সাবাস সাকিব, অবাক বাংলাদেশ

সাবাস সাকিব, অবাক বাংলাদেশ

ওয়েলিংটনের মাটিতে ২০১৭ সালে সাকিব আল হাসানের মহাকাব্যিক সেই ইনিংস নিয়ে লেখাটি পড়তে পারেন আবার-

সাকিব আল হাসান যখন আছেন, তখন নেই কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য। কিশোর কবির বয়স এবার হতো ৯১। থাকলে কী বিখ্যাত কবিতাখানির নতুন সংস্করণ হতো এই লেখার শীর্ষ? এই মহাবিশ্বে তা আর জানার উপায় নেই। আমরা বরং সাকিবে ফিরে আসি। ওয়েলিংটনের মাটিতে যখন নব্বইয়ের ঘরে বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার, তখন ছোটপর্দায় ভীরু ভীরু চোখে আমার চাহনি। কিন্তু শতকের আগের স্নায়ুর চাপ-টাপ ওশেনিয়ার কনকনে হাওয়ায় উড়িয়ে দিলেন সাকিব। ব্যাটে একদিনের মেজাজ এনে লহমায় পৌঁছে গেলেন তিন অঙ্কের ঘরে। শতকের পর তো কথাই নেই। দৌঁড়ের উপরেই থাকলো রানের চাকা। তরতর করেই দেড়শতক থেকে তিনের অঙ্কটা দ্বিতীয়ায় নিয়ে গেলেন সাকিব। তখন দৃঢ়চেতা ভূমিকা নিয়ে পার্শ্বচরিত্রে দেশের প্রথম দ্বিশতকিয়ান দলের কাপ্তান মুশফিকুর রহিম।

টেস্টে আগে দেড়শ-ই ছিলো না সাকিবের। বড় পরিসরের আরেক শাখা প্রথম শ্রেণিতেও ছিলেন ১৩০ রানের নিচে। সেই সাকিব এখন টেস্টের এক ইনিংসে বাংলাদেশের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের মালিক। মনে রাখার মতো এই ইনিংসটির ক্রিকেটীয় নিকাশ হচ্ছে : সাকিব আল হাসান ব ওয়াগনার ২১৭ (রান) ২৭৬ (বল) ৩১ (চার)। সাকিব যে কীর্তি গড়ে গেলেন, তার স্বীকৃতি মিলেছে বেরসিক নিল ওয়াগনারের কাছ থেকেও। সাজঘরমুখো বাংলার নায়কের সঙ্গে হাত মিলিছেন। এটা করেছেন নিউজিল্যান্ড একাদশের অন্যরাও। এখানেই সাকিব চ্যাম্পিয়ন। অন্যদের চেয়ে আলাদা। বিশ্ব ক্রিকেটের বড় বিজ্ঞাপনের খুদে তালিকার যে সারি তাতে নির্ঘাত থাকে সাকিবের নাম। যারা অবিশ্বাস নিয়ে চোখ কচলাবেন তারা দিন কয়েক আগের সেরা-তকমার টালি খাতাটা আরো একবার দেখে নিতে পারেন। ভালো করে দেখে নিন। সবশেষ ৯ জানুয়ারি সোমবার যে তালিকা আমাদের হাতে এসেছে। তাতে একদিনের ক্রিকেটের সব্যসাচী হিসেবে আবার শীর্ষস্থানে ফিরে এসেছেন সাকিব। মাঝে ক্রমের দ্বিতীয়ায় চলে গিয়েছিলেন বিশ্বসেরা এই অলরাউন্ডার। শ্রীলঙ্কান দলনায়ক অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে হটিয়ে হারানো সাম্রাজ্যে ফিরে এসেছেন সাকিব।
যাই হোক রঙিন নয়, আমরা বরং সাদা ক্রিকেটের দিকে তাকাই। অনেক অনেক সাকিবীয় কীর্তির সাক্ষী হয়ে থাকলো ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভ। যার কোনোটায় আছে বৈশ্বিক প্রেক্ষিত। কোনোটা শুধু বাংলাদেশি ফলক। যেমন, মুমিনুল হকের ২৭ বাউন্ডারির জায়গায় এক ইনিংসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি ৩১টি বাউন্ডারির রেকর্ডখানি এখন সাকিবের। পাঁচদিনের ক্রিকেটে দেশের হয়ে সেরা যুগল এখন সাকিব- মুশফিক। তাদের ৩৫৯ রানের জুটিতে দ্বিতীয়তে চলে গেল দুই বছর আগে খুলনায় তামিম-ইমরুলের ৩১২ রান। নিউজিল্যান্ডের মাটিতেও বাংলার সেরা এখন সাকিব- মুশফিক। এই দুটি দেশের জোড়া বিবেচনায়ও তারাই সেরা। এতে করে পেছনে পড়ে গেলেন মার্টিন গাপটিল ও ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। সাত বছর আগে ষষ্ঠ উইকেটে তাদের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৩৯ রান।

