চলো না চিড়িয়াখানায়…

চলো না চিড়িয়াখানায়…

রাজধানী ঢাকায় বিনোদনের অন্যতম এক স্থান ঢাকা চিড়িয়াখানা। ১৯৭৪ সালে এটি মিরপুরে প্রতিষ্ঠিত হয়। এই চিড়িয়াখানায় গিয়ে আপনারা যে সব অতিথি প্রাণীর সঙ্গে পরিচিত হবেন এখন তাদের কথা জানিয়ে দিচ্ছি।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার: বাংলাদেশ ও ভারতের সুন্দরবনের এই রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাস করে।

বনের রাজা সিংহ: আফ্রিকা ও ভারতের গহিন জঙ্গলে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এরা মাংসাশী ও হিংস্র। এরা দলবদ্ধ হয়ে শিকার করতে অব্যস্ত। এদের গড় আয়ু ১৫-২০ বছর।

শিম্পাঞ্জী: মধ্য আফ্রিকার কঙ্গো নদীর আশপাশে এদের দেখা যায়। শিম্পাঞ্জী লেজবিহীন বানর জাতীয় প্রাণী। বন্যপ্রাণীর মধ্যে এদেরকেই সবচেয়ে বুদ্ধিমান মনে করা হয়। এদের প্রধান খাদ্য কচিপাতা ও বিভিন্ন শ্রেণির বিভিন্ন ফল। এদের গড় আয়ু ২৫-৩০ বছর।

অজগর: বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশগুলোতে অজগর সাপ দেখা যায়। এরা সাধারণত ৭.৫ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। দেহের মধ্যভাগ অপেক্ষাকৃত মোটা মাথা ও লেজের দিক সরু হয়ে থাকে। অজগর ধিরস্থির ও অলস প্রকৃতির। এদের গড় আয়ু প্রায় ২০ বছর।

চিত্রা হরিণ: সুন্দরবনের এই মায়াবী হরিণ মিরপুর চিড়িয়াখানায় দেখতে পাওয়া যায়। সৌন্দর্যের কারণে এদেরকে নিয়ে অনেক কাব্য রচনা হয়েছে। দ্রুত গতিতে বাঘের হামলাকে এরা প্রতিরোধ করতে সক্ষম। গাছের কচিপাতা, ফলমূল ও ঘাস এদের প্রধান খাদ্য। সর্বোচ্চ ১৬ বছর এরা বেঁচে থাকে।

ময়ূর: একসময় বাংলাদেশের প্রায় সব জায়গায় এদের দেখতে পাওয়া গেলেও এখন মিরপুর চিড়িয়াখানা ছাড়া এদের আর কোথায়ও খুঁজে পাওয়া যায় না। পাখিদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে সুন্দর। পুরুষ ময়ূর নারী ময়ূরকে আকৃষ্ট করার জন্য তার পেখম মেলে ধরে, অর্থাৎ তার ছোট ছোট যে দুটি ডানা রয়েছে তা মেলে ধরে। এর ফলে নারী ময়ূর তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ে। ময়ূর সাধারণত ৮-১৫ বছর বেঁচে থাকে।

ঘড়িয়াল: বাংলাদেশের সব নদ-নদীতে এক সময় ঘড়িয়াল দেখা গেলেও এখন তা শুধুই ইতিহাস। সুন্দরবনে অল্প কিছু ঘড়িয়াল বেঁচে থাকলেও নিরাপদ আশ্রম মিরপুর চিড়িয়াখানা। এরা কুমির প্রজাতির। গড় আয়ু ৪০-৫০ বছর।

জলহস্তি: আফ্রিকা, কেনিয়া, নাইজেরিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকায় সবচেয়ে বেশি জলহস্তি দেখা যায়। মিরপুর চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে এই জলহস্তি। বিশাল আকৃতির জলহস্তিগুলো মিরপুর চিড়িয়াখানার ছোট পুকুরগুলোতে সারা দিন ডুবে থাকে। এরা দক্ষ সাঁতারু। খাবারের সময় শুধু ডাঙ্গায় উঠে আসে। এদের গড় আয়ু ৪০-৫০ বছর।

