করোনা রোগীর চেয়েও বেশি চাল চোর: রিজভী

করোনা রোগীর চেয়েও বেশি চাল চোর: রিজভী

দেশে করোনাভাইরাসের রোগী যত শনাক্ত হচ্ছে বা ধরা পড়ছে, তার চেয়েও বেশি ত্রাণের চাল চোর ধরা পড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘করোনার চেয়েও আমরা বেশি শক্তিশালী’। সেটিই প্রমাণিত হলো—করোনা রোগী যত শনাক্ত হচ্ছে বা ধরা পড়ছে, তার চেয়েও বেশি ত্রাণের চাল চোর ধরা পড়ছে।’’ ১২ এপ্রিল এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।

সরকার যে পরিমাণ চাল বিতরণ করছে, তা মোটেও পর্যাপ্ত নয় দাবি করে রিজভী বলেন, ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে যোগ হয়েছে চাল চুরির মহোৎসব। মিডিয়ায় প্রতিদিন যে পরিমাণ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রকাশিত হচ্ছে, তার চেয়েও চাল চোরের সংখ্যা বেশি। যেখানে কে বাঁচবে তার কোনও নিশ্চয়তা নেই, যেখানে জীবন এখন অনেক বেশি অনিশ্চিত, সেখানে কী করে আওয়ামী লীগের লোকজন ত্রাণের মালামাল চুরি করে খায়? এদের লোভ-লালসা, লজ্জা-শরম, বিবেকবোধ সবকিছু অন্ধ করে দিয়েছে।’

জীবনবিনাশী করোনাভাইরাসের আক্রমণ ও আওয়ামী লীগের চাল চুরি চলছে সমান তালে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, ‘চাল চুরির ঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাই বেশি জড়িত। সারাদেশে গত ৯ দিনে অন্তত ২ হাজার ২৬৪ বস্তা সরকারি ত্রাণের চাল চুরির খবর পাওয়া গেছে।’

রিজভী বলেন, ‘সরকারি হিসাবে দেশের খাদ্য গুদামগুলোতে ১৭ দশমিক ৫১ লাখ টন চাল মজুত আছে। এই পরিমাণ চাল দিয়ে ৩/৪ কোটি মানুষকে ছয় মাস অনায়াসে খাওয়ানো সম্ভব। অথচ মানুষ অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছে। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকায় একটি হৃদয়বিদারক মর্মস্পর্শী ঘটনায় সবাই নির্বাক হয়ে গেছে। সেখানে আফরোজা খাতুন নামে এক শিশু ক্ষুধার যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যা করেছে।’

রিজভী আরও  বলেন, ‘সরকার দেশের এত উন্নয়ন করেছে, বিশেষ করে বিদ্যুতের উন্নয়নে দেশ নাকি আলোয় ঝলমল করছে। অথচ এই করোনা দুর্যোগে বিদ্যুতের অভাবে করোনার কিট উৎপাদন করতে পারছে না গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র।’

দেশ ‘উত্তম’ আয়ের নাকি ‘মধ্যম’ আয়ের, দেশের অবস্থা এখন ‘মিরপুর’ নাকি ‘সিঙ্গাপুর’ এখন এসব কাগুজে বিতর্কের সময় নয় বলেও উল্লেখ করেন রিজভী। তিনি বলেন, ‘‘এখন সরকারের প্রধান দায়িত্ব ও কর্তব্য হচ্ছে প্রায় তিন কোটি মানুষের ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া। অথচ এর পরিবর্তে জনগণ দেখছে ভিন্ন চিত্র। কথায় বলে ‘কারও ঘর পোড়ে, কেউ আলু পোড়া খায়..।’’

বিএনপি দলীয়ভাবেও সারাদেশে সাধ্যমতো জনগণের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে দাবি করে রিজভী বলেন, ‘এটাই খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ। বিএনপি এবং বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও তাদের সাধ্যমতো জনগণের প্রতি সহায়তার হাত বাড়িয়েছে।’

বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, ‘যেভাবে হু হু করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, তাই ডাক্তারদের সঙ্গে বিতণ্ডা পরিহার করে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতাল, বেড, ডাক্তার, স্বাস্থ্যকর্মী, ওষুধ ও চিকিৎসা সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে। সব বৃহৎ উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ এখনই স্থগিত করে জরুরি ভিত্তিতে স্বাস্থ্য খাতে সেই টাকা ব্যয় করতে হবে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে এখন থেকেই প্রয়োজনীয় নির্দেশনা ও প্রয়োজন সাপেক্ষে আর্থিক জোগান দিতে হবে। দেশে করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষায় এখনও গতি আসেনি। নমুনা সংগ্রহে গলদ, ল্যাবগুলোর সক্ষমতা কাজে না লাগানোয় কাজটিতে গতিসঞ্চার হচ্ছে না। অধিক মাত্রায় পরীক্ষা না হওয়ায় করোনার ভয়াবহতা নিরূপণ করা যাচ্ছে না বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।’

ভাইরাসটির ভয়াবহতা থেকে দেশকে রক্ষা করতে সব ভেদাভেদ ভুলে একযোগে কাজ করতে হবে বলেও মনে করেন রিজভী।

#এসকেএস/বিবি/১৩-০৪-২০২০

ক্যাটেগরী: রাজনীতি

ট্যাগ: রাজনীতি

রাজনীতি ডেস্ক, বিবি সোম, এপ্রিল ১৩, ২০২০ ৬:৩৬ পূর্বাহ্ন

Comments (Total 0)