মহাকাব্যিক ইনিংসটির হাত ধরেই কিন্তু তৃতীয় বাংলাদেশি হিসেবে টেস্টে তিন হাজার রানের মাইলফলক পেরিয়ে গেলেন সাকিব। আর মাত্র দুই জন তার আগে তা পার হতে পেরেছেন। রানের হিসেবে অবশ্য দ্বিতীয় হয়ে গেছেন তিনি। পেছনে ফেলেছেন ৩ হাজার ২৬ রানের সাবেক কাপ্তান এখনকার নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমনকে। সাকিবের সামনে এখন শুধুই আছেন তামিম ইকবাল। যার রান ৩ হাজার ৪০৫। আপাতত দুজনের মধ্যে চার হাজারি ক্লাবে পৌঁছানোর মধুর প্রতিযোগিতা থাকবে। অলরাউন্ডার সাকিবকে কিন্তু নিজের সঙ্গেই নিজের প্রতিযোগিতায় থাকতে হচ্ছে। ক্রমে ক্রমে নিজেকে ছাপিয়ে নতুন উচ্চতায় পৌঁছানোর এ লড়াই। এভাবে বৈশ্বিক মর্যাদার তালিকায় আরো উড্ডীন হবে সাকিবীয় গাঁথা। আজকেই তো সব্যসাচী অনেক মহতীর কাতারে নাম লিখিয়েছেন। কারণ আর মাত্র ১২ জন যে তার আগে টেস্টে ৩০০০ রান, ১৫০ উইকেট নিতে পেরেছেন। এই নক্ষত্রপুঞ্জের নাম না বললে সাকিবের মাহাত্ম্যটা ঠিক বুঝানো যাবে না। জেনে রাখুন, গ্যারি সোবার্স, ইমরান খান ইয়ান বোথাম, কপিল দেবরা আছেন এখানে। এই যখন তালিকা, তখন সাকিব ছাড়া কে আর আমাদের অনন্য নায়ক!

আজ যে নায়কোচিত কিছু হতে পারে সেই ভাবনা নাকি আগে থেকেই ছিলো সাকিবের মাথায়। দিনের শেষে তাই তার ভাষ্য, ‘বড় খেলোয়াড়রা সুযোগ পেলে বড় বড় ইনিংস খেলে। ভেবেছিলাম, দেখি কিছু করা যায় কিনা।’

রাতে এসব বিষয় স্ত্রীর সঙ্গেও ভাগ করেছেন। সেই প্রসঙ্গ টেনে বললেন, ‘বউ ইদানিং ক্রিকেট বোঝা শুরু করেছে, অনেক কথা হলো।’

শিশির ক্রিকেট বুঝছেন, সাকিবের সেই খুশি আমাদেরও খুশি। ঘরের খবর না হয় থাক। শীতের দেশের গতিময় উইকেটের শিশির বুঝতে পেরেছেন সাকিব। এটাই আমাদের এনে দিয়েছে আনন্দের বড় এক উপলক্ষ। সাকিব, আপনার জন্য আবারো হাততালি।

তায়েব মিল্লাত হোসেন : সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও গবেষক

#তমহ/বিবি/২৪-০৪-২০২২

ক্যাটেগরী: খেলা

ট্যাগ: খেলা

তায়েব মিল্লাত হোসেন রবি, এপ্রিল ২৪, ২০২২ ১২:৫৯ পূর্বাহ্ন

Comments (Total 0)