সুদহার বেঁধে দিতে দুই বছর অপেক্ষা করেছি: গভর্নর

সুদহার বেঁধে দিতে দুই বছর অপেক্ষা করেছি: গভর্নর

গভর্নর ফজলে কবির বলেছেন, সরকারের নির্দেশনা সত্ত্বেও ব্যাংকঋণের সুদহার বেঁধে দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রায় দুই বছর সময় নিয়েছে । তিনি বলেন, ২০১৮ সালের জুলাইয়ে তৎকালীন অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, আগস্টের ১ তারিখ থেকে ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ হবে। কিন্তু আমরা ঋণের সুদহার বেঁধে দেয়ার জন্য ২০২০ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেছি।

ঋণের সর্বোচ্চ সুদহার বেঁধে দেয়ার প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে গত মাসে। আর ৯ শতাংশ সুদের ব্যাংকঋণের নির্দেশনা কার্যকর হবে ১ এপ্রিল থেকে। এ নির্দেশনা কার্যকর হলে সাময়িকভাবে কিছু সমস্যা হলেও দীর্ঘমেয়াদে দেশের অর্থনীতি উপকৃত হবে।

৫ মার্চ রাজধানীর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে ‘বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলন ২০২০’-এর সমাপনী অধিবেশনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন গভর্নর ফজলে কবির। ‘আর্থিক খাত: ঋণ ও সুদের অর্থনীতি’ শীর্ষক ওই অধিবেশনে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন।

আলোচনায় অংশ নেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত, ব্র্যাক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর, বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন, পিডব্লিউসি বাংলাদেশের ম্যানেজিং পার্টনার মামুন রশীদ, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন ও লংকাবাংলা ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা শাহরিয়ার। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে বণিক বার্তা ও সিটি ব্যাংক দিনব্যাপী এ সম্মেলনের আয়োজন করে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর জন্যই ব্যাংকঋণের সুদহার এক অংকে নির্ধারণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের জুনে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল ১৬ দশমিক ৯ শতাংশ। ২০১৯ সালের জুনে তা ১৩ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসে। বর্তমানে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি সাড়ে ৯ শতাংশে নেমেছে। এটি আমরা চাচ্ছি না। বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিকে উত্সাহিত করতেই আমরা এডি রেশিও কমিয়েছিলাম।

গভর্নর বলেন, আমাদের আমানতের গড় সুদহার এখনো ৫ শতাংশের কম আছে। একইভাবে ঋণের সুদহারের গড়ও ৯ দশমিক ৬৬ শতাংশে সীমাবদ্ধ। বর্তমানে দেশের ব্যাংকিং খাতে কোনো তারল্য সংকট নেই। এখন ১ লাখ ৫ হাজার কোটি টাকা উদ্বৃত্ত তারল্য আছে। তবে এটি সব ব্যাংকের কাছে সমানভাবে নেই। এর মধ্যে ৪২ হাজার কোটি টাকা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে রয়েছে। ঋণের সুদহার সর্বোচ্চে ৯ শতাংশে নামিয়ে আনতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।

তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে এসএমই ও রিটেইল খাতে ঋণ দিতে হবে। মানসম্পন্ন ঋণ দিয়েই ব্যবসা করতে হবে, দিন শেষে মুনাফাও করতে হবে।

পুরো অনুষ্ঠানে বক্তাদের উত্থাপিত প্রশ্ন ও শঙ্কার জবাব দেন গভর্নর ফজলে কবির। কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগের তুলনায় দুর্বল হয়ে গেছে, একজন বক্তার এমন অভিযোগের জবাবে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক অনেক দুর্বল হয়ে গেছে বলে একজন অভিযোগ করেছেন। তবে আমি জানি না, বর্তমানের চেয়ে কবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আরো শক্তিশালী ছিল। কেননা আমি ২০০৮ সাল থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলাম।

গভর্নর বলেন, ২০১৭ সালের অক্টোবরে একটি নতুন ব্যাংক লাইসেন্সের জন্য প্রস্তুত ছিল। সরকার থেকে সে বিষয়ে পরামর্শও ছিল। কিন্তু সে ব্যাংকটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিতে আমরা দুই বছরের বেশি সময় নিয়েছি। আমরা নিশ্চিত করতে চেয়েছি, মূলধনের শতভাগ অর্থই যেন সাদা টাকা হয়।

তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাত বাংলাদেশের অর্থনীতির ৮৫ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। বাকি অংশ পুঁজিবাজার ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের। সম্প্রতি আমরা ব্যাংকঋণের সুদহারের বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন দিয়েছি। সেটি নিয়ে আজকের অনুষ্ঠানে অনেকেই কথা বলেছেন। সুদহার বেঁধে দেয়া নিয়ে কেনিয়ার উদাহরণ দেয়া হয়েছে। যদিও কেনিয়ার অর্থনীতির ধরন ও প্রকৃতি আমাদের দেশের তুলনায় ভিন্ন। কেনিয়ার জিডিপিতে উত্পাদন খাতের অংশগ্রহণ ৯ শতাংশ, বাংলাদেশে এটি ৩১ শতাংশের বেশি।

