সৌদি থেকে হুসনার ভিডিও বার্তা

সৌদি থেকে হুসনার ভিডিও বার্তা

সৌদি আরবে নির্যাতনের শিকার হুসনা আক্তার (২৪) দেশে তাঁর স্বামীর কাছে একটি ভিডিও বার্তা পাঠিয়েছেন। ভিডিওতে হুসনা বলেছেন 'আমি আর পারতাছি না সহ্য করতাম। তোমরা যেভাবে পারো আমারে নেও।’ এমন আকুতি জানিয়ে স্বামী শফি উল্লাহ সেই ভিডিও বার্তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রকাশ করেছেন।

হুসনার বাড়ি হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার আনন্দপুর গ্রামে। আর্থিক সচ্ছলতা আনতে গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদি আরবে যান ৭ নভেম্বর। ‘আরব ওয়ার্ল্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ নামের একটি এজেন্সি তাঁকে গৃহকর্মীর চাকরি দিয়ে সেখানে পাঠায়।

সৌদিতে গৃহকর্তার নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে স্বামী শফি উল্লাহর কাছে হুসনা একটি ভিডিও বার্তা পাঠান। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমি মোসাম্মাত হুসনা আক্তার। আমার দালালে ভালা কথা কইয়া আমারে পাঠাইছে সৌদি। নিজরাল (নাজরান) এলাকায় আমি কাজ করি। আমি আইসা দেখি ভালা না। ওরা আমার ওপর অত্যাচার করে। এরার অত্যাচার আমি সহ্য করতে পারি না দেইক্কা কইছি আমি যাইমু গা। এই কথার পর ওরা আরও বেশি অত্যাচার করে।

আমি এজেন্সির অফিসে ফোন দিছি। অফিসের এরা আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে। আমি আর পারতাছি না। তোমরা যেভাবে ভাবো পারো আমারে বাঁচাও। এরা আমারে বাংলাদেশ পাঠাইতো চায় না। এরা আমারে ইতা করতাছে। আমারে ভালা কামের কথা কইয়া পাঠাইছে দালালে। আমারে ইতা করতাছে ওরা। আমি আর পারতাছি না সহ্য করতাম। তোমরা যেভাবে পারো আমারে নেও।’

হুসনার স্বামী শফি উল্লাহ এই ভিডিও বার্তা পেয়ে প্রথমে যার মাধ্যমে হুসনাকে সৌদি পাঠানো হয় সেই শাহীন মিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। শাহীন মিয়া বলেন, তাঁর স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে হলে দুই লাখ টাকা দিতে হবে। নইলে দেশে আনা সম্ভব নয়। পরে তিনি ঢাকায় ‘আরব ওয়ার্ল্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ এর অফিসে সরাসরি যোগাযোগ করেন।

সেখানে গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। ওই এজেন্সির কর্মকর্তারা বলেন, দুই বছরের জন্য তাঁকে পাঠানো হয়েছে। এর আগে আনা যাবে না। এর আগে দেশে আনতে হলে দুই লাখ টাকা এজেন্সিকে দিতে হবে। কারণ, তাঁর চাকরির চুক্তি দুই বছর। চুক্তি অনুযায়ী, তাঁকে সেখানে অবস্থান করা লাগবে।

পরে শফি উল্লাহ কোনো উপায় না পেয়ে স্ত্রীকে বাঁচানোর জন্য ভিডিওটি এক প্রতিবেশীর সহযোগিতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ছেড়ে দেন। তিনি বলেন, বিয়ের তিন মাসের মাথায় পরিবারকে সহযোগিতা করার জন্য সৌদি আরবে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তাঁর স্ত্রী হুসনা আক্তার।

সেই অনুযায়ী হবিগঞ্জের মধ্যস্বত্বভোগী শাহিন মিয়া নামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে সৌদি আরব পাঠানো হয় হুসনাকে। শাহীন ‘আরব ওয়ার্ল্ড ডিস্ট্রিবিউশন’ নামে একটি এজেন্সির মাধ্যমে গৃহকর্মীর কাজ দেখিয়ে ২২ হাজার টাকা বেতনে তাঁকে সৌদিতে পাঠায়। হুসনা সৌদি আরবে যাওয়ার এক সপ্তাহ পর তাঁকে ফোনে জানান, সেখানে নানা নির্যাতন করা হচ্ছে তাঁকে।

এ বিষয়ে আরব ওয়ার্ল্ড ডিস্ট্রিবিউশন এর কার্যালয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে হুসনা বেগমের প্রসঙ্গ তুলতেই প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফোন কেটে দেন। এর পর একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও কেউ ফোন ধরেননি।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান বলেন, নির্যাতনের শিকার ওই নারীর পরিবার প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। সৌদিতে ওই নারী কোন জায়গায় আছেন, তাঁর সঠিক নাম ঠিকানা দিতে পারলে অবশ্যই তিনি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তাদের সহযোগিতা করতে পারবেন।

#এসএস/বিবি/২৫ ১১ ২০১৯


প্রবাস ডেস্ক, বিবি
Published at: রবি, নভেম্বর ২৪, ২০১৯ ১০:২৮ অপরাহ্ন
Share with others:

Recent Posts

Recently published articles!