পদ হারালেন শোভন-রাব্বানী

পদ হারালেন শোভন-রাব্বানী

ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও গোলাম রাব্বানীকে।
ভারপ্রাপ্ত হিসেবে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আল নাহিয়ান খান জয় ও লেখক ভট্টাচার্যকে।
১৪ সেপ্টেম্বর রাতে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় এ সিন্ধান্ত নেওয়া হয়।
সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, “আমাদের সভায় ছাত্রলীগের প্রসঙ্গটি এসেছিল। আমাদের নেত্রী বলেছেন, ছাত্রলীগের বর্তমান কমিটি বহাল থাকবে। শুধুমাত্র সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে পদত্যাগ করতে বলা হয়েছে। তাদের স্থানে বর্তমান কমিটির ১ নম্বর সহ-সভাপতি ও ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দায়িত্ব পালন করবেন।”
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১১ ও ১২ মে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন ছাড়াই ছাত্রলীগের দুই দিনব্যাপী ২৯তম জাতীয় সম্মেলন শেষে ৩১ জুলাই রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভনকে সভাপতি এবং গোলাম রাব্বানীকে সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ছাত্রলীগের নিয়ন্ত্রণে থাকা সিন্ডিকেট ভেঙে যেহেতু প্রধানমন্ত্রী কমিটি দিয়েছিলেন, তাই তাদের স্বাধীনভাবে কাজের পরিবেশ তৈরি হয়। কারণ শুরু থেকেই ‘নেত্রীর কমিটি’র দুই নেতার বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দরজা সবসময় খোলা ছিল। এর ফলে অতীতের ন্যায় আওয়ামী লীগের জাতীয় বা স্থানীয় পর্যায়ের প্রভাবশালী কেউ চাইলেই ছাত্রলীগে সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ পাননি। কিন্তু শোভন-রাব্বানী এই ইতিবাচক দিকটির সদ্ব্যবহার না করে এটিকে নেতিবাচক বিষয়ে পরিণত করেন বলে অভিযোগ।
ছাত্রলীগের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী কমিটি দেয়ায় শোভন-রাব্বানীর প্রতি আলাদা নজর ছিল আওয়ামী লীগের সব মহলের। তারা ছাত্রলীগকে আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর চাওয়া অনুযায়ী ‘নতুন ধারায়’ ফিরিয়ে আনবেন এমন প্রত্যাশা ছিল সংশ্লিষ্টদের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে জড়িয়েছেন তারা। সংগঠনের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে চরম বিশৃঙ্খলা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পহেলা বৈশাখের কনসার্টে অগ্নিসংযোগের ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রীর কাছে ক্ষমা চেয়ে মাফ পেলেও এবার আর তা হয়নি। গণভবনে শোভন-রাব্বানীর প্রবেশের স্থায়ী পাস স্থগিত করা হয়।
গোলাম রাব্বানী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মমতাময়ী নেত্রী’ সম্বোধন করে একটি চিঠি লেখেন। যেখানে তিনি উল্লেখ করেন, ‘আপনি বিশ্বাস করে শিক্ষা-শান্তি-প্রগতির যে পবিত্র পতাকা আমাদের হাতে তুলে দিয়েছেন, তার মর্যাদা রক্ষায় সচেষ্ট ছিলাম। দায়িত্ব পালনের শুরু থেকেই চতুর্মুখী চাপ, সদ্য সাবেকদের অসহযোগিতা, নানা ষড়যন্ত্র-প্রতিকূলতা-প্রতিবন্ধকতা আর আমাদের কিছু জ্ঞাত-অজ্ঞাত ভুল ইতিবাচক পরিবর্তনের পথকে কণ্টকাকীর্ণ করেছে। আমাদের দায়িত্বশীল আচরণের ব্যর্থতা ও কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতির বাইরেও দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, প্রিয় নেত্রী দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট তথা বলয় ভেঙে আপনি নিজে পছন্দ করে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বলে আমরা একটি বিশেষ মহলের চক্ষুশূল। তারা বিভিন্ন মাধ্যমে মিথ্যা, অপপ্রচার চালিয়ে, প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে, সুকৌশলে আপনার এবং আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতাদের কান ভারীর অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে। নেত্রী, আপনার সন্তানরা এতোটা খারাপ না। আমরা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি বারবার। অনেক অব্যক্ত কথা রয়েছে যা, আপনাকে কখনো বলার সুযোগ পাইনি। বিভিন্ন মাধ্যমে শ্রুত অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রকৃত সত্যটুকু উপস্থাপনের সুযোগ চাই’।
এরপর চিঠিতে তিনটি ধারাবাহিক অভিযোগের ব্যাখ্যা দেয়া হয়। তিনটি অভিযোগের ব্যাখ্যার পর ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক লেখেন, ‘সবকিছুর পরেও আমাদের জ্ঞাত-অজ্ঞাত ভুলগুলোর জন্য অনুতপ্ত ও ক্ষমাপ্রার্থী। আপনি বঙ্গবন্ধু কন্যা, মানবতার মা...। নিজ বদান্যতায় আমাদের ক্ষমা করে ভুলগুলো শুধরে আপনার আস্থার প্রতিদান দেয়ার সুযোগটুকু দিন। আপনি মুখ ফিরিয়ে নিলে যাবার কোনো জায়গা নেই’। প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে লেখা চিঠিটি শেষ করেন ‘আপনার ¯স্নেহের রাব্বানী’ লিখে।

#এসএস/বিবি/১৫-০৯-২০১৯

ক্যাটেগরী: রাজনীতি

ট্যাগ: রাজনীতি

রাজনীতি ডেস্ক, বিবি শনি, সেপ্টেম্বর ১৪, ২০১৯ ১০:৩৭ অপরাহ্ন

Comments (Total 0)