পুরনো গাড়ি কেনার ২১ টিপস

পুরনো গাড়ি কেনার ২১ টিপস

সস্তার তিন অবস্থা- এ শব্দমালা কিন্তু আপনার জীবনে সত্য হয়ে দেখা দিতে পারে। তাই বলে পুরনো গাড়ি কেনা থেকেই বিরত থাকতে হবে- এমনটা নয়। চোখ-কান খোলা রেখে যদি কিনেন পুরনো গাড়ি, তবে জিত হবে আপনারই। কেনার আগে অবশ্যই অভিজ্ঞ কোনো গাড়ি সারাইকারি দিয়ে গাড়ির ভেতর-বাহির যতোটা সম্ভব যাচাই করিয়ে নিতে হবে। তবে ২১টি বিষয় বিবেচনা করলে কাজটি আরও সহজ হয়ে যাবে। গুরুত্বপূর্ণ এসব বিষয় তুলে ধরা হল আপনারই জন্য।

১. যাচাই করুন সমতলে রেখে

গাড়ি যাচাইয়ের আগে অবশ্যই সমতলে রাখতে হবে। এতে গাড়ির টায়ার সহজেই পরখ করতে পারেন। গাড়িতে কোনো কিছু আটকে আছে কিনা সেটাও সহজেই টের পাওয়া যাবে।

২. রং পরীক্ষা

পুরনো গাড়ি রং-চটা হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে রঙে যদি আপোস করতে না চান, তবে খুব সতর্কতার সাথে গাড়ির রং পরীক্ষা করতে হবে। দেখে নিতে হবে গাড়ির গায়ে কোনো আঁচড়, মোচড়ানোর দাগ ইত্যাদি আছে কিনা। গাড়ির দুই পাশই দেখুন পিছন থেকে। রঙের ঢেউ খেলানোটা লক্ষ করুন। তবেই বুঝবেন রং কোন অবস্থায় আছে। দুই প্যানেলের সংযোগস্থলে আঙুল রেখে টেনে দেখুন অমসৃণ ভাব আছে কিনা। থাকলে ভালো করে যাচাই করুন এমনটা কেন হয়েছে।

৩. দেখে নিতে হবে পেছনের ট্রাঙ্ক

গাড়ির পেছনের ট্রাঙ্ক ভালো আছে কিনা, তাও নিশ্চিত হতে হবে। এখানে কোনো ধরনের আঘাত বা মোচড়ানোর চিহ্ন থাকা উচিত নয়। সেই সাথে পানি জমে থাকাও গাড়ির দুর্বল একটি দিক। ট্রাঙ্কের ভেতরের ঢাকনার মতো উপকরণ দেখেই আঁচ করা যাবে যে গাড়িটি কতো পুরনো।

৪. পরখ করুন হুড

গাড়ির হুডের নিচের দিকটাও পরখ করতে হবে। দেখুন, কোনো আঘাত, মোচড় বা আঁচড়ের চিহ্ন আছে কিনা। যদি এসব থাকে, তবে বুঝতে হবে গাড়িটি তেমন যতœ-আদ্যি পায়নি। আবার অন্যকোনো কারনেও এটা ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। মনে রাখবেন, প্রত্যেক ফেন্ডারে, হুডের সংযোগস্থলের সাথে ভিআইএন এর লেভেল থাকে। এটা যদি না থাকে বুঝবেন, ফেন্ডার পাল্টানো হয়েছে।

৫. হোস ও বেল্ট কখন ঠিক

হোস ও বেল্টের ক্র্যাক বা ফাটল গ্রহণযোগ্য নয়। যদি এমন কিছু থাকে, তবে রেডিয়েটর হোসও মসৃণ থাকবে না।

৬. যা দেখবেন ভেতরে

গাড়ির আসন বা সিট দেখে নিতে হবে। ভেতরে কোথাও কোনো আঘাত বা আঁচড়ের চিহ্ন আছে কিনা, তা যাচাই করতে হবে। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা (এসি) ভালোভাবে কাজ করে কিনা দেখে নিতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ১৯৯৩ অথবা তুলনামূলক নতুন গাড়িতে জ১৩৪ এয়ার কুলার লাগানো থাকে এবং ‘এসি কনডেনসার’ এমন স্টিকার লাগানো থাকে সেখানে।

