সুখী বাংলাদেশ চাই

সুখী বাংলাদেশ চাই

ছোটবেলা থেকেই প্রচুর বই পড়তাম, এখনও পড়ি। বই পড়া আমার নেশার মতো। এটা আমাকে স্থির হতে সহায়তা করেছে। প্রচুর পেপারও পড়তাম একটা সময়।

রকমারির নামের সঙ্গে লং টার্ম মিশনের মিল আছে। আমরা একসময় বিভিন্ন পণ্য নিয়ে কাজ করব। তবে শুরুটা বই নিয়ে করেছি। রকমারি থেকে যে কেউ বাংলাদেশের যে কোনও প্রান্তে বসে যতগুলো খুশি বই কিনতে পারে মাত্র ৫০ টাকা সার্ভিস চার্জে।

আমরাই বাংলাদেশে ক্যাশ অন ডেলিভারি মানে পণ্য হাতে পেয়ে টাকা পরিশোধের মডেল চালু করি। শুরুতে এ নিয়ে বেশ হাসাহাসি হয়েছিল। তবে আপনি আপনার গ্রাহককে বিশ্বাস না করলে গ্রাহক কেন আপনাকে বিশ্বাস করবে?

করণীয় হচ্ছে, কয়েকটা ভালো উদাহরণ তৈরি করা। আমরা হুজুগে জাতি, কেউ একজন করলে তা ধীরে ধীরে সবাই করতে শুরু করবে। এটার খুব শক্ত উদাহরণ আমাদের সামনেই আছে এখন, বর্তমান ই-কমার্সের জোয়ার।

আসলে একটা শিল্প গড়ে ওঠার জন্য একটা পারিপার্শিকতার দরকার হয়। যা এতোদিন ছিল না এখন আস্তে আস্তে তৈরি হচ্ছে।

এছাড়া এক ধরণের পদ্ধতিগত ভুল আছে। যেমন, আমাদের দেশে আইপিএস ও ইউপিএস শিল্প ধীরে ধীরে কুটির শিল্পের মতো এগোচ্ছিল। পরে কী হলো, আইসিটিকে ব্যাকআপ দেওয়ার জন্য সরকার আইপিএস, ইউপিএসের ওপর থেকে ট্যাক্স কমিয়ে দিল। ফলে চীনা পণ্য বাজার দখল করে নিল। চাইনিজটা সস্তা হয়ে যাওয়াতে লোকাল ফিনিশিং-এর পণ্যের বিক্রি কমে গেল। আমাদের কুটির শিল্পটা ধ্বংস হয়ে গেল।

তবুও আমি এটাকে সমস্যা মনে করি না। আসলে সাহস ও যোগ্য মানুষের অভাব রয়েছে। কেউ একজনকে স্টার্ট করতে হবে। কারণ একজন আমেরিকানের চাইতে আমাদের বুদ্ধিমত্তা অনেক বেশি। আমাদের যে শিক্ষা ব্যবস্থা তার মধ্যেও যে এতো ভালো কিছু হচ্ছে কারণ আমাদের ক্রাইসিস রয়েছে। যেমন, আমেরিকাতে একজন মানুষকে গাড়ি চালাতে হলে কী করতে হয়? সবুজ বাতি, লাল বাতি শিখতে হয়, সবুজ বাতি দেখলে চলে যেতে হয়, লাল বাতিতে থামতে হয়।

আর আমাদের দেশে প্রতি মুহূর্তে একজন ড্রাইভারকে শ’খানেক ক্যালকুলেশন করতে হয়। আমরা ক্রাইসিসের মধ্যে দিয়ে বড় হই বলে আমাদের অনেক বেশি যোগ্যতা তৈরি হয়। এর সঙ্গে শিক্ষা পদ্ধতিটা আর একটু ভালো হলেই আমরা যে কোথায় চলে যেতাম আমরা নিজেরাই জানি না।

আসলে ওভারঅল বিজ্ঞানের প্রতি আগ্রহ কমে গেছে। কারণটা হচ্ছে, মানুষ এখন শর্টটার্ম চিন্তা বেশি করে। তার ওপর আর্টস, কমার্সের চাকরি এখন অনেক চাকচিক্যময়।

