পপির সংসদের লোগো জালিয়াতি

পপির সংসদের লোগো জালিয়াতি

বিনা অনুমতিতে নিজের ভিজিটিং কার্ডে সংসদের লোগো ব্যবহার ও সংসদে ভবনে প্রবেশের পাস ফেরত না দেয়ার জন্য মনিরা সুলতানার (পপি) বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়েছে।

সিটি ব্যাংকের সাবেক কর্মকর্তা মনিরা সুলতানার (পপি) বিরুদ্ধে অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক সংসদীয় ককাশের চেয়ারম্যান ও নওগাঁ ৬ আসনের সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলমের নির্দেশ সাধারণ ডায়েরি করার নির্দেশ দেন।

ফলে তার ব্যক্তিগত সহকারী আশিক মল্লিক গত ১৫ সেপ্টেম্বর শেরেবাংলা নগর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন, যার নম্বর ৯৪২। সংসদ সচিবালয়ও বিষয়টি তদন্ত করছে।

আশিক মল্লিক এ বিষয়য়ে জানান, জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামের ছেলে বর্ষণ ইসলামের রেফারেন্সে চলতি বছরের এপ্রিলের দিকে মনিরা সুলতানা ককাশ চেয়ারম্যানের দপ্তরে কাজ শুরু করেন। তবে আচরণ সন্তোষজনক না হওয়ায় মাসখানেক পরেই তাকে না আসার জন্য বলা হয়।

আনুষ্ঠানিক কোন পদে নিয়োগ দেয়া না হলেও মনিরা সুলতানা নিজ উদ্যোগেই জাতীয় সংসদের লোগো ব্যবহার করে ককাশ চেয়ারম্যানের (ইসরাফিল আলম) সচিব পরিচয়ে ভিজিটিং কার্ড বানান এবং নিজস্ব কাজে তা ব্যবহার করেন। ভিজিটিং কার্ড বানানোর ক্ষেত্রে ককাশ চেয়ারম্যান এর দপ্তরের কারো অনুমতি না নেয়ায় বিষয়টি ইসরাফিল আলমের অগোচরে থেকে যায়।

মনিরা ও সিটি ব্যাংকের পাল্টাপাল্টি মামলার খবর গণমাধ্যমে আসলে ভিজিটিং কার্ডের অপব্যবহারের বিষয়টি নজরে আসায় জিডি করা হয়েছে। সংসদের লোগো ব্যবহার করে নিজের নামে বানানো কার্ড অপব্যবহার করায় মহান সংসদের সম্মান ক্ষুন্ন হচ্ছে উল্লেখ করে, উক্ত কার্ডের ব্যবহার ও বিতরণ বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পুলিশকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এছাড়া বারবার বলার পরেও সংসদে প্রবেশের পাস (অনুমতিপত্র) ফেরত দেননি মনিরা, যা জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছে। সংসদ সচিবালয়ের পক্ষ থেকেও বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।

জাতীয় সংসদ চত্বরের এমপি হোস্টেলের দুই নম্বর ব্লকে ককাশের কার্যক্রম পরিচালনা করেন ইসরাফিল আলম। অভিবাসীদের উন্নয়নে কাজ করে এমন বেসরকারি সংস্থা ও সংগঠনকে সাথে নিয়ে অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক সংসদীয় ককাশ এর কার্যক্রম পরিচালনা হয়ে থাকে। এমন একটি সংস্থা ওয়ারবি (ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ফর রাইটস অব বাংলাদেশি মাইগ্রেন্টস) ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন।

ককাশ অফিসের আগে ওয়ারবিতে কাজ করতেন বলে জানিয়েছিলেন মনিরা। তবে ওয়ারবি’র সাধারণ সম্পাদক ও প্রতিষ্ঠাতা ফারুক আহমেদের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, মনিরা কখনোই তার সংস্থায় কাজ করেননি। মহাখালীর ডিওএইচএস এর ওয়ারবি কার্যালয়ে মনিরাকে কয়েকবার আসতে দেখেছিলেন মাত্র।

চাকরি বিধি লংঘন করে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী এলাকায় চারটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন মনিরা। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে নিজ নামে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্সও নেন। তাতে, এল এম সি এন্টারপ্রাইজ নামে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কথা উল্লেখ আছে।

প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানার সূত্র ধরে দক্ষিণ বনশ্রীতে অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায় সেই ঠিকানায় রয়েছে লিগাসি ইন্টারন্যাশনাল প্রি স্কুল অ্যান্ড ডে কেয়ার সেন্টার। এল এম সি এন্টারপ্রাইজ ছিল কিনা না জানতে চাইলে বাড়ির মালিক জানান, শুরু থেকেই এখানে ডে কেয়ার চালিয়ে আসছিলেন মনিরা। তবে নিয়মিত ভাড়া পরিশোধ না করায় প্রতিষ্ঠানটিকে সরিয়ে দিয়েছেন তিনি।

মনিরার পরিচয় : ২০ আগস্ট গুলশান থানায় মনিরার বিরুদ্ধে মামলা করে সিটি ব্যাংক। তাতে বলা হয়, মনিরা সিটি ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হোসাইন এর পিএস হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার, বিশ্বাস ভঙ্গ করে ব্যাংকের সুনাম নষ্ট করা, চাঁদা দাবি এবং চাকরিতে পুনর্বহাল না করলে বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনকে হয়রানি ও সম্মানহানী করার হুমকি দিয়েছেন।

মনিরা সুলতানা সিটি ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে অ্যাসিসট্যান্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর যোগদানের পর থেকে ২০১৮ সালে ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত প্রাক্তন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পিএস হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ওই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর তাকে পে রোল বিভাগে বদলি করা হলে প্রায়ই অফিসে অনুপস্থিত থাকতেন।
মনিরার বিরুদ্ধে ওঠা নানা অভিযোগের কারণে নতুন ব্যবস্থাপনা পর্ষদ চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি অন্যত্র চাকরি খোঁজার পরামর্শ দেয়। এর পরেরদিন ২২ জানুয়ারি থেকে অফিসে আসেননি মনিরা। টানা অনুপস্থিতি ও ৩০ মার্চ পর্যন্ত সব ধরনের ছুটি শেষ হলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এপ্রিলে তাকে ডাক যোগে নোটিশ পাঠায়। এর কোন জবাব না দেয়ায় আইন অনুযায়ী চাকরি হারায় মনিরা।

১৭ জুলাই ব্যাংকের সমুদয় পাওনা চেয়ে চিঠি দেয়া হলেও জবাব দেননি মনিরা। গাড়ি ও ফ্ল্যাট কেনা, ক্রেডিট কার্ড ও ব্যক্তিগত ঋণসহ মনিরার কাছে ১ কোটি ৮ লাখ টাকা পাওনা আছে বলে দাবি করছে সিটি ব্যাংক।

চাকরি হারানোর পর যৌন হয়রানি, শ্লীলতাহানী ও হুমকির অভিযোগ এনে সিটি ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিনসহ তিন জনের বিরুদ্ধে গত ১৮ আগস্ট গুলশান থানায় মামলা করেন মনিরা সুলতানা। মামলা দুটি এখন তদন্ত পর্যায়ে আছে।


#এসএস/বিবি/২৪ ০৯ ২০১৯


রাজধানী ডেস্ক, বিবি
Published at: মঙ্গল, সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৯ ১২:০৩ অপরাহ্ন
Share with others:

Recent Posts

Recently published articles!