কেনিয়ার জিডিপিতে কৃষি খাতের ভূমিকা ৫২ শতাংশ, বাংলাদেশে তা ১৩ শতাংশে। কেনিয়ার জিডিপিতে সরকারি ঋণের অংশ ৫৮ শতাংশ, বাংলাদেশে তা ২৯ শতাংশের আশপাশে। বাংলাদেশের জিডিপিতে বিদেশী ঋণ ১৩ শতাংশ।

ফজলে কবির বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৯ (চ) ধারার ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ ব্যাংকঋণের সুদহার নির্ধারণ করে দিতে পারেন। ২০১৩ সালে এ আইনটি সংশোধনের সময় বিশ্বব্যাংকসহ কোনো পক্ষই এ ধারাটির বিরোধিতা করেনি।

২০১৫ সালে ঋণের সুদহার বেড়ে গেলে কৃষিঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ বেঁধে দেয়া হয়েছিল। একই সঙ্গে নির্ধারিত হারে কৃষিতে ঋণ বিতরণ না করতে পারলে, ঋণের সে অংশ বাংলাদেশ ব্যাংক কেটে রাখার বিধানও দিয়েছে। প্রি-শিপমেন্ট রফতানির ক্ষেত্রে ঋণের সুদহারও ৭ শতাংশ ২০১৬ সালের আগে নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল।

খেলাপি ঋণের বিষয়ে গভর্নর বলেন, খেলাপি ঋণ নিয়ে অনেক কথা হচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো এ নিয়ে অনেক কথা বলেছে। খেলাপি ঋণ বেড়ে যাওয়ার পেছনে ঋণের উচ্চ সুদহারও যে দায়ী, তার স্বীকৃতি দিলে এ বিষয়ে মতামত অন্য রকম হতো।

সঞ্চয়পত্রের বিষয়েও কথা বলেন ফজলে কবির। তিনি বলেন, আমাদের দেশে সামগ্রিকভাবে কোনো পেনশন স্কিম নেই। এজন্য সঞ্চয়পত্র চালু করা হয়েছিল। এখানে ব্যাংকের চেয়ে বেশি সুদ পাওয়া যায়। কিন্তু সঞ্চয়পত্রের অপব্যবহার হচ্ছিল। যাদেরকে লক্ষ্য করে সঞ্চয়পত্র চালু করা হয়েছে, তাদের কাছ থেকে বেরিয়ে তা করপোরেট প্রতিষ্ঠান ও বিত্তশালীদের কাছে চলে গিয়েছিল। এজন্য সঞ্চয়পত্রকে প্রকৃত সুবিধাভোগীদের কাছে পৌঁছানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আহসান এইচ মনসুরের বক্তব্য উদ্ধৃত করে গভর্নর ফজলে কবির বলেন, ২০১৩ সালে যে নয়টি ব্যাংক অনুমোদন দেয়া হয়েছিল, তার মধ্যে একটি ব্যাংক ব্যর্থ হতে যাচ্ছিল। কিন্তু সেটিকে বাঁচানো হয়েছে। কেন সে ব্যাংকটিকে বেইলআউট করা হয়েছে, তা নিয়ে আহসান এইচ মনসুর প্রশ্ন তুলেছেন। ব্যাংকিং খাত নিয়ে সরকারের দায়িত্ব অনেক। একটি ব্যাংক ব্যর্থ হলে দেশের ব্যাংকিং খাতের প্রতি আমানতকারীদের অনাস্থা তৈরি হবে কিনা, সেটিও সরকারকে ভাবতে হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাসউদ্দিনের একটি বক্তব্যের উদ্ধৃত করে ফজলে কবির বলেন, সুশাসনের অভাব সর্বক্ষেত্রে। এটি ব্যাংকিং খাতের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি নিশ্চিত করার জন্য আমরা কাজ করছি।

ব্যাংকের মূল কাজ অর্থনৈতিক মধ্যস্থতায় ভূমিকা রাখা উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিন বলেন, দিনভর অর্থনীতির অনেক দিক নিয়ে আলোচনা হয়েছে। অল্প সুদের পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি এসেছে। মাসতিনেক আগে বণিক বার্তায় ‘ব্যাংকঋণের সাতকাহন’ নামে একটি লেখা ছাপিয়েছে। সে লেখা থেকেই আমি আজ কথা বলব।

