পুলিশ শতাধিক বিক্ষোভকারীকে আটকে রেখেছে। আর এটি করা হয়েছে হংকংয়ের অন্যতম প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে । আন্দোলন কার্যক্রমে প্রায় দুই দিনের স্থবিরতার পর বিক্ষোভকারীরা ১৯ নভেম্বর পর্যটন এলাকাগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতি ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কড়া নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খবর রয়টার্সের।
হংকংয়ের পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বেপরোয়া বিক্ষোভকারীরা পুলিশের জলকামান ও সাঁজোয়া যানের সামনে সারা দিন লড়াই করেন। সংঘর্ষ রাত অবধি চলে।
কালো পোশাক পরা বিক্ষোভকারীরা ভোর হওয়ার আগ পর্যন্ত ক্যাম্পাস থেকে দূরে নাথান রোডের পথে পথে ঘুরে বেড়ান। তাঁদের অনেকের কাছে পেট্রলবোমা ছিল। তিন তরুণী শহরের ব্যস্ততম পর্যটন এলাকাগুলোর একটিতে পেট্রলবোমার একটি ট্রলি ফেলে যান।
অন্য আন্দোলনকারীরা ইটের টুকরা, স্ল্যাব ফেলে সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় কেউ কেউ স্লোগান দেন, ‘চলছে আমাদের বিপ্লব, হংকংকে মুক্তি দিন।’
সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা পুলিশের এক কর্মকর্তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছেন। বিক্ষোভকারীদের বেশির ভাগই শিক্ষার্থী। তাঁরা বাড়িতে তৈরি গুলতি ছুড়ে, পেট্রলবোমা ও ইট ব্যবহার করে পুলিশকে সমুচিত জবাব দিয়েছেন।
পাঁচ মাসের বেশি সময় ধরে চীনশাসিত শহরটিতে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলছে। সোমবারের এক বিবৃতিতে পুলিশ দাঙ্গাকারীরা মারণাস্ত্র ব্যবহার বন্ধ না করলে সরাসরি গুলি ছোড়ার হুমকি দিয়েছে।
এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছেন। জলকামান থেকে নিক্ষেপিত গরম পানির সঙ্গে মেশানো রাসায়নিকে অনেকের শরীরের বিভিন্ন স্থান পুড়ে গেছে।
পলিটেকনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষোভকারীরা হংকংয়ের অন্যতম প্রধান মহাসড়ক ক্রস হারবার টানেল অবরোধ করেছেন। সড়কটি হংকংকে কাউলুন উপদ্বীপের সঙ্গে যুক্ত করেছে। কর্তৃপক্ষ আটকে থাকা নেতা-কর্মীদের কঠোর প্রতিরোধের মুখোমুখি হয়ে গত সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় এই সড়কটি পুনরুদ্ধার করতে মরিয়া হয়েছিল।
ভোরবেলা পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয়ের অবরুদ্ধ সামনের গেটের কাছে পৌঁছালে বিক্ষোভকারীরা গেট ও পথচারী পারাপারের একটি ব্রিজে অগ্নিসংযোগ করে ক্যাম্পাসে ফিরে যান।
সোমবার সকালে ক্যাম্পাসজুড়ে অনিশ্চয়তায় ঘেরা নানা কার্যক্রম দেখা যায়। প্রতিবাদকারীদের কেউ কেউ বেরিয়ে যাওয়ার উপায় নিয়ে আলোচনা করেছেন। অন্যদিকে কেউ কেউ কমপ্লেক্সের আশপাশে পেট্রলবোমার বাক্স বসিয়ে অবরোধ আরও শক্তিশালী করেন।
দাঙ্গা পুলিশের হাতে আটকা পড়া শিক্ষার্থীদের উদ্ধারে সিম শ সুই, জর্ডান, ইয়াও মা তেয়সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশের বিভিন্ন এলাকার হাজার হাজার বাসিন্দা এবং বিক্ষোভকারীরা দ্রুত ছুটে আসেন।
ক্লান্তিতে অবসন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক তরুণ কর্মী বলেন, ‘আমরা যদি কেবল ভোর পর্যন্ত পুলিশকে আটকে রাখতে পারি, তবে আরও ভালো কিছু ঘটতে পারে।’
হংকংয়ের এই আন্দোলন ২০১২ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সি বলেছেন, হংকং সরকার এই সংকট সমাধান করতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী।
সাবেক ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে ১৯৯৭ সালে চীনা শাসনে ফিরে আসার পর থেকে স্বায়ত্তশাসিত মর্যাদা অর্জনকারী হংকংয়ের নাগরিকেরা তাদের পরিণতি নিয়ে ক্ষুব্ধ।
প্রকৌশলী জোরিস বলেন, ‘বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। যতটা প্রয়োজন ছিল, ততটা লড়াই আমরা করতে পারিনি। আমি জেল খাটতে প্রস্তুত হয়েই এসেছি। আমরা হংকংয়ের জন্য লড়াই করছি।’
#এসএস/বিবি/১৯-১১-২০১৯
Comments (Total 0)