জন্মদিনে বই ‘হুমায়ূনকে নিয়ে’

জন্মদিনে বই ‘হুমায়ূনকে নিয়ে’

বাংলাদেশের জনপ্রিয়তম লেখক হুমায়ূন আহমেদ। ১৩ নভেম্বর শুক্রবার তার ৭২তম জন্মদিন। এ উপলক্ষে প্রকাশিত হচ্ছে তরুণ লেখক ও সাংবাদিক হাসান শাওনের প্রথম বই ‘হুমায়ূনকে নিয়ে’। এর প্রচ্ছদ করেছেন ও ভূমিকা লিখেছেন হুমায়ূন অনুজ লেখক, কার্টুনিস্ট ও উন্মাদ পত্রিকার সম্পাদক আহসান হাবীব। বইটির প্রকাশক অভয়া লিমিটেড। এ বইয়ের সম্পাদনা সহযোগী হিসেবে কাজ করেছেন দৈনিক বণিক বার্তার সম্পাদনা বিভাগের প্রধান সমন্বয়কারী মৃদুল মণ্ডল।
হুমায়ূন আহমেদ ছিলেন একাধারে ভূখন্ডের জনপ্রিয়তম কথা সাহিত্যিক, চিত্রনাট্যকার, টিভি নাটক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, গীতিকার ও আঁকিয়ে। ২০১২ সালের ১৯ জুলাই নিউইয়র্কের বেলভিউ হাসপাতালে কোলন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বাংলাদেশ সময় রাত ১১:২০ মিনিটে তিনি পরলোকে পাড়ি জমান। ৬৩ বছর বয়সে তাঁর এই চলে যাওয়া।
গণমাধ্যমে প্রেরিত হাসান শাওনের প্রথম বই ‘হুমায়ূনকে নিয়ে’ র কৈফিয়ত অংশে লেখক লিখেছেন,  আমরা যারা আশি ও নব্বইয়ের দশকে জন্ম ও বেড়ে ওঠা, তাদের এক কথায় ‘হুমায়ূন প্রজন্ম’ বলা যায়। নানাভাবে আমরা প্রভাবিত হয়েছি এই মায়েস্ত্রো দ্বারা। তার সৃষ্টি হিমু, রূপা, মিসির আলী, শুভ্র, বাকের ভাই, মজনু ব্যাপক মাত্রায় ভর করেছিল আমাদের ওপর। তাই তাকে নিয়ে লেখার একটা দায় নিয়মিতই অনুভব করেছি।
এ বইয়ে প্রকাশিত কিছু লেখা বণিক বার্তা, সকালের খবর, সায়েন্স ফিকশন ম্যাগাজিন ‘ ডাইজেস্ট’ এ আগে প্রকাশিত হয়েছে। একে তাই সংকলন গ্রন্থও বলা যায়। তবে সংবাদপত্র কর্তৃক আরোপিত সম্পাদনামুক্ত এ বইয়ের লেখাগুলো।
অন্য লেখা থেকে হুমায়ূন আহমেদকে নিয়ে লেখাগুলো আলাদা হোক, এমন ইচ্ছা থেকেই এ বই প্রকাশের ভাবনা।’
‌'হুমায়ূনকে নিয়ে'র কৈফিয়ত অংশে লেখক হাসান শাওন আরও লিখেছেন, একজন জনপ্রিয় লেখক একটি পিছিয়ে থাকা জনগোষ্ঠীকে বদলে দেয়ার কাজ করতে পারেন। তিনি নতুন পাঠক তৈরি করেন। সে পাঠক পরে খুঁজে নেন পাঠ ভুবনে নিজের চলাচল। হুমায়ূন আহমেদ বাংলাভাষী জনপদে এ কাজটি করেছেন। দেশীয় প্রকাশনা শিল্পে নান্দনিকতা ও বইমেলাকেন্দ্রিক বিপুল বাণিজ্য হয়েছে অনেকটা একক তার কৃতিত্বে। যার ঘরে কোনো বই নেই, সে ঘরেও একটি হুমায়ূন আহমেদের বই থাকে। বই কেনার যার অভ্যাস নেই, তিনিও বইমেলা থেকে এ লেখকের একটি বই সংগ্রহ করেন।
নানাভাবে সামাজিক দায়িত্বও পালন করেছেন হুমায়ূন আহমেদ। ঘরে বসে প্রাণ বাঁচানোর খাওয়ার স্যালাইন তৈরির কায়দা তারই শেখানো। গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে তিনি নির্মাণ করেছেন একাধিক টিভি প্রডাকশন। মানুষ যখন একাত্তরকে ভুলে যাচ্ছিল তখন রাষ্ট্রীয় টিভিতে টিয়া পাখির মুখ দিয়ে ‘তুই রাজাকার’ উচ্চারণের সাহস হুমায়ূনই দেখিয়েছেন, যা স্লোগান হয়ে উজ্জীবিত করেছে শাহবাগের মহত্তম আন্দোলনের শুরুতে। বিনা বিচারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহত হওয়া নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি হুমায়ূন।’
হাসান শাওন তার প্রকাশিতব্য বইয়ের কিছু অংশ ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন। সেখানে ‘হুমায়ূন রাজ্যের এক বাসিন্দার চিঠি’ শিরোনামের একটি লেখায় তিনি লিখেছেন,
“জীবনানন্দের ঘোর লাগা কবিতাগুলো আমাদের সিলেবাসে ছিল না। রবার্ট ফ্রস্ট, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, শামসুর রাহমান, আবুল হাসানের বেলায়ও একই কথা। জন ডেনভারের নাম জেনে তার গান শুনেছি আপনার কারণে।
শুধু কবিতা, গান কেন? পৃথিবীকে জানা-বোঝার মতো অনেক রসদ আপনি আপনার বইয়ের ভাঁজে ভাঁজে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। গোগ্রাসে আপনার বই শেষ করার পর মনে হতো, পড়তে হবে আরও অনেক কিছু। নইলে লিখতে পারা যাবে না কিছুই।

