স্বপ্নের পদক নিলামে তুললেন সিলেটের রুহেল

স্বপ্নের পদক নিলামে তুললেন সিলেটের রুহেল

মানুষের মন কত বড় হলে নিজের স্বপ্ন বিক্রি করা যায়? তিল তিল করে নিজের কষ্টে অর্জন করা স্বপ্নের পদক অসহায় মানুষের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য বিক্রি করে দিতে পারেন! মহামারি করোনাকালে ক্ষুধার্ত অনাহারিদের জন্য নিলামে তুলে নিজের ইংলিশ অলিম্পিয়াড মেডেলটি বিক্রি করে দিলেন সিলেটের শিক্ষার্থী, প্রাবন্ধিক ও উদ্যোক্তা রুহেল বিন ছায়েদ।

অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাইয়্যিদ স্যারের একটা কথা আছে 'মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়'। এই কথাটির যথার্থতাই ফুটে ওঠেছে বিএসএএ সভাপতি রুহেল বিন ছায়েদের একটি সময়োপযোগী সিদ্ধান্তে। নিজের অর্জিত সবচেয়ে প্রিয় পদকটি সিলেটের ভাদেশ্বরের দরিদ্র মানুষের সাহায্যার্থে নিলামে তুলেছিলেন। চিন্তাতীতভাবে কাড়াকাড়ি শুরু হয় সেই পদকটির জন্য।

নিলামে অংশ নেয় প্রায় ২০ জনের অধিক মানুষ। টানা ২৫ ঘন্টা বিড পাল্টা বিড শেষে সর্বোচ্চ মূল্য দাঁড়ায় ৩৪৫০০/- টাকা! এখন সে অর্থ খরচ হবে সিলেটের ভাদেশ্বরের অসহায় মানুষের জন্য। বোধকরি এটি একটি দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে পুরো বাংলাদেশের ইতিহাসে।

নিলামে সর্বোচ্চ বিড করে জিতেছেন সিলেটের ভাদেশ্বরের সন্তান আমেরিকা প্রবাসী বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মনসুর আহমদ আইয়ুব।

গত ৭ মে, রুহেল বিন ছায়েদ তার ফেসবুকে ইংলিশ অলিম্পিয়াড পদকের ছবিটি দিয়ে একটি পোস্ট দেন। ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন- আমার অর্জিত এই মেডেলটি নিজ এলাকার মানুষের জন্য নিলামে তুললাম

আইটেম কোড: #খুশি-০১, আইটেমঃ ইংলিশ অলিম্পিয়াড মেডেল

মেডেলটি তৈরি করা হয়েছে চায়নার One Way Craft Company থেকে। ডিজাইন করেছেন বিখ্যাত ডিজাইনার মাফরুহা কামাল। মেডেলটি 65 মিমি ব্যাস এবং 5 মিমি পুরু।

বিবরণঃ বাংলাদেশের অলিম্পিয়াড ইতিহাসে সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন ও কারুকাজ সম্পন্ন মেডেল হচ্ছে এটি। মেডেলের সামনের অংশে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সোনালী আঁশ পাটের চিত্র রয়েছে যেখানে দেখা যাচ্ছে কৃষকরা পাটের কাজ করছেন এবং সাথে অলিম্পিয়াডের লগো রয়েছে।

মেডেলটির অন্যদিকে ভাষা আন্দোলনকে স্মরণ করে শহীদ মিনারের চিত্র খোদাই করা হয়েছে। এ ধরনের সূক্ষ্ণ কারুকাজের মেডেল প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কোন অলিম্পিয়াডে দেওয়া হয়েছে।

এই প্রোডাক্টটির বেইজ প্রাইসঃ ৩ হাজার টাকা, বিডিং শেষ হবে: আগামীকাল ৮ মে রাত ১১.৫৯ (মোট ২৫ ঘন্টা) , মেডেল বিক্রির টাকা Bhadeswar Social Advancement Association(BSAA) সংগঠনের মাধ্যমে আমার এলাকা ভাদেশ্বরের দরিদ্র পরিবারের জন্য খরচ করা হবে।

কিভাবে বিড করবেন? আইটেমটির বেইজ বা সর্বনিম্ন মূল্যটি দেখুন, আপনি এই পোস্টে কমেন্ট করে বা আমাকে ইনবক্সেও বিড করতে পারবেন। নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত পাওয়া সর্বোচ্চ টাকা যিনি বিড করবেন তাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হবে।

