করোনা থেকে বাঁচতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা

করোনা থেকে বাঁচতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে কর্মকর্তাদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। হাঁচি, কাশি এবং অন্যান্যদের সংস্পর্শে না আসার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল শাখার কর্মকর্তাদের জোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে হাতের কাছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার রাখার পরামর্শ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

১৮ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে আয়োজিত এক বিশেষ সভায় এই নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন গভর্নর ফজলে কবির। এছাড়াও সভায় সকল ডিজি, নির্বাহী পরিচালক এবং মহাব্যবস্থাপক উপস্থিত ছিলেন। এ সময় করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা এবং সচেতনতা বিষয়ক একটি ভিডিও উপস্থাপন করা হয় সভায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম জানান, করোনা ভাইরাস বিশ্ব মহামারিতে পরিণত হয়েছে। এটা থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সকল কর্মকর্তাদের সতর্ক করা হয়েছে আজকের বৈঠকে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা, হাঁচি কাশি, জ্বর, সর্দির বিষয়ে সতর্ক থাকতে কড়া নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পুরাতন ব্যাংক নোটের বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, নতুন অথবা পুরাতন দুই ধরনের টাকার মাধ্যমেই করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে। সুতরাং পুরাতন নোট বাজার থেকে তুলে নেওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মূল কথা সকলকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন এবং সতর্ক থাকতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, চলতি বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত সর্বমোট ১২ লাখ ৯৭ হাজার ৫৫০ কোটি টাকার নোট ও কয়েন ছাপিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই নোটের মধ্যে জনগণের হাতে রয়েছে বিভিন্ন মূল্যমানের ১ লাখ ৫৮ হাজার ৯১৭ কোটি টাকার নোট ও কয়েন। অর্থনীতি সচল থাকার অন্যতম সূচক হচ্ছে টাকার হাতবদল। অর্থাৎ প্রতিনিয়ত হাতবদল হবে এটিই নোট ও কয়েনের মূল বৈশিষ্ট্য।

প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস গোটা বিশ্বে যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে, তা নিয়ে গভীর উদ্বেগে আছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। নোংরা ব্যাংক নোট থেকে করোনা ভাইরাস ছড়াতে পারে বলে সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেছে ডব্লিউএইচও। সংস্থাটি নোটের বিকল্প ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছে। নোটের বিকল্প বলতে ‘কন্টাক্টলেস পেমেন্ট’ এর কথা বলা হয়েছে। এছাড়া ব্যাংক নোট স্পর্শ করার পর লোকজনকে হাত ধোয়ার পরামর্শ দিয়েছে সংস্থাটি। কেননা, করোনা ভাইরাস সংক্রমণের উপাদান মানবদেহের মতো এসব নোটে কয়েক দিন পর্যন্ত থাকতে পারে।

যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অব ইংল্যান্ড’ও নোংরা নোট ‘ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস বহন করতে পারে’ বলে স্বীকার করেছে। করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে নিয়মিত হাত ধোয়া এবং দিনে দুবার স্মার্টফোনের স্ক্রিন পরিষ্কারের অনুরোধ করা হয়েছে তাদের পক্ষ থেকে। এ ছাড়া ব্যাংকের কার্ডগুলোও মুছে রাখার অনুরোধ জানিয়েছে ব্যাংক অব ইংল্যান্ড।

এর আগে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ব্যবহৃত ব্যাংক নোটের জীবাণুনাশের উদ্যোগ নেওয়া হয়। আক্রান্ত ব্যক্তিদের পাশাপাশি ব্যবহৃত ব্যাংক নোটগুলোও আলাদা করে রাখা হয়। জীবাণু নাশের জন্য অতি বেগুনি আলো বা উচ্চ তাপমাত্রা ব্যবহার করে ১৪ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণের পর এসব নোট ফের বাইরে ছাড়া হয়।

বিবিসির এক খবরে বলা হয়, ব্যাংক নোট বা টাকায় নানা ধরনের জীবাণুর উপস্থিতি শনাক্ত করা হয়েছে অনেক আগেই। ২০১৫ সালে দিল্লির ইনস্টিটিউট অব জিনোমিকস অ্যান্ড ইন্টিগ্রেটিভ বায়োলজির বিজ্ঞানীরা তাদের গবেষণায় অন্তত ৭৮ রকম বিপদজনক মাইক্রোবাগের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছিলেন। গত বছর আগস্টে বাংলাদেশি কাগুজে নোট ও ধাতব মুদ্রায় এক ধরনের ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি পেয়েছিলেন এক দল দেশি গবেষক। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, গবেষকদের গবেষণা মতে, টাকা বা ডলারের জাতীয় বা আন্তর্জাতিক বিনিময়ে করোনা ভাইরাস ছাড়াতে বা বিস্তার লাভ করতে পারে।

#এসকেএস/বিবি/১৮ ০৩ ২০২০


ব্যাংক ডেস্ক, বিবি
Published at: মঙ্গল, মার্চ ১৭, ২০২০ ১১:৪৫ অপরাহ্ন
Share with others:

Recent Posts

Recently published articles!