এ যেন মহামারির সালতামামি!

এ যেন মহামারির সালতামামি!

গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির বারোটি মাস শেষ হচ্ছে। বিদায় নিচ্ছে ২০২০ সাল। আসছে নতুন বছর। ২০২১ সাল। বিদায়ী বছরে আচমকাই পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে মহামারি করোনাভাইরাস বা কভিড-নাইন্টিন। তাই অনেক কিছু হারিয়ে গেলেও ২০২০ সালকে মনে রাখবে বিশ্ববাসী। অচেনা এ বছরে তারা দেখেছে করোনা মহামারির ভয়াবহতা। লকডাউনে পুরো বিশ্বের মতো থমকে যায় বাংলাদেশও। জীবন না জীবিকা, কোনটা প্রাধান্য পাবে- তা ঠিক করতে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি হিমশিম খেয়েছে নীতি-নির্ধারকেরাও। তবে, এর মধ্যেও সক্রিয় ছিল রাজনীতি। ডিজিটাল পদ্ধতিতে পালিত হয়েছে মুজিববর্ষের আনুষ্ঠানিকতা। শুরুতে থমকে গেলেও বছরশেষে গতি পেয়েছে মেগাপ্রকল্প।

ব্যস্ত শহর হঠাৎ শুনশান, ঘরবন্দি জীবন, জরুরি প্রয়োজনে বাইরে বেরোনো মানুষের চোখে-মুখে আতঙ্ক। হরতাল, অবরোধেও এমন ঢাকা কখনো দেখা যায়নি। এ এক অচেনা নগর।

৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণের কথা জানায় আইইডিসিআর। এর ১০ দিন পর ১৮ই মার্চ ঘটে প্রথম প্রাণহানি। ১১ই মার্চ কোভিড-নাইন্টিনকে বিশ্ব মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। শুরু হয় দেশে দেশে লকডাউন। কর্মহীন হয়ে পড়ে অনেক প্রবাসী বাঙালি। যাদের বড় একটি অংশই ফিরে আসে দেশে। তাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে গিয়ে ঘটে কিছু অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাও।

ঝুঁকি এড়াতে মার্চের শেষে লকডাউন করতে বাধ্য হয় বাংলাদেশও। যদিও, সরকারিভাবে এর নাম দেয়া হয় সাধারণ ছুটি। ২৬শে মার্চ থেকে সব অফিস, আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সারা দেশে যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জনসমাগমেও দেয়া হয় নিষেধাজ্ঞা। করোনা স্বাস্থ্যবিধির পূর্ণ বাস্তবায়নে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের পাশাপাশি মাঠে নামে সশস্ত্র বাহিনীও। এবছর করোনা আতঙ্কের মধ্যেই কেটেছে রোজা, ঈদ, দুর্গাপূজা, বৌদ্ধপূর্ণিমা ও বড়দিন।

প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার পর, বিক্রির চাপ আর মজুদদারির কারণে বাজার থেকে উধাও হয়ে যায় মাস্ক, স্যানিটাইজারসহ সুরক্ষা সামগ্রী। অনেকে চাল-ডালের মত নিত্যপণ্যও অতিরিক্ত পরিমাণে মজুদ করেন, যা সংকট আরো বাড়ায়। করোনা সংকটে খেটে খাওয়া মানুষের কষ্ট লাঘবে সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসে বিভিন্ন সংগঠনও। টানা ৬৬ দিন পর ওঠে লকডাউন। ৩১ মে থেকে অফিস খোলার পরপরই গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার। শুরু হয় ফ্লাইট চলাচল। আগস্ট থেকে খুলতে থাকে বিনোদন কেন্দ্রও।

বাংলাদেশে করোনার ছোবলে প্রায় সাড়ে সাত হাজার মানুষ মারা গেলেও বাঁচানো গেছে প্রায় ৫ লাখ প্রাণ। ঘরবন্দী মানুষের জীবনে বেড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার।

এদিকে করোনায় মানুষ যখন বিপর্যস্ত, তখন যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে প্রকৃতি। পৃথিবীর অনেক শহরের মত বদলেছে ঢাকার চিত্রও। দূষণ কমে বাতাস হয় নির্মল। অনেকটাই স্বচ্ছ হয় বুড়িগঙ্গা, ধলেশ্বরীর পানি। দেখা মেলে মাছ ও জলজ প্রাণীর। সমুদ্র সৈকতে ফিরে আসে ডলফিন।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষ ঘিরে জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের আশা নিয়ে শুরু হয়েছিল ২০২০। ১০ই জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরু সাড়ম্বরে। তবে করোনার কারণে ১৭ই মার্চ জাতির পিতার জন্মশতবর্ষের আয়োজনেও হয় কাটছাট। বছরজুড়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতেই পালিত হয়েছে মুজিববর্ষের নানা আনুষ্ঠানিকতা।

বছরের শুরুতে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন রাজনৈতিক উত্তাপ ছড়ালেও করোনা শুরুর পর স্তিমিত হয়ে পড়ে সবকিছু। তবে বছরের শেষ দিকে ভাষ্কর্য বিতর্কে ফের উত্তাপ বাড়ে রাজনীতির মাঠে।

#তমহ/বিবি/৩১-১২-২০২০

ক্যাটেগরী: জাতীয়

ট্যাগ: জাতীয়

জাতীয় ডেস্ক, বিবি বৃহঃ, ডিসেম্বর ৩১, ২০২০ ৫:৩৫ পূর্বাহ্ন

Comments (Total 0)