আমাদের বন্ধু বেছে নেয়ার সিদ্ধান্তে আপনার হাত ছিল। অমুক-তমুক, সেই ভাইয়া, ওই আপু...শুধু তাদের কাছেই গেছি, যাদের বাসায় বেশি ছিল ‘হুমায়ূন আহমেদের বই’।

আপনার ছোটবেলার মতো আমাদেরও বই কেনার টাকায় ঘাটতি ছিল। বইমেলায় হিসাব করে কেনা হতো। আমি একটা কিনলে ও আরেকটা। তারপর পড়া শেষে অদল-বদল। পৃথিবীর সব সুগন্ধি মার খাবে বইমেলা থেকে কেনা আপনার বইয়ের গন্ধের কাছে।”
‘হুমায়ূনকে নিয়ে’র প্রচ্ছদকার ও ভূমিকা লেখক হুমায়ূন অনুজ লেখক, কার্টুনিস্ট ও ‘উন্মাদ’ সম্পাদক আহসান হাবীব বলেন, হাসান শাওনের কাজের সঙ্গে আমার পরিচয় দীর্ঘ সময় ধরে। দাদা ভাইয়ের (হুমায়ূন আহমেদ) প্রতি ওর অনুরাগ নতুন নয়। ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার পর হাসান দাদা ভাইকে একটি চিঠি লিখেছিল। সেটি প্রকাশ হয়েছিল হুমায়ূন আহমেদের জন্মদিনে বণিক বার্তার প্রথম পাতায়। সেই লেখাটির কথা আমি কখনও ভুলব না।
রকমারী ডটকমে ১৪ নভেম্বর থেকে বিক্রি হবে ‘হুমায়ূনকে নিয়ে’র হার্ড কপি। বইঘর, বাংলালিংক বইঘর, রবি বইঘর, এয়ারটেল মাই পকেটবুক অ্যাপ ও গ্রামীণফোন বইমেলা ওয়েব সাইট থেকে ডাউনলোড করা যাবে ‘হুমায়ূনকে নিয়ে’-এর ইবুক ভার্সন।
বিবি/টিএমএইচ/১১-১১-২০২০

ক্যাটেগরী: সাহিত্য

ট্যাগ: সাহিত্য

সাহিত্য ডেস্ক, বিবি মঙ্গল, নভেম্বর ১০, ২০২০ ১১:৩৪ অপরাহ্ন

Comments (Total 0)