কথাসাহিত্যিক মকবুলা মনজুর আর নেই
বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক মকবুলা মনজুর আর নেই(ইন্নালিলাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। শুক্রবার(৩ জুলাই) বিকেলে রাজধানীর উত্তরায় নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মকবুলা মনজুর দীর্থদিন ধরে বার্ধক্যজনিত রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়ে ও দুই ছেলেসহ বহু স্বজন অনুরাগী রেখে গেছেন।
নন্দিত এই কথাসাহিত্যিকের মৃত্যুর বিষয়টি জানান তার ছোট বোনের স্বামী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সাবেক শিক্ষক এবং গবেষক অধ্যাপক ড. শরীফ উদ্দিন আহমেদ।
ড. শরীফ জানান, বার্ধক্যজনিত কারণে মৃত্যু হয়েছে। আজ রাতেই উত্তরার কবরস্থানে মকবুলা মনজুরের দাফন হবে।
মকবুলা মনজুর ছিলেন নিভৃতচারী কথাসাহিত্যিক। আজীবন লড়াই করে গেছেন। কিন্তু কখনও নিজের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হননি। লেখিকা সংঘের সব আয়োজনে তিনি অসুস্থ শরীর নিয়েই ছুটে আসতেন। সাহিত্যের প্রতি তার অনুরাগ এমনই ছিলো।
মকবুলা মনজুর ১৯৩৮ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলার মুগবেলাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মিজানুর রহমান ও মায়ের নাম মাহমুদা খাতুন। বাবা মিজানুর রহমান লেখালেখি করতেন। তারা সাত ভাই বোন। তিন ভাই প্রাবন্ধিক ড. মোখলেসুর রহমান, চলচ্চিত্র পরিচালক ইবনে মিজান, প্রাবন্ধিক আজিজ মেহের এবং তিন বোন জোবেদা খাতুন, অধ্যাপিকা মোসলেমা খাতুন ও মুশফিকা আহমেদ। ভাই বোনেরাও লেখালেখির সঙ্গে যুক্ত। কিশোরী বয়সে তিনি নাটকে অভিনয় করতেন। বগুড়া থাকাকালীন তিনি বগুড়ার অ্যাডওয়ার্ড ঘূর্ণায়মান রঙ্গমঞ্চে অভিনয় করেছেন। এছাড়া যুক্ত ছিলেন পটুয়া কামরুল হাসান প্রতিষ্ঠিত মুকুল ফৌজের সঙ্গেও।
১৯৫২ সালে তিনি টাঙ্গাইলের বিন্দুবাসিনী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক (এসএসসি) পাস করেন। বাংলাভাষা আন্দোলন চলাকালীন সেইসময়ে তিনি স্কুলের হোস্টেলে থাকতেন। স্কুলের গেট ভেঙ মিছিলে যোগ দেওয়ার পর ফিরে এলে তিনিসহ বাকি মেয়েদের স্কুলে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। ১৯৫৪ সালে রাজশাহী কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন এবং ১৯৫৮ সালে ইডেন মহিলা কলেজ থেকে বিএ পাস করেন। দীর্ঘদিন পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলাভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।
তৎকালীন মুসলিম কমার্শিয়াল ব্যাংকে (বর্তমান রূপালী ব্যাংক) অফিসার হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। কিন্তু তার স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়া। তাই প্রায় অর্ধেক বেতনে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন হলিক্রস উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। পরবর্তীতে তিনি ইউনিভার্সিটি উইমেন্স কলেজ ও সাউথ ইস্ট ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। শিক্ষকতার পাশাপাশি তিনি প্রায় ২৫ বছর সাপ্তাহিক ‘বেগম’ পত্রিকার ফিচার সম্পাদক ছিলেন। এছাড়া দৈনিক আজাদ পত্রিকার ফিচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মকবুলার সাহিত্য চর্চা শুরু হয় আট বছর থেকে। তখন তিনি ছড়া লিখতেন। ১৮ বছর থেকে তিনি গদ্য সাহিত্যে অনুরাগী হন। তিনি স্বাধীনতা উত্তর বাংলা সাহিত্যে ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, যুদ্ধোত্তর পরিস্থিতি, সামাজিক ও রাজনৈতিক সঙ্কট, নারীবাদী চেতনা নিয়ে তার কলম ধরেন। তিনি তার কালের মন্দিরা উপন্যাসে মুক্তিযুদ্ধে নারীদের ওপর অত্যাচারের কাহিনী তুলে ধরেন।
সৈয়দুর রহমান তার 'হিস্টরিক ডিকশনারি অব বাংলাদেশ' গ্রন্থে মকবুলা মনজুরকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, সেলিনা হোসেন ও হাসান হাফিজুর রহমানের পাশাপাশি আধুনিক যুগের বাংলা সাহিত্যে অবদানকারী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
মকবুলা মনজুর রচিত উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে কালের মন্দিরা, আর এক জীবন, অবসন্ন গান, আত্মজা ও আমরা, প্রেম এক সোনালী নদী, বাউল বাতাস, ছায়াপথে দেখা, সায়াহ্ন যূথিকা, নক্ষত্রের তলে।
সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, অনন্যা সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় আর্কাইভস ও গ্রন্থাগার শ্রেষ্ঠগ্রন্থ পুরস্কার, বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ পুরস্কারসহ বহু সম্মাননায় ভূষিত হয়েছেন।
#এসকেএস/বিবি/৩ ০৭ ২০২০
Share with others:
Recent Posts
Recently published articles!
-
শেয়ারবাজার ডেস্ক, বিবি
-
ব্যবসা ডেস্ক, বিবি
-
শেয়ারবাজার ডেস্ক, বিবি
-
ভূমি ডেস্ক, বিবি
-
প্রবাস ডেস্ক, বিবি