ভাসানচরের পথে রোহিঙ্গারা…

ভাসানচরের পথে রোহিঙ্গারা…

আর উখিয়ায় নয়। কক্সবাজারের অপরিকল্পিত বসতি থেকে নোয়াখালীর দিকে যাত্রা করেছে রোহিঙ্গাদের প্রথম দল। এভাবে শুরু হলো ভাসানচরে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর প্রক্রিয়া। কক্সবাজারে উখিয়া কলেজ মাঠের অস্থায়ী ট্রানজিট পয়েন্ট থেকে ভাসানচরের উদ্দেশ্যে রওনা করেছে রোহিঙ্গাদের প্রথম দলটি। ৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার সকালে প্রশাসনের তদারকে ১০ বাস ছেড়ে যায়।

টেকনাফ ও উখিয়ার আশ্রয় শিবিরের ৩৪টি ক্যাম্প থেকে অন্তত ৫০০ পরিবারের প্রায় ৬০০ রোহিঙ্গা যাচ্ছেন এ যাত্রায়। মূলত যারা স্বেচ্ছায় যেতে চাইচ্ছেন তাদেরকেই নেয়া হচ্ছে ভাসানচরে। চট্রগ্রাম থেকে ভাসানচরে নেয়ার জন্য প্রস্তুত রয়েছে নৌ বাহিনীর ১৪টি জাহাজ। কক্সবাজার থেকে ভাসানচরে স্থানান্তরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করছে র‍্যাব-৭ ও র‍্যাব-১৫।

এদিকে চরে রোহিঙ্গাদের প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী মজুত করা হয়েছে। এর আগে রোহিঙ্গাদের স্থানান্তর কার্যক্রম ঘিরে বঙ্গোপসাগরের এই দ্বীপ ঘুরে আসে ২২টি এনজিওর প্রতিনিধি দল। ভাসানচরে যেতে ইচ্ছুক রোহিঙ্গাদের জন্য সেখানে মজুত করা হয়েছে ৬৬ টন খাদ্যসামগ্রী। কক্সবাজারের আশ্রয় শিবির ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছেন এমন এক লাখ রোহিঙ্গাকে স্থানান্তরের ভাসানচরের অবকাঠামো তৈরি করে সরকার।

 

এই চর কোথায়:

ভাসানচর মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা বাংলাদেশের একটি ছোট্ট দ্বীপ। এটি নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলার চর ঈশ্বর ইউনিয়ন এর অন্তর্গত। মায়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের আশ্রয় প্রদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার ভাসানচরে তাদের নিরাপদ আবাসনের ব্যবস্থা করতে যাচ্ছে।

 

রোহিঙ্গা আশ্রয়ন:

২০১৭ সালের আগস্ট থেকে ব্যাপক হারে মায়ানমারের নাগরিক রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসতে শুরু করে। শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্র জানায়, ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। এ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে অবস্থানকারী রোহিঙ্গার সংখ্যা ১০ লাখ ৯৭ হাজার ৭৭১ জন। তাদের মধ্যে পুরুষের সংখ্যা হল ৪৮ শতাংশ এবং মহিলা ৫২ শতাংশ। এছাড়া শিশু রয়েছে ৫৫ শতাংশ, এতিম ৩৬ হাজার ৩৭৩ জন। এর মধ্যে ৭ হাজার ৭৭১ জন তাদের মা-বাবাকে হারিয়েছে।

এ অবস্থায় এক লাখ রোহিঙ্গার আশ্রয়ের জন্য আশ্রয়ণ-৩ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। এটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় দুই হাজার ৩১২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ধরা হয়। নোয়াখালীর হাতিয়া থানাধীন চরঈশ্বর ইউনিয়নের ভাসানচরে এক লাখ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ গড়ে তোলা এবং দ্বীপটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ করাই এ প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য।

এ প্রকল্পের আওতায় ভূমি উন্নয়ন ও শোর প্রোটেকশন ওয়ার্ক, বাঁধ নির্মাণ, এক লাখ তিন হাজার ২০০ জনের বসবাসের জন্য ১২০টি গুচ্ছগ্রামে এক হাজার ৪৪০টি ব্যারাক হাউস ও ১২০টি শেল্টার স্টেশন নির্মাণ, উপাসনালয় নির্মাণ, দ্বীপটির নিরাপত্তার জন্য নৌবাহিনীর অফিস ভবন ও বাসভবন, অভ্যন্তরীণ সড়ক, পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো, নলকূপ ও পানি সরবরাহ অবকাঠামো নির্মাণ, পেরিমিটার ফেন্সিং ও ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ, বিভিন্ন যানবাহন ক্রয়, গুদামঘর, জ্বালানি ট্যাঙ্ক, হেলিপ্যাড, চ্যানেল মার্কিং ও মুরিং বয়, বোট ল্যান্ডিং সাইট, মোবাইল টাওয়ার, রাডার স্টেশন, সিসি টিভি, সোলার প্যানেল, জেনারেটর ও বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন ইত্যাদি নির্মাণ করা হয়েছে।

#তমহ/বিবি/০৩-১২-২০২০

ক্যাটেগরী: জাতীয়

ট্যাগ: জাতীয়

জাতীয় ডেস্ক, বিবি বৃহঃ, ডিসেম্বর ৩, ২০২০ ৪:১৩ পূর্বাহ্ন

Comments (Total 0)