১ সালের মধ্যে নিরঙ্কুশ দারিদ্র্য সর্বাংশে দূর করাসহ উচ্চ আয়ের মর্যাদা অর্জনের জন্য মূল্য প্রবৃদ্ধি ও দরিদ্র্য নিরসন সংশ্লিষ্ট অভীষ্ট সামনে রেখে মানবসম্পদ উন্নয়নের জন্য প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ এর কর্মসূচি পরিচালিত হবে। বিশেষ করে এর অন্তর্ভুক্ত থাকবে একটি জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতির প্রতিষ্ঠান, জনসংখ্যার শতভাগ সাক্ষরতা, ১২ বছর বয়সীদের জন্য সর্বজনীন অবৈতনিক শিক্ষা, কর্মভিত্তিক দক্ষতা অর্জনে আগ্রহীদের জন্য প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি, সাশ্রয়ী মূল্যে স্বাস্থ্যবিমা স্কিমে সর্বজনীন অভিগম্যতা, সংগঠিত খাতে সব কর্মীকে কর্মকালীন দুর্ঘটনা ও স্বাস্থ্য বিমার শতভাগ আওতায় আনা এবং প্রতি উপজেলা থেকে প্রতি বছর এক হাজার তরুণ তরুণীর জন্য চাকরির নিশ্চয়তা প্রদান করা।

প্রেক্ষিত পরিকল্পনায় (২০২১ ২০৪১) মানবসম্পদ উন্নয়ন বিষয়ে লক্ষ্যমাত্রা হলো দেশের মানুষের সম্ভাব্য আয়ু ২০৩১ সালের মধ্যে ৭৫ বছর এবং ২০৪১ সালে ৮৩ বছরে নিয়ে যাওয়া; জনসংখ্যার বৃদ্ধির হার ২০৩১ সালের মধ্যে এক শতাংশে নিয়ে আসা এবং ২০৪১ সাল পর্যন্ত এই হারই ধরে রাখা; মাতৃমৃত্যুর হার ২০৩১ সালে প্রতি লাখে ৭০ জন এবং ২০৪১ সালে তা কমিয়ে ৩৬ জনে নিয়ে আসা; শিশুমৃত্যুর হার ২০৩১ সালের মধ্যে প্রতি হাজারে (জীবিত জন্ম) ১৫ জনে নিয়ে আসা ও ২০৪১ সালে তা চারজনে নিয়ে আসা; পাঁচ বছরের কম বয়সীদের কম ওজন (৬ থেকে ৫৯ মাস) ২০৩১ সালে পাঁচজনে নিয়ে আসা ও ২০৪১ সালে তা কমিয়ে দুইজনে নিয়ে আসা; খর্বকায় ২০৩১ সালের মধ্যে ১৫ জনে নিয়ে আসা ও ২০৪১ সালে তা দুইজনে নিয়ে আসা; মোট উর্বরতার হার ২০৩১ সালে ১ দশমিক ৮ শতাংশে এবং ২০৪১ সাল পর্যন্ত তা ধরে রাখা; স্বাস্থ্যবীমার কাভারেজ ২০৩১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৭৫ শতাংশে নিয়ে আসা এবং স্বাস্থ্যের জন্য পাবলিক ব্যয় ২০৩১ সালে ১ দশমিক ৫ শতাংশ এবং ২০৪১ সালের মধ্যে তা ২ শতাংশ করা।

শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের বিষয়ে বলা হয়েছে, প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার হার ২০৩১ সালের মধ্যে শতভাগ নিশ্চিত করা এবং তা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ধরে রাখা; নিট প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির হার ২০৩১ সালের মধ্যে শতভাগ নিশ্চিত করা এবং তা ২০৪১ সাল পর্যন্ত ধরে রাখা; প্রাথমিক বিদ্যালয় ছাড়ার হার ২০৩১ সালের মধ্যে শূন্যে নিয়ে আসা এবং ২০৪১ পর্যন্ত তা ধরে রাখা; নিট মাধ্যমিক শিক্ষা ২০৩১ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ নিশ্চিত করা এবং ২০৪১ সালে তা ৯৫ শতাংশে নিয়ে যাওয়া; মাধ্যমিক বিদ্যালয় ছাড়ার হার ২০৩১ সালে শূন্যে নিয়ে আসা এবং ২০৪১ সাল পর্যন্ত তা ধরে রাখা; উচ্চশিক্ষার হার ২০৩১ সালে ৫০ শতাংশ নিশ্চিত করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৮০ শতাংশ নিশ্চিত করা; উচ্চশিক্ষায় নারী শিক্ষার্থীদের শতকরা ভাগ ২০৩১ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ নিশ্চিত করা এবং ২০৪১ সাল পর্যন্ত তা ধরে রাখা; টেকনিক্যাল ও ভোকেশনাল শিক্ষায় ভর্তির হার ২০৩১ সালের মধ্যে ৩০ শতাংশ করা এবং ২০৪১ সালে তা ৪১ শতাংশ করা এবং শিক্ষায় জনসাধারণের ব্যয় ২০৩১ সালে মোট জিডিপির ৩ দশমিক ৫ শতাংশ করা এবং ২০৪১ সালে ৪ শতাংশ করা।

স্বল্পোন্নত থেকে মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। সরকারের লক্ষ্য ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ে তোলা। দেশে দারিদ্র্যের হার নেমে আসবে তিন শতাংশে। চরম দারিদ্র্যের হার হবে ১ শতাংশেরও কম। গ্রাম শহরের বৈষম্য কমবে। ৮০ শতাংশ মানুষ শহুরে জীবনযাপনের সব সুবিধা পাবে। বাড়বে গড় আয়ু, মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি)।

২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত এই বাংলাদেশ গড়ে তোলার কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণের রূপরেখা চূড়ান্ত করেছে সরকার। সেই রূপরেখা অনুযায়ী অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এর বাস্তবায়ন। এমন আরও তিনটি, অর্থাৎ মোট চারটি পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে তা চূড়ান্ত রূপ পাবে।

পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনায় রয়েছে ১২টি অধ্যায়। এর মধ্যে যেমন শিল্প ও বাণিজ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মতো বিষয় যেমন রয়েছে, তেমনি রয়েছে সুশাসন, মানব উন্নয়ন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের মতো বিষয়গুলোও। এর মধ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো আছে, যাতে প্রতি অর্থবছরের অর্থনীতির সূচকগুলো লক্ষ্যমাত্রা বিস্তরিতভাবে দেওয়া হয়েছে। ২০২১ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়নাধীন প্রথম পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা, তথা রূপকল্প ২০২১ এর ধারাবাহিকতায় ২০ বছর মেয়াদী দ্বিতীয় এই পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে।

অনুষ্ঠনে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, আমরা ধারণা পাওয়ার জন্য পরিপ্রেক্ষিত পরিকল্পনা করে থাকি। আমাদের ৫ বছর মেয়াদী, ১০, ২০ ও শতবর্ষ মেয়াদী পরিকল্পনা আছে। বিশ্বের অন্য কোন দেশে এমন পরিকল্পনা আছে বলে আমার জানা নেই।

তিনি বলেন, বিশ্বের মধ্যে সব থেকে পরিকল্পিত দেশ বাংলাদেশ। সব থেকে পরিকল্পিত সুন্দর পরিকল্পনার জাতি আমরাই। কোভিডের যন্ত্রণা আমাদের একটু ভোগাচ্ছে। আমরা অনেক ক্ষেত্রে ভালো আছি, সঠিক পথেই আছি। অনেক সূচকে ভালো আছি তবে, আদর্শিক সূচকে ভালো নেই।

অনুষ্ঠাতে সভাপতিত্ব করেন সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম। এসময় আরো বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমেদ কায়কাউস, মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম প্রমুখ।

#এসকেএস/বিবি/১১ ০৯ ২০২০


জাতীয় ডেস্ক, বিবি
Published at: বৃহঃ, সেপ্টেম্বর ১০, ২০২০ ৮:২৭ পূর্বাহ্ন
Share with others:

Recent Posts

Recently published articles!