দেশের ১৪ ভাষা হারিয়ে যাবে?

দেশের ১৪ ভাষা হারিয়ে যাবে?

বাংলাদেশে শুধু বাংলাই নয়, আরো অনেক মাতৃভাষা আছে। যেগুলো ব্যবহার করে থাকে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীরা। এরমধ্যে অন্তত ১৪টি ভাষা হারিয়ে যাওয়ার পথে। এসব ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাই বিপন্ন হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে- এ তথ্য জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। তাদের দাবি, বেশিরভাগ ভাষার বর্ণমালা নেই বলে এগুলো সংরক্ষণও করা যাচ্ছে না।

বান্দরবানের ক্রান্সিপাড়ায় সাতটি রেংমিটচা পরিবার এখনো টিকে আছে। যাদের ভাষার নামও রেংমিটচা। তবে অপ্রচলিত এ ভাষায় কথা বলতে পারা মানুষ বেঁচে আছে মাত্র ছয় জন। তাদের বেশিরভাগই প্রবীণ। ভাষাটি সংরক্ষণ করা না হলে এই ছয় জন মানুষের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে পৃথিবী থেকে মুছে যাবে একটি ভাষার ইতিহাস।

যুক্তরাষ্ট্রের ডার্টমাউথ কলেজের ভাষাবজ্ঞিান বিভাগের অধ্যাপক ডেভিড এ পিটারসন জানান, একটি ভাষার সাথে জড়িয়ে থাকে একটি জনগোষ্ঠীর ইতিহাস ও সংস্কৃতি।

আন্তজার্তিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ২০১১ সালেও রেংমিটচা ভাষা জানা মানুষের সংখ্যা ছিলো ৪১ জন। এ ভাষার মতোই এদেশ থেকে আরো ১৩টি ভাষা বিপন্ন হওয়ার পথে। এর মধ্যে রয়েছে খাড়িয়া, সৌরা, কোডা, মুন্ডারি, কোল, মালতো, কন্দ, খুমি, পাংখোয়া, চাক, খিয়াং, লালেং এবং লুসাই।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক জীনাত ইমতিয়াজ আলী জানান, বেশিরভাগ ভাষার বর্ণমালা না থাকায় সংরক্ষণ করাও কঠিন।

দেশে বাংলাসহ ৪১টি ভাষা আছে। এর মধ্যে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর ভাষা ৩৩টি। জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি সংস্থার (ইউনেস্কো) মতে, পৃথিবীতে কোনো ভাষায় যদি কথা বলা লোকের পরিমাণ পাঁচ হাজারের কম হয় তবে তা বিপন্ন ভাষা হিসেবে স্বীকৃত। এই হিসেবে বাংলাদেশে বিপন্ন ভাষার সংখ্যা ১৪।

১৯৯৯ সালে ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পায়। এরপর উদ্যোগ নিলেও প্রায় এক দশক পর ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠানটির প্রথম বড় উদ্যোগ হিসেবে বাংলাদেশের বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর অবস্থান ও ভাষা পরিস্থিতির তথ্য অনুসন্ধানের জন্য একটি কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। ‘বাংলাদেশের নৃভাষাবৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’ শীর্ষক এই কর্মসূচি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক ড. মো. সাইফুর রশীদ ও হাসান এ শফি এবং ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৌরভ সিকদারের নেতৃত্বে পরিচালিত হয়। তিন কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার টাকা ব্যয়ে ২০১৪ ও ২০১৫ সালে সারাদেশে মাঠ পর্যায়ে সমীক্ষাটি চালানো হয়। ওই সমীক্ষায় নিজস্ব মাতৃভাষা আছে এমন ৪১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর তথ্য-উপাত্ত সংগৃহীত হয়।

#তমহ/বিবি/২১-০২-২০২১

ক্যাটেগরী: অনুসন্ধানী

ট্যাগ: অনুসন্ধানী

অনুসন্ধানী ডেস্ক, বিবি রবি, ফেব্রুয়ারী ২১, ২০২১ ১২:৫২ পূর্বাহ্ন

Comments (Total 0)