পাখিদের জন্য ‘বাসা ভাড়া’

পাখিদের জন্য ‘বাসা ভাড়া’

রাজশাহীর বাঘা উপজেলার খোর্দ্দবাউসা গ্রামের একটি আমবাগানে বাসা বেঁধে আছে শামুকখোল পাখি। কিন্তু পাখিগুলোর কারণে গাছে আম ধরছিল না। সম্প্রতি পাখিদের তাড়িয়ে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছিলেন বাগান মালিক ও ইজারাদার। বিষয়টি নজরে এলে পাখির বাসা ভাঙায় নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট।

এ অবস্থায় বাগান মালিক ও ইজারাদার যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেজন্য বছরে প্রায় তিন লাখ টাকায় গাছে পাখিদের ‘বাসার ভাড়া’ দেবে সরকার। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই টাকা বরাদ্দের জন্য গত মঙ্গলবার কৃষি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় এতে সম্মতিও দিয়েছে।

তবে মালিক রাজি হলে বাগানসহ জমিটি কিনে নেয়ারও পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয়। আর তা না হলে বার্ষিক চুক্তিতেই পরিশোধ করা হবে পাখির বাসার ভাড়া। বুধবার জেলা প্রশাসক হামিদুল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, আজই কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিবের সঙ্গে কথা হয়েছে। বাগানের জমিটা অধিগ্রহণ করে সেটা অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করা যায় কি না সেটা তিনি দেখতে বলেছেন।

জেলা প্রশাসক বলেন, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা ছিল, সে অনুযায়ী স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি কর্মকর্তারা বাগানটিতে সার্ভে করেছেন। তাতে বের হয়েছে যে বাগানে ৩৮টি গাছে পাখির বাসা রয়েছে। এতে বাগান মালিকের বছরে তিন লাখ ১৩ হাজার টাকা ক্ষতি হতে পারে। এই টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে। প্রাথমিকভাবে মন্ত্রণালয় এতে সম্মতির কথা জানিয়েছে।

খোর্দ্দবাউসা গ্রামের ওই বাগানটিতে গত চার বছর ধরে শামুকখোল পাখি এসে বাসা বাঁধে। তারা বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে আসে এবং বাসা বেঁধে বাচ্চা ফুটিয়ে শীত শুরু হলে ও তাদের বাচ্চা উড়তে শিখলে চলে যায়। এবারও সেখানে কয়েক লাখ পাখি বাচ্চা ফুটিয়েছে। বাচ্চা এখনও উড়তে শেখেনি।

এদিকে পাখি বাসা বাঁধায় গত দুই বছর পাখির জন্য বাগান পরিচর্যা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে আমের ফলন কম হয়েছে বলে অভিযোগ করেন বাগান ইজারা নেওয়া আম ব্যবসায়ী আতাউর রহমান। তিনি গত ৩০ অক্টোবর একটি গাছের কিছু বাসা ভেঙে দেন এবং সব বাসা ভেঙে গাছ খালি করতে চান। তবে স্থানীয় কিছু পাখিপ্রেমী মানুষ তাকে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে বলেন। একপর্যায়ে বিষয়টি নিয়ে বৈঠক বসে।

সেখানে ইজারাদার আতাউর রহমান ১৫ দিনের মধ্যে পাখি চলে না গেলে সেগুলো তাড়িয়ে দেবেন বলে তিনি ‘আল্টিমেটাম’ দেন। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে তা হাইকোর্টের নজরে এনে প্রয়োজনীয় আদেশ দেয়ার আরজি করেন একজন আইনজীবী। আদালত শুনানি শেষে ‘বাগানের পাখির বাসা কোনোভাবে ভাঙা যাবে না’ বলে আদেশ দেন। একই সঙ্গে বাগান মালিকের সম্ভাব্য ক্ষতি নিরূপণ করে, তা প্রতিবেদন আকারে জমা দিতে প্রশাসনকে নির্দেশ দেন। এর প্রেক্ষিতেই তিন লাখ ১৩ হাজার টাকার সাম্ভাব্য ক্ষতির হিসাব বের করেছে প্রশাসন।


ফিচার ডেস্ক, বিবি
Published at: বৃহঃ, নভেম্বর ২১, ২০১৯ ৯:২৬ অপরাহ্ন
Share with others:

Recent Posts

Recently published articles!