নাগালের বাইরে আদা-রসুনের দাম

নাগালের বাইরে আদা-রসুনের দাম

প্রতিটি নিত্য পণ্যের দাম দিনকে দিন বেড়েই চলেছে । চাল, ডাল, তেল, চিনি, পেঁয়াজের পর এবার আবার বাড়তে শুরু করেছে আদা ও রসুনের দাম।

৭ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মিরপুর, শেওড়াপাড়া, কাজীপাড়া, তালতলা, আগারগাঁও, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর ও কারওয়ান বাজার ঘুরে ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারে নতুন করে বেড়েছে আদা ও রসুনের দাম। অবশ্যই দাম বাড়ার পেছনে চীনের করোনা ভাইরাসকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

নতুন বছরের শুরু থেকেই উত্তাল বাজার। প্রায় সব ধরনের পণ্যে বেড়েই চলেছে দাম। নতুন বছরে বাসা ভাড়ার কথাটা নাই বাদই দিলাম। দাম কমার দিক দিয়ে শুধু একটু স্বাভাবিক পর্যায়ে রয়েছে সবজি ও মুরগির দাম। যে হারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে সে হারে কতটাই বা বেড়েছে সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতা।

আজ পুরান ঢাকার শ্যামবাজারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাইকারি বাজারে কয়েকদিনের ব্যবধানে রসুনের দাম বেড়েছে প্রায় ৬০ টাকা। আর আদার দাম বেড়েছে ২০ থেকে ২৫ টাকা। চীনের ভাইরাস আরো স্থায়ী হলে এই দাম আরো বাড়তে পারে বলে ব্যবসায়ীদের ধারণা।

শ্যামবাজারের ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম জানান, কিছুদিনের ব্যবধানে রসুনের দাম বেড়েছে ৬০ টাকা। যে রসুন আমরা ১২০ টাকা বিক্রি করেছি তা এখন ১৮০ টাকায় বিক্রি করছি। আর যে রসুন আমরা এর আগে ১১০ থেকে ১১২ টাকায় বিক্রি করেছি তা এখন ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায় বিক্রি করছি।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের আদা ও রসুনের দাম অনেকটা চীনের ওপর নির্ভর করে। দেশের বেশিরভাগ আদা-রসুন আমদানি হয় চীন থেকে। চীনের করোনা ভাইরাসের কারণে কোন পণ্য আসছে না। এ কারণেই আদা-রসুনের দাম বেড়েছে। এই ভাইরাস আরো দীর্ঘায়িত হলে আদা-রসুনের বাজার আরো বাড়তে পারে বলেও জানান তিনি।

এদিকে চীন থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের দামও কিছুটা বেড়েছে। তবে গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, চীনের পেঁয়াজের প্রতি আমার দেশের মানুষের তেমন একটা আগ্রহ নেই। তাই চীনের করোনা ভাইরাসের কারণে পেঁয়াজের বাজারে কোন প্রভাব পড়বে না।

রাজধানীর বাজারগুলোতে দেখা যায়, বাজারে প্রতি কেজি রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২২০ টাকায়। আর বাজারে আদা বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। তারপরও বাজারে দেশি রসুনের চাহিদা বেশি তাই একটু দামও বেশি চীনা রসুনের থেকে। কিছু কিছু জায়গায় রসুন ১৭০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। আর খুচরা বাজারে আদা ১৮০ টাকার কাছাকাছি দামে বিক্রি হচ্ছে। এর সাথে থাই আদার দামও কিছুটা বেড়েছে।

এছাড়া বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকায়। আমদানি করা ছোট সাইজের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকায়। আর তুরস্ক ও মিশর থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি।

এদিকে কিছুদিন ধরে ঊর্ধ্বমুখী চালের বাজার। এক মাসের ব্যবধানে চিকন চালের দাম বেড়েছে প্রায় ১০ থেকে ১২ টাকা। ভালো মানের চিকন চাল কিনতে গেলে গুণতে হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। যে মিনিকেট চাল এর আগে বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৩ টাকা। তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকার কাছাকাছি। এছাড়া বাজারে আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৩৮ থেকে ৮০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, নতুন বোরো ধান না উঠা পর্যন্ত এই দাম আর কমার সম্ভাবনা নেই।

এছাড়া নতুন বছরে বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। প্রতি লিটার বোতল সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১১৫ টাকায়। খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। আর পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকা। আর দাম বেড়ে মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৭০ থেকে ১৩০ টাকায়। এছাড়া খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ টাকা কেজি।

সপ্তাহের ব্যবধানে তেমন একটা বাড়েনি শাকসবজির দাম। প্রায় প্রতিটা সবজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। বাজারে মান ভেদে ফুলকপি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি বেগুন ৫০ থেকে ৬০ টাকা। গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকা। সিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা। মুলা ২০ থেকে ২৫ টাকা। টমেটো ৪০ থেকে ৫০ টাকা। আর করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজি।

এদিকে মাছের বাজারেও কিছুটা দাম বেড়েছে। বাজারে প্রতি কেজি রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৩২০ টাকায়। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। একইভাবে দাম বেড়েছে কাতল মাছের দাম। এখানেও সপ্তাহের ব্যবধানে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে। তবে কিছুটা কমেছে ইলিশ মাছের দাম।

এছাড়া বাজারে কেজি প্রতি নদীর আইড় ৮০০ টাকা, বোয়াল ৫০০ টাকা, কোরাল ৪৮০ টাকা, পাবদা ৫৫০ টাকা, টেংরা ৬০০ টাকা, চিংড়ি সাইজ ভেদে ৪০০-৪৫০ টাকা, পুঁটি ২৮০ টাকা, দেশি টেংরা ৪০০ টাকা, মেনি ৪০০ টাকা, নওলা ৩৮০ টাকা, বড় শিং ৪৫০ টাকা, মাগুর ৫০০ টাকা, টাকি মাছ ২৮০ টাকা এবং এক কেজির শোল সাইজ ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ডিমের বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি ডজন ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা। হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে প্রতি ডজন ১৫০ টাকায়। আর দেশি মুরগির ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।

মাংসের বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়। পাকিস্তানি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকা। এছাড়া গরুর মাংস ৫৫০ টাকা এবং খাসির মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

#এসএস/বিবি/০৮-০২-২০২০

ক্যাটেগরী: অর্থনীতি

ট্যাগ: অর্থনীতি ব্যবসা

অর্থনীতি ডেস্ক, বিবি শুক্র, ফেব্রুয়ারী ৭, ২০২০ ৮:১৭ অপরাহ্ন

Comments (Total 0)