৭. ওডো মিটার যাচাই

গাড়ির কতটুকু চালানো হয়েছে, তা বুঝা যায় মাইলেজের পরিমাণ দেখে। তাই এটা দেখে নিতে হবে। আমাদের দেশে মাইলেজ নিয়ে কারসাজির আশ্রয় নেয়া হয়। তারপরও স্বাভাবিকভাবে বছরে ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার রিডিং হয়ে থাকে, যদিও অনেক কিছুর উপর এটা নির্ভর করে। মনে রাখতে হবে, গাড়ি পুরনো হয় সময় ও মাইলেজে। ১০ বছরের পুরনো একটা গাড়ি, কিন্তু মাইলেজ খুব কম, তারপরও এটা কেনা নিশ্চয় বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।

৮. পড়তে হবে সারাইয়ের নথি

যদি গাড়ি সারাইয়ের নথি থাকে, তবে তা পড়ে দেখুন। তবেই কখন, কেন গাড়ি সারাই করা হয়েছে, তার ইতিহাস জানা যাবে। গাড়ি কোনো দুর্ঘটনায় পড়েছিলো কিনা, তাও নিশ্চিত হওয়া যাবে। গাড়ির যতœ-আদ্যি সম্পর্কে সহজইে ধারণা পাওয়া যাবে।

৯. শক্ত করে ব্রেক কষুন

খুব শক্ত করে ব্রেক কষে গাড়ির ব্রেক পরখ করুন। এজন্য আপনাকে ফাঁকা রাস্তায় গিয়ে ঘণ্টায় অন্তত ৩০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালাতে হবে। ব্রেক প্যাডাল অস্বাভাবিকভাবে আন্দোলিত হওয়া, বাজে শব্দ করার মতো বিষয়গুলো গ্রহণযোগ্য নয়। যদি ব্রেক আন্দোলিত হয়, তবে ধরে নিতে হবে রোটোর ঠিকভাবে বসাতে হবে বা নতুন প্যাড লাগাতে হবে। ব্রেক যদি এদিক-ওদিক নড়াচড়া করে তবে বুঝতে হবে ব্রেক কেপিলার নষ্ট হয়েছে অথবা স্টিয়ারিং-এর কলকব্জা অকেজো হওয়ার পথে।

১০. ইঞ্জিন পরীক্ষা করুন

ইঞ্জিনে অযাচিত কোনো ছিদ্র, ঘষা-আঁচড় আছে কিনা দেখে নিতে হবে। গাঢ় বাদামি তেলের দাগের অর্থই হচ্ছে গ্যাসকিটে ছিদ্র আছে, এটা মেরামত করা অনেক ব্যয়বহুল। ব্রেক ফ্লুইট এবং রিজার্ভার পরখ করুন, নিশ্চিত হন যে রিজার্ভারে ছিদ্র নেই। আর দেখুন বেল্টগুলো নতুন কিনা। এটা পরিবর্তন করাও ব্যয়বহুল।

১১. খুলে দেখুন অয়েল ফিলার ক্যাপ

ভেতরে যদি ফেনা জাতীয় কিছু থেকে থাকে বুঝবেন গ্যাসকিটে ছিদ্র আছে। এমন গাড়ি কিনবেন না। ওভার ফ্লো জারের কুলান্টের অবস্থা দেখুন। নোংরা হলে বুঝে নিন এই গাড়ি আপনার জন্য নয়।

১২. ট্রান্সমিশন ডিপস্টিক খুলুন

ট্রান্সমিশন ডিপস্টিক খুলে দেখতে হবে। ফ্লুয়িড অবশ্যই গোলাপি বা লাল হতে হবে। পুরনো গাড়ির ফ্লুয়িড কালো হতে পারে কিন্তু হওয়া উচিত নয়। এছাড়া ফ্লুয়িড পূর্ণ থাকতে হবে। ইঞ্জিন চালু থাকা অবস্থায় এটা পরীক্ষা করুন।

১৩. টাইমিং বেল্ট

টাইমিং বেল্ট ইঞ্জিনের খুব গুরুত্বপূর্ণ বেল্ট। এটা পাল্টে ফেলাও অনেক ব্যয়বহুল। যদি স্টিলের টাইমিং চেইন হয় তবে চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। সাধারণত, একটি টাইমিং বেল্ট ৬০ হাজার থেকে এক লাখ মাইল চলে।