গন্ডার: নেপাল, ভারতের বিভিন্ন বনাঞ্চলে গন্ডার দেখতে পাওয়া যায়। এক সময় সুন্দরবনে এক শিংওয়ালা গন্ডার দেখতে পাওয়া যেত। এখন এই গন্ডার দেখতে হলে আপনাকে মিরপুর চিড়িয়াখানায় আসতে হবে। এরা কাদাপানিতে গড়াগড়ি করতে ভালোবাসে। এদের গড় ওজন ২০০০-৩০০০ কেজি। গড় আয়ু ২৫-৩০ বছর।

কুমির: ঢাকা চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ কুমির। এক সময় সারা দেশে কুমির দেখা গেলেও এখন তা বিলুপ্তির পথে। জলজ প্রাণীদের মধ্যে এরাই সবচেয়ে হিংস্র। বাংলাদেশে দুই শ্রেণির কুমির দেখতে পাওয়া যায়। লোনা পানির কুমির ও মিঠা পানির কুমির। চিড়িয়াখানায় গেলে এই দুই শ্রেণির কুমির দেখতে পাবেন।

হাতি: পার্বত্য চট্টগ্রামের কিছু কিছু অঞ্চল ও কক্সবাজারের গহিন অঞ্চলে হাতি দেখতে পাওয়া যায়। চিড়িয়াখানার বিশেষ আকর্ষণ এই হাতি। এরা সর্বোচ্চ ১০০ বছর বেঁচে থাকে। গাছের পাতা, ফলমূল, কচি বাঁশ ও কলাগাছ এদের পছন্দের খাবার।

জেব্রা: সুদান, উগান্ডা, কেনিয়াসহ আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এরাও চিড়িয়াখানার অন্যতম আকর্ষণ। এরা ঘোড়া জাতীয় প্রাণী। সাদা শরীরের উপর কালো ডোরাকাটা দাগ জেব্রাকে অধিক সৌন্দর্য দেখায়। এদের গড় আয়ু ২০-২৫ বছর। ঘাস ও কচি পাতা এদের প্রধান খাদ্য।

উটপাখি: আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চলের বাসিন্দা এই পাখি। এরা উড়তে পারে না। এদের গড় ওজন ১০-১৬০ কেজি। এরা ঘণ্টায় প্রায় ১০০ কিলোমিটার বেগে দৌড়াতে পারে। শাক-সবজি ও ফলমূল এদের প্রধান খাদ্য।

হনুমান: বাংলাদেশ, ভারত, নেপালের জঙ্গলে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এদের গড় আয়ু ১৮-২৫ বছর। বিভিন্ন ফল এদের প্রধান খাদ্য। এছাড়া ঢাকা চিড়িয়াখানায় ওয়াইল্ড বিষ্ট দেখতে পাওয়া যাবে। কেনিয়া থেকে এদেরকে আনা হয়েছে।

ঢাকার যেকোনো প্রান্ত থেকে বিভিন্ন পরিবহন আপনাকে সরাসরি মিরপুর চিড়িয়াখানায় পৌঁছে দিবে। রবিবার বন্ধের দিন ব্যতীত সোম থেকে শনিবার পর্যন্ত সকাল ৮টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মিরপুর চিড়িয়াখানা খোলা থাকে।

সৈয়দ রশিদ আলম: ভূ-পর্যটক, লেখক ও গবেষক

ক্যাটেগরী: পর্যটন

ট্যাগ: পর্যটন

সৈয়দ রশিদ আলম বৃহঃ, আগষ্ট ২৯, ২০১৯ ২:৩১ অপরাহ্ন

Comments (Total 0)