তিনি বলেন, একদিকে লাখ লাখ ক্ষুদ্র আমানতকারীর কাছ থেকে ব্যাংকে আমানত আসছে। অন্যদিকে দক্ষ ও যোগ্য উদ্যোক্তারা ঋণের জন্য ব্যাংকে যাচ্ছে। এখন ব্যাংকের কাজ হলো, চাহিদা ও জোগানের মধ্যে যথোপযুক্ত মধ্যস্থতাকারীর ভূমিকা রাখা। বাংলাদেশ শ্রমপ্রধান দেশ। একই সঙ্গে মূলধন অভাবের দেশ। এ দেশে মূলধনের দাম বেশি হওয়ার কথা। এগুলো বইয়ের কথা।

ফরাসউদ্দিন বলেন, যদি আমি সঞ্চয়কারীদের স্বার্থে সুদের হার বেশি ধরি, তাহলে চাহিদা কমে যাবে। আর সুদের হার কমিয়ে দিলে আমানতকারীরা নিরুত্সাহিত হবেন। এটি অত্যন্ত স্বাভাবিক কথা।

সুদহার কমানো বা বাড়ানোর বিষয়ে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানের উদাহরণ টানেন সাবেক এ গভর্নর। তিনি বলেন, ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত দক্ষিণ করিয়া অত্যন্ত হতভাগা একটি দেশ ছিল। এ অঞ্চলের সব দেশের তুলনায় দক্ষিণ কোরিয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল খারাপ। ওই সময় তারা অর্থনৈতিক সংস্কারের একটি কর্মসূচি নিয়েছিল। তাদের ঋণের সুদের হার ছিল ৭-৮ শতাংশ। রাতারাতি সে সুদের হার ২৩ শতাংশ করে দিল। এতে লাভ হলো দ্রুততার সঙ্গে সঞ্চয় বেড়ে গেল।

একই সঙ্গে সবচেয়ে দক্ষ ও যোগ্য উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে ঋণ নিল। শুধু তারাই ঋণ নিল, যারা ২৩ শতাংশ সুদ পরিশোধ করেও মুনাফা করতে পেরেছে। অন্যদিকে জাপান ২০ বছর ধরে ফিক্সড এক্সচেঞ্জ রেট ধরে রেখেছে। সুদহার ধরে রেখেছিল শূন্য শতাংশ। ওই ২০ বছরে দেশটি কোনো প্রবৃদ্ধি করেনি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এসে এসব নীতিতে পরিবর্তন এনেছেন। সুদের হার বাড়িয়েছেন। এতে তাদের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে।

ফরাসউদ্দিন বলেন, জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বিদায়ী বছরে ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। সামাজিক রূপান্তর এত চমত্কার। পাকিস্তানের মাহবুবুল হক কিংবা ভারতের অমর্ত্য সেন বলেছেন, সামাজিক রূপান্তরে বাংলাদেশের অর্জন হূদয় উষ্ণকর। একদিকে এ অগ্রগতি হচ্ছে, অন্যদিকে আমরা বলছি সুশাসনের তীব্র অভাব। একই সঙ্গে ইজ অব ডুয়িং বিজনেস একেবারে খারাপ। এ দুই বিষয় সংগতিপূর্ণ নয়। হয় এটি ভুল, নয় অন্যটি ভুল। এটি আমার হিসাবে মেলে না।

তিনি বলেন, আশি ও নব্বইয়ের দশকে ব্যাংক করার জন্য ২০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের প্রয়োজন হতো। বাধ্যতামূলকভাবে সেটি হতে হতো সাদা টাকা। নব্বইয়ের দশকের পরও এটি নিশ্চিত করা হয়েছে। কিন্তু এখন ব্যাংক অনুমোদন দেয়ার ক্ষেত্রে এটি মানা হয় কিনা আমি জানি না।

ফরাসউদ্দিন বলেন, বিনিয়োগ ও জিডিপি অনুপাত এখন ৩২-এ আছে, এটি দিয়ে যদি সাড়ে ৮ বা ৯ ভাগ প্রবৃদ্ধি করতে হয়, তাহলে অবশ্যই আয়কর (ইনক্রিমেন্টাল ক্যাপিটাল আউটপুট রেশিও) কমাতে হবে। কিন্তু এটি কমার কোনো লক্ষণ নেই।

২০ বছর আগে এটি ৪ ছিল, এখন ৪ দশমিক ৩। ৩২ শতাংশ বিনিয়োগ দিয়ে যদি আয়কর ৪ দশমিক ৪ হয়, তাহলে জিডিপি প্রবৃদ্ধি তো ৭ শতাংশও হয় না। অথচ ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধির হিসাব বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছে বিশ্বসমাজ। প্রবৃদ্ধি নিয়ে বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ ও এডিবির মূল্যায়নই এর কারণ।