১৪. টায়ার পরখ

টায়ার যথাযথভাবে লাগানো আছে কিনা, তা দেখনু। ঠিকমতো লাগানো না থাকলে বুঝতে হবে, ত্রুটিপূর্ণ স্টিয়ারিং আর ক্ষতিগ্রস্থ কাঠামো বা ফ্রেমের কারণে এমনটা হয়েছে। স্পেয়ার টায়ার থাকলে তাও যাচাই করতে হবে, অন্য টায়ারের সাথে তা মিলে কিনা। কিনা। যদি মনে করেন, কোন টায়ার স্পেয়ার তবে তার ধার অন্য টায়ারের সাথে তুলনা করুন, দেখুন পুরোপুরি স্পেয়ার কিনা।

১৫. ক্ষতিগ্রস্থ ফ্রেমের গাড়ি কিনতে মানা

স্যাডেল (যা সামনের ফেন্ডারগুলো যুক্ত করে এবং রেডিয়েটরের উপরটা ধরে রাখে) দেখুন ঠিক আছে কিনা। এটা কোনোভাবেই যাতে ঝালাই করা না হয়। দাগ দেখে বুঝে নিন, ফেন্ডারগুলো পাল্টে ফেলা হয়েছে বা নতুন করে লাগানো হয়েছে কোনো দুর্ঘটনার পর। দরজায় দেখুন কোন ঝালাইয়ের চিহ্ন আছে কিনা।

১৬. গতি পরীক্ষা

ঘন্টায় ৪৫, ৫৫, ৬৫ ও ৭৫ কিলোমিটার বেগে গাড়ি চালান। দেখুন, এমন ছোট স্পীড ব্যবধানে কোনো অস্বাভাবিকতা ধরা পড়ে কিনা। যদি ঝাঁকুনি অনুভূত হয়, তবে বুঝতে হবে সামনের চাকায় কিংবা অন্য কোথাও কোনো কারিগরি ত্রæটি আছে। যা সারাতে আপনাকে বেশ টাকা খরচ করতে হবে।

১৭. ৯০ ডিগ্রিতে গাড়ি ঘুরান

কম স্পীডে গাড়ি ৯০ ডিগ্রি টার্ন করান। দেখুন কোনো অস্বাভাবিক বা ঘষা লাগার শব্দ পাওয়া যায় কিনা। এমনটা হলে গাড়ি সমস্যাই আছে।

১৮. অন্যান্য কার্যক্রম

বন্ধ থাকা অবস্থায় গাড়ির অন্যান্য কার্যক্রম, যেমন- বাতি, ভেঁপু ইত্যাদি ঠিক আছে কিনা, পরখ করুন।

১৯. দেখুন তলানি

গাড়ির নিচের অংশটাও যতোটা সম্ভব দেখে নিতে হবে। এক্সহস্ট সিস্টেম, নিচের বডি কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্থ কিনা বা অযাচিত ছিদ্র আছে কিনা, দেখতে হবে।

২০. অভিজ্ঞজনের পরামর্শ নিন

আপনার নিজের উপর যদি আত্মবিশ্বাস কম থাকে বা ব্যাপারগুলো না বুঝে উঠতে পারেন, তবে আপনার কোনো অভিজ্ঞ বন্ধুর সাহায্য নিতে পারেন। এর বাইওে, অভিজ্ঞ কারিগর দিয়ে গাড়িটি দেখিয়ে নিতে পারেন। দুটি সারাইখানায় দেখালে আপনি তুলনামুলক অবস্থা জানতে পারবেন। এতে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহজ হবে।

২১. দরদাম করে নিন

পুরনো জিনিস মানেই দর কষাকষির পণ্য। তাই বর্তমান বাজারদর জেনে, সেভাবে দর কষাকষি করবেন। যদি এমন হয় আপনার ধারণা ও বিক্রেতার দাম কাছাকাছি, তবে বলে দেখতে পারেন গাড়ির সবকিছু পছন্দ হয়েছে, কিš‘ রং পছন্দ হয়নি। দেখুন, বিক্রেতা আপনার জন্য কিছু করে কিনা।

# টিএমএইচ/২৫-০৮-২০১৯/বিবি

ক্যাটেগরী: গাড়িবাড়ি

ট্যাগ: গাড়িবাড়ি

গাড়িবাড়ি ডেস্ক, বিবি রবি, আগষ্ট ২৫, ২০১৯ ৮:০২ পূর্বাহ্ন

Comments (Total 0)