বিডার অবশ্যই বিজয়ী হবার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে আমার বিকাশ, ব্যাংক একাউন্ট কিংবা রেমিটেন্স হিসেবে পিন নাম্বারে সম্পূর্ণ মূল্য পরিশোধ করবেন।

বিকাশ পারসোনালঃ 01758429430, ব্যাংকঃ United Commercial Bank (UCB)

Shibgonj Branch (Sylhet), Mohammad Ruhel Ahmed, A/c: 0513201000038470

রেমিটেন্সঃ Mohammad Ruhel Ahmed মোবাইল- 01758429430

আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন হওয়ার পরে অফিশিয়ালি আমার ফেইসবুক ওয়ালে বিজয়ীর বিস্তারিতসহ নাম ঘোষণা করা হবে। ধাপগুলো সম্পন্ন হবার পরপরই আইটেমটি বুঝিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে (সিলেট শহরের বাইরে হলে ডেলিভারি চার্জ বহন করতে হবে)

বলা বাহুল্য এই মেডেলটি আমার সংগ্রহে থাকা সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও মূল্যবান মেডেলের একটি। এটি পেতে আমাকে ৩ বছর নিরন্তর পরিশ্রম করতে হয়েছে। ইংলিশ অলিম্পিয়াডের যাত্রার শুরু অর্থাৎ ২০১৭ সাল থেকে সিলেটের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মুরারিচাঁদ কলেজের লিড ক্যাম্পাস অ্যাম্বাসেডর হিসেবে কাজ করি আমি।কাজের পুরষ্কার স্বরূপ ২০১৯ সালে আন্তর্জাতিক এই প্ল্যাটফর্মের কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও পাবলিকেশন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পাই।

এখন পর্যন্ত একই পদে এই প্ল্যাটফর্মের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে আসছি। টানা তিন বছর ইংলিশ অলিম্পিয়াডে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পর ২০১৯ সালে এসে শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসেবে এই মেডেলটি আমি পুরস্কার পাই। এটি আমার জন্য খুবই মূল্যবান ও অহংকার করার মতো একটি মেডেল।

কিন্তু এটি এখন নিলামে তুলেছি করোনার প্রাদুর্ভাবে আমার এলাকা ভাদেশ্বরের ক্ষতিগ্রস্ত কিছু দরিদ্র শ্রেণির মানুষের জন্য। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এদের জন্য সহায়তা খুবই জরুরি। এমন না যে আমার এলাকার মানুষ সহায়তা পাচ্ছে না।

বিভিন্ন ব্যাক্তি ও সংগঠন এ এলাকায় দারুন কাজ করছে। আমার সংগঠন বিএসএএ ও প্রায় ২০০ পরিবারকে ইতিমধ্যে সহায়তা প্রদান করেছে। কিন্তু নিজের মধ্যে একটি আত্মোপলদ্ধি এসেছে সম্পূর্ণ নিজের টাকায় কিছু করতে হবে। যেহেতু আমি নিজে কর্মহীন অবস্থায় বাড়িতে চলে এসেছি ২ মাস যাবৎ তাই আমি ব্যাক্তিগতভাবে এ উপায় বেছে নিয়েছি।

আমার পরিবার ও বন্ধুবান্ধব বিষয়টি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। এ মেডেলের বিনিময়ে যদি আমি কিছু মানুষের খুশির কারণ হই তবে সেটার চেয়ে বড় মেডেল আমার জন্য আর কিছু হবে না। তাই মেডেল কোডের নাম দিয়েছি খুশি-০১।

সারাজীবন এ সুখস্মৃতি মেডেল হিসেবে মনে থাকবে। একই সাথে যিনি এই মেডেলটি কিনবেন তিনিও মানবতার সেবায় নিজেকে যুক্ত করে আজীবন গর্বিত থাকবেন বলে আমি বিশ্বাস করি। এই মেডেলটি তার জন্য হবে গর্বের খোরাক।

রুহেল বিন ছায়েদ: প্রাবন্ধিক ও উদ্যোক্তা, হেড অব মিডিয়া এন্ড পাবলিকেশনস ইংলিশ অলিম্পিয়াড

 

ক্যাটেগরী: ফিচার

ট্যাগ: ফিচার

ফিচার ডেস্ক, বিবি শনি, মে ১৬, ২০২০ ২:১১ পূর্বাহ্ন

Comments (Total 0)