তিনি বলেন, পৃথিবীর কয়টি দেশে আছে, স্বল্পমেয়াদি আমানত নিয়ে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ দেয়ার নীতি। উত্তর হলো, কোনো দেশেই নেই। অথচ আন্তর্জাতিক মুরব্বিদের ভুল পরামর্শে ১৯৯৩ সালে সব তফসিলি ব্যাংককে দীর্ঘমেয়াদের ঋণ দিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এতে যে দেশের কত ক্ষতি হয়েছে—

সাবেক গভর্নর বলেন, আমরা এখন নয়-ছয়ের মধ্যে আছি। বৃহৎ প্রবৃদ্ধির স্বার্থে বাজার অর্থনীতি অপরিহার্য। তবে সরকার যদি কমান্ড ইকোনমিতে সুদের হার নির্ধারণ করে দেয়, তাহলে সেটি কতখানি সফল হবে তা নিয়ে আমার মনে বড় প্রশ্ন আছে। আশির দশক থেকে ধীরে ধীরে বাজার অর্থনীতি উন্মুক্ত হয়েছে। এখন অবমুক্ত পাখিকে খাঁচার ভেতরে বন্দি করলে অর্থনীতির ফল শুভ হবে কিনা, তা আমি জানি না। তবে আমি সন্দিহান।

‘আর্থিক খাত: ঋণ ও সুদের অর্থনীতি’ শীর্ষক এই অধিবেশনে আলোচনার সূচনা করেন পিডব্লিউসি বাংলাদেশের ম্যানেজিং পার্টনার মামুন রশীদ। তিনি বলেন, এখন আর কোনো দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকই সুদের হার নির্ধারণ করে দেয় না। সুদহার নির্ধারিত হয় বাজারের চাহিদা, জোগান তথা তারল্য পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে। দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের নিজেদের রেফারেন্স রেট বা ব্যাংক রেটের মাধ্যমে মুদ্রা বাজারের তারল্য ও ভারসাম্য নিশ্চিত করে। এ প্রসঙ্গে কেনিয়ার উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, কেনিয়ার ক্ষমতাসীন সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আপত্তি সত্ত্বেও সংসদে আইন পাস করে সুদহার নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছিল। কিন্তু সে প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে।

মামুন রশীদ বলেন, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০১৯ সালের মে মাসে কেনিয়ার অভিজ্ঞতা বিষয়ে একটি কার্যপত্র প্রকাশ করেছে। সেখানে দেখা যায়, সুদের হার নিয়ন্ত্রণের কারণে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের ঋণ এক বছরেই ১০ শতাংশ কমে আসে এবং তার বিপরীতে বড় শিল্প খাতগুলো বেশি ঋণ পায়। এর ফলে সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়ে ছোট ব্যাংকগুলো। তাদের এক বছরে ৫ শতাংশ ঋণ কমে আসে।

বেসরকারি খাত থেকে সরে গিয়ে সরকারি খাতে বেশি ঋণ দেয়া শুরু হয়। এক বছরেই সরকারি খাতে ঋণ বেড়ে যায় ২৫ শতাংশ। বেসরকারি ঋণ কমে যাওয়ার সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় মূলত কৃষি, ট্রেডিং বা বাণিজ্য এবং আর্থিক সেবা খাত। ব্যাংকগুলো আয় বাড়াতে নানা ধরনের ফি এবং সরকারকে ঋণ দেয়ার ওপর নির্ভর হয়ে পড়ে। ফলে মুদ্রানীতি কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। ব্যাংকগুলোর মুনাফা ব্যাপক হারে কমে যায়, লোক ছাঁটাই হয়। বেসরকারি খাতে ঋণ কমে যাওয়ায় মোট দেশজ উত্পাদন প্রবৃদ্ধির হারও প্রায় দশমিক ৭৫ শতাংশ কমে যায়।

তিনি বলেন, সুদহার বাজারভিত্তিক করার অর্থ হলো এর ওঠানামা ঠিক হবে বাজারের চাহিদা ও জোগানের ওপর। কেন্দ্রীয় ব্যাংক একটা হার নির্ধারণ করে দিলে বাজারে কোনো প্রতিযোগিতা তৈরি হয় না। এ থেকে বের হতেই মূলত বাজারের সুদহার ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। ব্যাংকিং খাত থেকে কাঙ্ক্ষিত সুবিধা পেতে হলে আমাদের নয়-ছয়ের বাইরে গিয়ে বৃহৎ সংস্কারের ওপর মনোনিবেশ করতে হবে বলে মত দেন তিনি।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, বিক্রি প্রক্রিয়ায় কিছুটা স্বচ্ছতা আসায় সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে ধস নেমেছে। এ অর্থের একটি অংশ ব্যাংকে আমানত হিসেবে এসেছে। রেমিট্যান্সেও বড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। আমরা দেখেছি, করোনা ভাইরাস আসার আগেই দেশের আমদানি-রফতানিসহ মৌলিক সব সূচক নিম্নগামী।

