এগিয়ে বাংলাদেশ...

এগিয়ে বাংলাদেশ...

স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে সমৃদ্ধির সোপানে বাংলাদেশ। ৫১ বছরে মাথাপিছু আয়, গড় আয়ু, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার মতো অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে ভারত ও পাকিস্তানকে পেছনে ফেলেছে তলাবিহীন ঝুড়ির খেতাব পাওয়া এই ব-দ্বীপ। হচ্ছে নারীর ক্ষমতায়ন, কমেছে বৈদেশিক সাহায্য-নির্ভরতা। তবে চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে বৈষম্য ও সুশাসনের মতো বিষয়ে।

পাকিস্তানি শৃঙ্খল ভেঙে রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জন্ম বাংলাদেশের। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটিকে তলাবিহীন ঝুড়ি আখ্যা দেন তখনকার মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার। তার সেই দাম্ভিক উক্তিকে তুচ্ছ করে উন্নয়নের রোল মডেল আজ বাংলাদেশ। গত ১৫ বছরের ধারাবাহিক অগ্রগতিতে একজন বাংলাদেশির আয় পাকিস্তানি বা ভারতীয়ের চেয়ে বেশি।

২০২০ সালে প্রথমবারের মতো পারক্যাপিটা জিডিপিতে ভারতকে পেছনে ফেলে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২,৫৯১ ডলার, ভারত ১,৯৪৭ ডলার আর পাকিস্তান ১,৬৬৬ ডলার।

মাথাপিছু আয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পেছনে ফেলে পাকিস্তানকে। বিবিএসের হিসাবে গত অর্থবছরে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৯১ ডলার। যেখানে আইএমএফ- ওয়ার্ল্ড ব্যাংক ও রয়টার্সের হিসেবে ভারতের মাথাপিছু আয় ১,৯৪৭ ডলার এবং পাকিস্তানের ১,৬৬৬ ডলার।

গড় আয়ুতেও এগিয়ে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের গড় আয়ু ৭২.৬ বছর, ভারত ৬৭.৭ বছর আর পাকিস্তানের ৬৭.৩ বছর।

স্বাস্থ্য-শিক্ষাসহ নানা সামাজিক-অর্থনৈতিক খাতের সুফল মিলছে গড় আয়ুতে। ইউএনডিপির ২০২০ সালের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের মানুষের গড় আয়ু এখন ৭২ বছরের ওপরে। আর ভারত-পাকিস্তানে ৬৮ বছরের নিচে।

সামাজিক সূচকেও সাফল্য বেশি প্রতিবেশি দুই দেশের চেয়ে। বাংলাদেশের শ্রমশক্তিতে ৩৬ শতাংশ নারী। অন্যদিকে ভারতে তা সাড়ে ২০ ও পাকিস্তানে ২২ শতাংশ।

নবজাতক ও শিশুমৃত্যুর হার কমাতেও ভারত-পাকিস্তানের চেয়ে ভালো অবস্থানে বাংলাদেশ। ভারতে শিশুমৃত্যুর হার ৪, পাকিস্তানে ৭, তবে দেশে তা ৩ শতাংশ।

শিক্ষাতেও বাংলাদেশের মেয়েরা। ২৫ বছরের বেশি বয়সী নারীদের মধ্যে প্রায় ৪০ শতাংশ মাধ্যমিক পাস। অন্যদিকে ভারত ও পাকিস্তানে এ হার ২৭ শতাংশ।

নারীর ক্ষমতায়নের অন্যতম জায়গা জাতীয় সংসদ। বাংলাদেশে সংসদ সদস্যের প্রায় ২১ ভাগ নারী। ভারত ও পাকিস্তানে তা ১৩ ও ২০ শতাংশ।

১৯৭১ সালে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ ছিলো দক্ষিণ এশিয়ার দরিদ্র দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। এরপর বঙ্গবন্ধুর নেয়া নানা উদ্যোগে মাত্র সাড়ে ৩ বছরে মাথাপিছু আয় ৯৪ থেকে ২৭৮ ডলারে উন্নীত হয়। জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছাড়ায় ৯ শতাংশ।

পরের তিন দশক জিডিপি প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয়ে তেমন গতি দেখা না গেলেও গত একযুগের ধারাবাহিক উন্নয়নে এসেছে নতুন মাত্রা। উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়ে বাংলাদেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। গত ১৫ মার্চ উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় জাতিসংঘ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএসের তথ্য বলছে, স্বাধীনতার ৫১ বছরে এসে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ৫৯১ ডলার। আর দেশের মোট জাতীয় উৎপাদন বেড়ে হয়েছে ৪১৬ বিলিয়ন ডলার।

এছাড়া, করোনা মহামারির পরও দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ। তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ এখন ডিজিটাল দুনিয়াকে নেতৃত্ব দেয়ার সাহস দেখায়।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, স্বাধীনতার একান্ন বছরে বাংলাদেশ আর্থ-সামাজিক খাতে ব্যাপক উন্নতি করেছে। তবে, দুর্নীতি না থাকলে এই অর্জন আরো বহুগুণ বেশি হতো।তাই এখন চ্যালেঞ্জ দূর্নীতি দূর করে ধনী-দরিদ্র বৈষম্য দূর করা।

করোনা মহামারি আর ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধাবস্থার মতো আন্তর্জাতিক অস্থিরাবস্থায় যখন উন্নত দেশগুলোও হিমশিম খাচ্ছে পরিস্থিতি সামাল দিতে, তখন নানা বাধা মোকাবিলা করে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রা ধরে রেখেছে। ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেটে ৭ দশমিক ২ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য ধরেছে সরকার।

#তমহ/বিবি/২৭-০৩-২০২২

ক্যাটেগরী: অর্থনীতি

ট্যাগ: অর্থনীতি

অর্থনীতি ডেস্ক, বিবি শনি, মার্চ ২৬, ২০২২ ১:১৯ অপরাহ্ন

Comments (Total 0)