সরাসরি রিসার্চ করা হয় কম। নিজ হাতে কোড লেখা, সার্কিট ডিজাইন এসব অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। তবে যখন আমাদের কিছু নিয়ে গবেষণা হয় আর অ্যালগোরিদমে কোনও সমস্যা দেওয়া যায় তখন সেটাতে অংশ নিই।

‘দেশে বিরাজমান বিশাল ডিজিটাল বৈষম্য’ টার্মটা নিয়ে আমার আপত্তি আছে। আসলে আমাদের যে ধরণের উদ্যোগ তার মধ্যে এটা পড়ে না। আমি এসব কথা প্রমোট করতে রাজি না। নেগেটিভ কথা বলা মানে মানুষকে বিপথে চালনা করা।

গ্রামের মানুষকে এটা বললে তারা ভাববে, আমাদের তো এই সুবিধা নেই, তাই আমার এগোনোর আর কোনও অপশন নেই। যা আছে এটা নিয়েই সুখী। এটাই হওয়া উচিত, মাইন্ড সেট। যা আছে তা থেকেই ভালো কিছু বের করে আনতে হবে। আমরা যখন গেট-এ-কোডার'র কাজ করেছি তখন ইন্টারনেটের গতি কত ছিল? এটাকে হাইলাইট করার কোনও কারণ নেই। এতে মানুষের মন ভেঙে যেতে পারে।

কেমন বাংলাদেশ চাই- এককথায় বললে সুখী বাংলাদেশ। আমার কাছে সফলতার মানে হচ্ছে সুখী থাকা। ব্যক্তিগতভাবে সুখের জন্য প্রচুর ধনী হওয়া বা ক্ষমতা থাকা জরুরি নয়।

রাষ্ট্রীয়ভাবেও সুখী হতে গেলে সমৃদ্ধ বা সম্পদশালী হলে তা বাড়তি মাত্রা যোগ করে। তবে সমৃদ্ধ হওয়া অত্যাবশ্যকীয় নাও হতে পারে। আসলে প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের সামনে যারা আছে বা যাদের আমরা মডেল হিসেবে নিচ্ছি সেখানে লোকজন শান্তিতে আছে কি না।

উন্নত বিশ্বে যে ঔষধটা সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয় সেটা ঘুমের ঔষধ। জনে জনে বাড়ি, গাড়ি, তাহলে ঘুমাতে পারে না কেন? আমাদের দেশে একজন রিকশাওয়ালা দেখবেন রিকশার মধ্যে কাত হয়ে সুন্দর ঘুমিয়ে পড়েছে। আমাদের মধ্যে যে বন্ধন আছে, মানুষ মানুষকে যেভাবে অনুভব করে সেটা ওখানে নেই।

সুখের বিষয় বলতে গেলে, বস্তু আপনাকে কখনওই সুখ দিতে পারবে না। আপনার যা’ই থাক না কেন। সুখ শুধুমাত্র একটা ওয়েতেই হয়। সেটা হচ্ছে ঠিকভাবে চিন্তা করতে শেখা।

প্রতিযোগী মনোভাব কমাতে হবে। যেমন, মিরপুরের দুয়ারিপাড়া বস্তিতে আমাদের একটা স্কুল আছে। ওই স্কুলে আমরা একে একে পরীক্ষা তুলে দিচ্ছি, বিভিন্ন রকম প্রতিযোগিতা বন্ধ করে বাচ্চাদের একে অন্যকে সহযোগিতা যাতে করতে শেখে, সেটা শেখানোর চেষ্টা করছি। সহজ কথায় হলো, সুখী হতে হলে চিন্তা করার প্রক্রিয়াটা পাল্টাতে হবে।

মাহমুদুল হাসান সোহাগ: উদ্যোক্তা ও তথ্যপ্রযুক্তিবিদ

ক্যাটেগরী: মত

ট্যাগ: মত

মাহমুদুল হাসান সোহাগ সোম, আগষ্ট ১৯, ২০১৯ ২:১৫ পূর্বাহ্ন

Comments (Total 0)