তিনি বলেন, তৈরি পোশাক কারাখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কর্মীরা চাকরি হারাচ্ছে। বিজিএমইএ, বিকেএমইএ পলিসি সাপোর্টের জন্য দাবি করছে। ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ১০ হাজার কোটি টাকা নীতিসহায়তা চেয়েছে। এর আগে শেয়ার বাজারসংশ্লিষ্ট ১০ হাজার কোটি টাকা চেয়েছেন। এ ১০ হাজার কোটি টাকা একটা পলিসি ডিমান্ডের সাপোর্ট হিসেবে দাঁড়িয়ে গেছে।

ড. জাহিদ হোসেন বলেন, এখন করোনাভাইরাস আসছে, এর ফলে প্রভাবটা আরো পড়বে। যদি প্রকোপটা বেশিমাত্রায় হয়, তাহলে প্রভাব আরো বাড়বে। অর্থনীতির চাপ বাড়বে, রাজস্ব প্রবৃদ্ধির চাপ বাড়বে। সার্বিকভাবে আমরা বলতে পারি, যে অর্থনীতির সংকট আমাদের তৈরি হয়েছে সেটা কমছে না।

দুটি কারণে বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন। তিনি বলেন, প্রথমত. সস্তা শ্রমে বাংলাদেশীরা বিদেশে কাজ করছে। দ্বিতীয়ত. তৈরি পোশাক খাত, যেখানে নিম্নতমের চেয়ে একটু বেশি মজুরিতে শ্রমিকরা কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে। এর বাইরে আমাদের নতুন কোনো খাত আছে কি, যেখান থেকে আমাদের রফতানি আরো বাড়তে পারে? আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আরো বাড়তে পারে এমন কোনো খাত দেখা যাচ্ছে না।

জাতীয় সঞ্চয়পত্রের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় স্কিমগুলোর সুদহারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার মাঠ সবার জন্য সমান নয়। এসএমই ও রিটেইলেও ৯ শতাংশ সুদে ঋণ দেয়ার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অথচ এ দুটি খাতের সাধারণ সঞ্চিতি ৫ শতাংশ, যেখানে বড় ঋণের সঞ্চিতি ১ শতাংশ। এসএমই ও রিটেইলে ঋণের সুদহার কমিয়ে আনতে হলে সঞ্চিতিতে ছাড় দিতে হবে।

৯ শতাংশ সুদে আমরা তখনই ঋণ দিতে পারব, যখন ৫ শতাংশের মধ্যে আমরা তহবিল পাব। কিন্তু বাজারে এখনো তারল্যের সংকট আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে প্রতিদিন ৮-১০ হাজার কোটি টাকা ধার নিয়ে ব্যাংকগুলো সিআরআর-এসএলআর সংরক্ষণ করছে। দেশের ব্যাংকারদের কর্মদক্ষতারও ঘাটতি আছে। যে কাজ ২ টাকা খরচ করে আদায় করা সম্ভব, সেটি করতে আমরা ৮ টাকা ব্যয় করছি। এখন ঋণের সুদহার কমানো হলে ব্যাংকগুলোর মুনাফা অনেক কমে যাবে।

মাসরুর আরেফিন বলেন, দেশের অর্থনীতিতে এখন আড়াই লাখ কোটি টাকা লেপ-তোশকের নিচে আছে। এ টাকা অর্থনীতির মূল স্রোতে আসছে না। সাধারণ মানুষের কাছে লোভনীয় প্রডাক্ট নিয়ে হাজির হলে, তবেই এসব অর্থ ব্যাংকিং খাতে আসত।

সুদের হার বেঁধে দেয়ার অভিঘাত দেখার জন্য কেনিয়ায় যেতে হবে না বলে মন্তব্য করেন অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. জায়েদ বখত। তিনি বলেন, রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংকগুলো খুবই প্রতিকূল পরিস্থিতিতে এক অংকের সুদ নীতি বাস্তবায়ন করেছে। দেড় বছর ধরে আমরা এক অংকের সুদে ঋণ দিচ্ছি। সুদহার কমানোর পরও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর আমানত বেড়েছে।

২০১৭ সালে পুরো ব্যাংকিং খাতে আমানতের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১০ শতাংশ। ২০১৮ সালে এটি কমে ৯ শতাংশ হলেও ২০১৯ সালে এটা আবার বেড়ে ১২ দশমিক ৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০১৭ অগ্রণী ব্যাংকের আমানত প্রবৃদ্ধি ছিল ৭ ভাগ। সুদের হার কমানোর পরেও ২০১৮ সালে সেটি ১৭ শতাংশ এবং ২০১৯ সালে ১১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়েছে।

