বকুল তলায় নবান্ন উৎসব

বকুল তলায় নবান্ন উৎসব

আজ পয়লা অগ্রহায়ণ। গ্রামবাংলার মাঠে মাঠে সোনালি ধান দুলছে। সেই ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত কৃষক। নতুন ধানে নবান্ন উৎসবকে ঘিরে কৃষকের চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক। 

এ বছর বাংলা দিনপঞ্জি বদলে গেছে। চলতি ১৪২৬ বঙ্গাব্দে প্রথমবারের মতো আশ্বিন মাসের গণনা শুরু হয় ৩১ দিন হিসাবে। বাংলা একাডেমি দীর্ঘদিনের চেষ্টায় বাংলা বর্ষপঞ্জির এই সংস্কার করেছে। জাতির ইতিহাসের গৌরবময় দিনগুলো বাংলা ও গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জিতে অভিন্ন তারিখে সমন্বয় করতেই বাংলা বর্ষপঞ্জিতে এই সংস্কার আনা হয়েছে।

 প্রতি বছরের মতো এবারেও জাতীয় নবান্ন উৎসব হল। জাতীয় নবান্নোৎসব উদ্‌যাপন পর্ষদ এই উৎসবের আয়োজন করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায়।

তখন পাখপাখালির ঘুম ভেঙেছিল বটে, তবে শিশিরভেজা গাছপালার পাতায় রোদের ছোঁয়া লাগেনি। চারুকলার বকুলতলায় এমন সময় বেজে উঠেছিল বাঁশির সুর, ঢোলের বাদ্যি। আর এক, দুই করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় উপস্থিত হতে শুরু করলেন শিল্পী ও শ্রোতারা।

জাতীয় নবান্ন উৎসবের শুরুটা এভাবেই হয়েছিল আজ । জাতীয় নবান্ন উৎসব উদ্‌যাপন পর্ষদের আয়োজনে এই নিয়ে ২১ বারের মতো অনুষ্ঠিত হলো উৎসব। এখানে যান্ত্রিক নগরজীবনে ঋতুভিত্তিক যে উৎসবগুলো আসে, তাতে গ্রামীণ আবহ রেখে বৈচিত্র্য অন্বেষণের আহ্বান এল নবান্ন উৎসবে। নৃত্য-গীত ও বাদ্যে হেমন্তবন্দনা যেমন হলো, তেমনিভাবে কথনে-বচনে ধ্বনিত হলো কৃষকের আর্তনাদের কথাও।

সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে যন্ত্রসংগীতের মধ্য দিয়ে মধ্য দিয়ে নবান্ন উৎসব-১৪২৬ শুরু হয়। এ উৎসবে সকালে একক গান পরিবেশন করেন সালমা আকবর, শারমিন সাথী, বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, তানভীর সজীব, মাহজাবিন রহমান, জয়ন্ত। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করবেন নৃত্যজন, নটরাজ, স্পন্দন, ধৃতি নর্তনালয় ও নন্দনকলা কেন্দ্র। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন বেলায়েত হোসেন ও নায়লা তারাননুম চৌধুরী। দলীয় সংগীত পরিবেশন করবেন উদীচী, বহ্নিশিখা, সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি ওয়াইজঘাট, সুরতীর্থর শিল্পীরা।

সকালে নবান্ন কথন পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নাট্যজন ফেরদৌসী মজুমদার। বক্তব্য দেন নবান্নোৎসব উৎসব পর্ষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নাঈম হাসান।

অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন নবান্নোৎসব পর্ষদের সভাপতি নৃত্যশিল্পী লায়লা হাসান।

সকাল সাড়ে ৯টায় চারুকলা অনুষদ বকুলতলা থেকে ঢাক-ঢোল বাজিয়ে নবান্ন শোভাযাত্রা বের হবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি ঘুরে শোভাযাত্রা আবার অনুষ্ঠানস্থলে ফিরে আসে।

দ্বিতীয় পর্ব শুরু হয় বিকেলে। দলীয় সংগীতে অংশগ্রহণ করবে সুরবিহার (শিশু-কিশোর), স্বপ্নবীনা (শিশু-কিশোর), মন্দিরা (শিশু-কিশোর), প্রার্থনা (শিশু-কিশোর), ঢাকা স্বরকল্পন (শিশু-কিশোর), কিশলয় কচি-কাঁচার মেলা দনিয়া, সমস্বর, স্ব-ভূমি লেখক শিল্পীকেন্দ্র, পঞ্চভাস্কর, দৃষ্টি, ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী, সংস্কৃতি মঞ্চ, পঞ্চায়েত। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করেন বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস্, নান্দনিক নৃত্য সম্প্রদায়, দিব্য, নৃত্যালোক, বকুল নৃত্যালয়, নৃত্য মঞ্চ, স্বপ্ন বিকাশ কলা কেন্দ্র।

একক আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করেন ইকবাল খোরশেদ, রফিকুল ইসলাম, রেজিনা ওয়ালী, শাহাদাৎ হোসেন, ফয়জুল আলম, মাসকুর এ সাত্তার, মাহমুদা আখতার, তামান্না তিথি, মাসুম আজিজুল, মাহমুদুজ্জামান মাসুদ, নজরুল কবির, বিপ্লব রায়হান।

একক গান শোনান শ্যামল পাল, চম্পা বণিক, সর্দার রহমত উল্লাহ, খগেন্দ্রনাথ সরকার, আবু বকর সিদ্দিক, অনিমা মুক্তি গোমেজ, মহাদেব ঘোষ, তামান্না নিগার, আব্দুল হালিম, সঞ্জয় কবিরাজ, অনিকেত আচার্য, আবিদা রহমান, সমর বডুয়া, আরিফ রহমান, সুরাইয়া পারভীন, রবিউল, রত্না সরকার, শ্রাবণী গুহ রায়, মারুফ হোসেন, দেবু প্রসাদ দা, নবনীতা জাইদ চৌধুরী, দেবু প্রসাদ, ফেরদৌসী কাকলি, মিরা মন্ডল, এস. এম মেজবাউদ্দিন, আতাউর রহমান ও আসিফ ইকবাল।

দলীয় আবৃত্তিতে অংশগ্রহণ করেন মুক্তধারা সংস্কৃতি ও আবত্তি চর্চা কেন্দ্র।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাড়ছিল দর্শকদের সংখ্যা। ঝলমলে রোদ ছড়িয়ে পড়তে পড়তে বকুল এবং আরও অনেক গাছের তলা উৎসবে শামিল নাগরিকদের জটলায় জমজমাট। মঞ্চে শিল্পীরা কখনো একক, কখনো দলীয় গান শোনালেন। কখনো কখনো গানের সঙ্গে সমবেত নৃত্য। এভাবেই শেষ হয় প্রাণের নবান্ন উৎসব।

#এসএস/বিবি-১৬-১১-২০১৯

ক্যাটেগরী: শিল্পকলা

ট্যাগ: শিল্পকলা

শিল্পকলা ডেস্ক, বিবি শনি, নভেম্বর ১৬, ২০১৯ ৮:২২ পূর্বাহ্ন

Comments (Total 0)