তিনি বলেন, ঋণের সুদহার কমানোর ফলে অগ্রণী ব্যাংক অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। কিন্তু তার পরও বছর শেষে আমাদের নিট মুনাফা বেড়েছে। তবে ১ এপ্রিল থেকে ঋণের সুদহার সর্বোচ্চ ৯ শতাংশে নেমে এলে ছোট ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য সমস্যা হবে।

ব্র্যাংক ব্যাংকের চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, সুদের হার নয়-ছয় নিয়ে যে আলোচনা হচ্ছে, এটা যদি আমরা যথাযথভাবে বাস্তাবায়ন না করতে পারি, তাহলে ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা অকার্যকর হয়ে পড়বে। এতে ব্যাংকের গলাকাটা অবস্থা সৃষ্টি হবে। বাংলাদেশের অর্থনীতির অবস্থা বর্তমানে খুবই অপ্রতুল অবস্থায় রয়েছে। ব্যবসায় টাকা খাটালে উন্নতির চেয়ে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। এ অবস্থা ব্যাংকিং খাত সংস্কার ছাড়া আমাদের অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি ধরে রাখা সম্ভব নয়। যদি ঘোষণা দিয়েই যদি সবকিছুই পরিবর্তন সম্ভব হতো, তাহলে বাজার ব্যবস্থার কোনো প্রয়োজন হতো না। ঘোষণা দিয়েই সবকিছু পরিবর্তন করা যায় না।

তিনি বলেন, সরকার যে নয়-ছয় সুদের নীতি নির্ধারণ করেছে, এটা বাংলা অর্থ আমরা এখানে ব্যবহার করতে চাচ্ছি না। এটার নামে আমরা ভেলকিবাজি দেখতে চাই না। ব্র্যাক ব্যাংকের মোট ঋণের ৫০ শতাংশই এসএমই। আমি ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম, ৯ শতাংশ সুদে আমরা এসএমই ঋণ দিতে পারব কিনা? এর উত্তর হলো, সম্ভব নয়। বিদ্যমান এসএমই গ্রাহকদের নতুন ঋণ না দিলে পুরো ৫০ শতাংশ অর্থই খেলাপি হয়ে যাবে।

আহসান এইচ মনসুর বলেন, সুদহার চাপিয়ে দিলে ব্যাংকগুলো উইন্ডোরেসিং করে বাংলাদেশ ব্যাংককে মিথ্যা তথ্য দেবে। নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে ভাবতে হবে, তারা সেটিই চান কিনা? সরকারি ব্যাংকের সঙ্গে বেসরকারি ব্যাংকের তুলনা চলে না। দুই ধারার ব্যাংক একই গতিতে চললে সরকারকে ফারমার্স ব্যাংকের মতো বেসরকারি অন্য ব্যাংকগুলোকেও টেনে তুলতে হবে। ভ্যাট আইনের কবলে পড়ে এসএমই খাত বড় ধরনের ক্ষতির শিকার হয়েছে। এখন সুদহার চাপিয়ে দিয়ে এসএমই খাতকে ঋণ দেয়া বন্ধ করে দিলে, ভবিষ্যতে এসএমই মেলা করে কোনো লাভ হবে না। এসএমইদের খুঁজে পাওয়া যাবে না।

তিনি বলেন, আমার হিসেবে দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ২৩-২৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণ নিয়ন্ত্রণ করতে পারলে সুদহার বেঁধে দিতে হবে না। এমনিতেই ঋণের সুদ কমবে। সুদহারকে বাজার ব্যবস্থার ওপর ছেড়ে দিতে হবে। ডিক্টেটরশিপ চাপিয়ে দিয়ে সুদহার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, দেশের অর্থনীতির অনেক উন্নতি হয়েছে। কিন্তু অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সংগতি রেখে ব্যাংকিং খাতের প্রবৃদ্ধি হয়নি। ব্যাংকিং খাতকে ঠিক করতে হলে সুশাসনের উন্নতি করতে হবে। খেলাপি ঋণ অবশ্যই কমাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন শক্তিশালী বিচার ব্যবস্থা। কিন্তু আমরা সেটি দেখছি না। উল্টো ঋণখেলাপিরা রাষ্ট্রের নীতিপ্রণয়নের সঙ্গে জড়িয়ে যাচ্ছেন।

তিনি বলেন, ২০১৯ সালে আমরা ৫১ হাজার কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করেছি। যেখানে ২০১৮ সালে পুনঃতফসিলকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ২৩ হাজার কোটি টাকা। এর মাধ্যমে ডিসেম্বর শেষে হয়তো খেলাপি ঋণ কিছুটা কমেছে। তার পরও খেলাপির হার ৯ শতাংশ। যদিও নেপালের মতো একটি ছোট অর্থনীতির দেশের ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ২ শতাংশ।

আস্থার ঘাটতি তৈরি হওয়ায় বেসরকারি ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা টাকা তুলে নিচ্ছে জানিয়ে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, ব্যাংক কোম্পানি আইনসহ কয়েকটি আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স অ্যাক্ট নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ব্যাংক থেকে গ্রাহকরা আমানত তুলে নিচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।

লংকাবাংলা ফিন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খাজা শাহরিয়ার বলেন, সম্প্রতি কিছু ঘটনা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর মানুষের আস্থার ঘাটতি তৈরি হয়েছে। এ সংকট শুধু আমাদের দেশেই নয়, অন্যান্য দেশেও রয়েছে। সংকট থেকে বের হয়ে আসতে আলাদা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। এর পরও অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ভালো করছে। আশার কথা হচ্ছে, আমাদের সরকার এসব বিষয় উন্নতির জন্য কাজ করছে।

আশা করি অল্প কিছুদিনের মধ্যে ব্যাংক খাতের সব সমস্যা কেটে যাবে। বিশেষ করে আমাদের দেশে যেসব ডিপোজিট করা হয়, সেগুলো অনেকটাই স্বল্প সময়ের জন্য। ব্রিটেনে যেসব ডিপোজিট হয় এগুলো অনেক দীর্ঘমেয়াদি। এ জায়গায় আমাদের উন্নতি করতে হবে। আমাদের ব্যাংকগুলোর আয়ের তুলনায় ব্যয় অনেক বেশি হচ্ছে। যে কারণে আয়-ব্যয়ের সমন্বয় করা যাচ্ছে না।

তিনি বলেন, আমাদের ব্যাংক ব্যবস্থাপনাকে ডিজিটালাইজেশন করতে হবে। এখানে অনেক বিনিয়োগ করতে হবে। ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে অ্যাপের মাধ্যমে নিয়ে আসতে হবে। এক্ষেত্রে বিকাশ অনেক ভালো করছে। কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে অন্য ব্যাংকগুলোতে। এ বিষয় নিয়ে আরো ভালোভাবে কাজ করতে হবে। এছাড়া আমাদের ব্যাংকিং খাতে যে অর্জন, তা ধরে রাখার জন্য ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনাকে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।

এসএমই ঋণের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, শুধু এসএমই মেলা করে প্রান্তিক গ্রামীণ মানুষের উন্নতি করা সম্ভব হবে না, যদি সহজ শর্তে ঋণ দেয়া সম্ভব না হয়। অর্থিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকিং প্রবৃদ্ধির উন্নতি করতে হলে সবাইকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। শুধু শহরের মানুষের কথা চিন্তা না করে প্রান্তিক গ্রামের মানুষের উন্নতির বিষয় মাথায় রেখে এখন থেকে কাজ করতে হবে।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন। তিনি বলেন, দেশে সামগ্রিকভাবে সুশাসনের অভাব রয়েছে। সরকারিভাবে যদি আমার সুশাসন নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে ব্যাংকিং খাতকে আবার উন্নতির দিকে নিয়ে যেতে পারব। ব্যাংকিং ব্যবস্থাপনা উন্নতির জন্য আন্তর্জাতিকভাবে যেসব নীতিমালা দেয়া হয়েছিল, সেটার দিকে না তাকিয়ে আমরা উল্টো পথে হাঁটছি।

আমরা বড়দের দিকে তাকাচ্ছি। গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর দিকে নজর দিচ্ছি না। আমরা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শক্তিশালী একটা ভূমিকা দেখতে চাই। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ক্রমেই দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। বাইরে থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর নীতিমালা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে, এটা থেকে বের হয়ে আসতে হবে।

বিআইডিএসের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো ড. নাজনীন আহমেদ বলেন, আমরা যে নয়-ছয় নিয়ে আলোচনা করছি, এখানে যদি ভোক্তা ঋণকে বাইরে রাখা যায়, তাহলে ভালো হয়। ভোক্তাঋণের সুদহার ৯ শতাংশে নামিয়ে আনলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাবে।

বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন: সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইদুজ্জামান, এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ, সাবেক সচিব রীতি ইব্রাহীম, সাবেক সচিব মনোয়ার আহমেদ, সাবেক সচিব আনোয়ার ফারুক, সাবেক সচিব আব্দুল লতিফ মন্ডল, ইউজিসির সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান, ইউআইইউর উপাচার্য অধ্যাপক ড. চৌধুরী মফিজুর রহমান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুল বায়েস, ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. একে এনামুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মাহমুদ ওসমান ইমাম ও অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান, বিআইপির সভাপতি স্থপতি ড. আখতার মাহমুদ, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ওয়াসিকা আয়শা খান এমপি, প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমান, টিভি টুডের এডিটর ইন চিফ মনজুরুল আহসান বুলবুল, বিসিআই সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী, ডিসিসিআই জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এনকেএ মবিন, ডিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান, বাংলাদেশ বিমানের সাবেক এমডি এমএ মোমেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য অধ্যাপক হান্নানা বেগম, বিআইবিএমের সাবেক মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহ্মদ চৌধূরী, বিকাশ লিমিটেডের সিইও কামাল কাদীর, ইউনাইটেড পাওয়ার জেনারেশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের এমডি মইনুদ্দীন হাসান রশীদ, ইউনাইটেড সিকিউরিটিজের পরিচালক মোহাম্মদ খায়রুল আনাম চৌধুরী, এসিআই এগ্রিবিজনেসের এমডি ও সিইও ড. ফা হ আনসারী, এসিআই লিমিটেড (কনজিউমার ব্র্যান্ড) এমডি সৈয়দ আলমগীর, স্বপ্নের সিইও সাব্বির হাসান নাসির,

বেঙ্গল মিটের সিইও এএফএম আসিফ, ওমেরা ফুয়েলস লিমিটেডের সিইও মো. আকতার হোসেন সান্নামাত, ডেভো-টেক টেকনোলজি পার্কের চেয়ারম্যান রায়হান শামসি, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইসমাইল, অগ্রণী ব্যাংক লিমিটেডের এমডি মো. শামস-উল-ইসলাম, বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের এমডি মো. আলী হোসেন প্রধানিয়া, পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের এমডি মো. আব্দুল হালিম চৌধুরী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের এমডি সৈয়দ ওয়াসেক মো. আলী, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের এমডি কাজী ওসমান আলী, এনসিসি ব্যাংক লিমিটেডের এমডি মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক লিমিটেডের এমডি খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, সীমান্ত ব্যাংক লিমিটেডের এমডি মুখলেসুর রহমান, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক এমডি আনিস এ খান, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফরাহ মো. নাসের, সিটি ব্যাংকের ডিএমডি মাহিয়া জুনেদ,

এবি ব্যাংকের ডিএমডি মো. আবদুর রহমান, ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেডের ডিএমডি হাসান ইকবাল, এফআরসি চেয়ারম্যান সিকিউকে মুসতাক আহমদ, নির্বাহী পরিচালক এম আনোয়ারুল করিম, মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আহমেদ ও মো. সাঈদ আহমেদ, সিডিবিএলের এমডি শুভ্র কান্তি চৌধুরী, লংকাবাংলার পরিচালক মাহবুব আনাম, লংকাবাংলা ক্যাপিটাল মার্কেট অপারেশন্সের এমডি মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন চৌধুরী, লংকাবাংলা ফিন্যান্স লিমিটেডের হেড অব অপারেশন্স একেএম কামরুজ্জামান, লংকাবাংলা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের উপদেষ্টা খন্দকার আসাদ উল্লাহ, এএফসি ক্যাপিটাল লিমিটেডের এমডি মাহবুব এইচ মজুমদার, এমটিবি ক্যাপিটাল লিমিটেডের সিইও খায়রুল বাশার আবু তাহের মোহাম্মদ, ইসলামিক ফিন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি আবু জাফর মো. সালেহ,

ডিএসইর শেয়ারহোল্ডার পরিচালক মিনহাজ মান্নান ইমন ও শাকিল রিজভী, বিএমবিএর সভাপতি ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. ছায়েদুর রহমান, বিএমবিএর সহসভাপতি ও আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের এমডি মো. মনিরুজ্জামান, আইসিএবির সহসভাপতি সাব্বির আহমেদ, বিএপিএলসির সহসভাপতি ও ন্যাশনাল পলিমার ইন্ডাস্ট্রিজের এমডি রিয়াদ মাহমুদ, বিএপিএলসির মহাসচিব মো. আমজাদ হোসেন, বিএলএফসিএর চেয়ারম্যান ও আইপিডিসি ফিন্যান্সের এমডি মমিনুল ইসলাম, ফিনএক্সেলের এমডি নুরুল হক মজুমদার, আইডিআরএর সাবেক সদস্য ও একাডেমি অব লার্নিংয়ের এমডি সুলতান উল আবেদিন মোল্লা, বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন কাউন্সিলের সচিব ড. একিউএম শফিউল আজম, একনাবিনের পার্টনার মো. রুকনুজ্জামান, পুলিশ সদর দপ্তরের এআইজি সোহেল রানাসহ অনেকে।

ক্যাটেগরী: ব্যাংক

ট্যাগ: ব্যাংক

ব্যাংক ডেস্ক, বিবি শুক্র, মার্চ ৬, ২০২০ ৬:১৯ পূর্বাহ্ন

Comments (Total 0)