ভেটেরিনারিতে সহজ কর্মসংস্থান

ভেটেরিনারিতে সহজ কর্মসংস্থান

ডা. আজমত আলী কুকর বেড়াল নিয়ে তার কারবার। আশির দশকে ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক (ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন ডিভিএম) পাস করেন তিনি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ভেটেরিনারি কর্মকর্তা হিসেবে নগর প্রশাসনে যুক্ত আছেন। এছাড়া পোষা কুকুর বেড়ালের জন্য প্রতিষ্ঠিত দেশের অন্যতম প্রধান চিকিৎসালয় গুলশান পেট অ্যানিমেল ক্লিনিকের প্রধান পরামর্শক চিকিৎসক তিনি। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তায়েব মিল্লাত হোসেন

পোষা প্রাণীর চিকিৎসক হলেন কিভাবে?

​ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ছিলো চিকিৎসক হবো। কিন্তু এসএসসি ও এইচএসসির মিলিত ফলাফলের যে মানদন্ড তার থেকে ১০ নম্বর কম থাকায় মেডিকেল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারিনি। তাই ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। সেখান থেকে ডক্টর অব ভেটেরিনারি মেডিসিন (ডিভিএম) করি। ১৯৮৭ সালের ডিসেম্বর মাসে যোগ দেই ঢাকা সিটি করপোরেশনে।

পশু চিকিৎসকদের সামাজিক মর্যাদা এখন কেমন?

একসময় পশু চিকিৎসার সাথে যুক্ত ব্যাক্তিবর্গকে একটু নিচু চোখে দেখা হতো। স্বাধীনতার পরে বঙ্গবন্ধু সরকারিভাবে পশু চিকিৎসকদের ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারদের সমান মর্যাদা দেন। রাষ্ট্রীয় মর্যাদা তখন থেকেই বেড়ে যায়। তবে সামাজিক মর্যাদা বাড়তে আরও সময় লেগেছে। এখন দেশি বিদেশি কুকুর বেড়াল পোষার প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। তাই ভেটেরিনারি ডাক্তারদের মর্যাদা ও চাহিদা দুটোই বেড়েছে।

ভেটেরিনারি চিকিৎসকদের প্রতি আপনার পরামর্শ কী?

এই পেশায় কর্মরত যারা, তাদের সময়ের সাথে তালমিলিয়ে চলতে হবে। অনেকেরই তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ে দক্ষতার ঘাটতি আছে। এই কারণে তারা পেশাগত ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়ছে। কারণ আধুনিক ও শিক্ষিত মানুষরা বাসাবাড়িতে কুকুর বেড়াল লালন পালন করে। তারা ইন্টারনেটের সহায়তায় কুকুর বেড়াল সম্পর্কে অনেক নতুন নতুন তথ্য পায়। এক্ষেত্রে ভুল তথ্য পাওয়ার ঝুঁকিও আছে। কিন্তু ইন্টারনেট বিষয়ে ধারণা না থাকলে ভেটেরিনারি ডাক্তার আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ভুল তথ্যটি ধরিয়ে দিতে পারে না। এতে করে চিকিৎসকের প্রতি সেবাগ্রহিতার সম্মানে ঘাটতি তৈরি হয়। গুগল, ফেসবুক, ইউটিউব ঘাটাঘাটি করতে জানলে একজন ভেটেরিনারি ডাক্তার যেমন পশু চিকিৎসা সম্পর্কিত নিত্য নতুন তথ্য জানতে পারেন; তেমনি সেবাগ্রহিতার সঙ্গে যোগাযোগের ক্ষেত্র হিসেবেও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে পারবেন।

ভেটেরিনারি চিকিৎসক হতে চাইলে কী করতে হবে?

তরুণ প্রজন্মের যারা এই পেশায় আসতে চায়, তাদের প্রথমত এসএসসি ও এইচএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়তে হবে। তাতে অবশ্যই থাকতে হবে জীব বিজ্ঞান ও গণিত। এরপর ডিভিএম পাস করতে হবে। এটা করা যায় বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ময়মনসিংহ), ভেটেরিনারি ও অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (চট্টগ্রাম), সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (দিনাজপুর), শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (গাজীপুর), পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ধুমকি) এবং ঝিনাইদহ সরকারি ভেটেরিনারি কলেজে। প্রতি বছর এসব প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ৫০ জন পাস করে বের হচ্ছে।

ডিপ্লোমা প্রকৌশল ও প্যারামেডিকেলের মতো মধ্যমসারির পড়াশোনার কোনো ব্যবস্থা নেই?

একজন পশু চিকিৎসকের অধীনে অন্তত চারজন প্যারাভেটস দরকার। কিন্তু বাংলাদেশে এ বিষয়ে পড়াশোনার কোনো সুযোগ নেই। প্রাণীসম্পদ বিভাগে পশু চিকিৎসকের মাঠ সহকারী বা কম্পাউন্ডার হিসেবে এইচএসসিতে বিজ্ঞান পড়া ছেলেমেয়েরা নিয়োগ পাচ্ছে। নিয়োগের পর প্রথমে এক বছর তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। অথচ প্যারাভেটেরিনারি শিক্ষা কার্যক্রম থাকলে চাকরি দেয়ার পর প্রশিক্ষিত করার কোনো দরকার পড়তো না। প্রাণী সম্পদ বিভাগের অধীনে দ্রুতই এ ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করা উচিত। এক্ষেত্রে পাঠ্যক্রম প্রনয়ন, সনদপত্র দেয়াসহ মূল তদারকির কাজটি করতে পারে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ড।

এখন যারা ভেটেরিনারি পড়াশোনা করছে, তাদের কর্মজীবন কতটা সম্ভাবনাময়?

সরকারি চাকরি মূলত প্রাণীসম্পদ বিভাগকেন্দ্রিক। এক্ষেত্রে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে বেশিরভাগ নিয়োগ হয়। ভেটেরিনারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় শিক্ষকতা করারও সুযোগ আছে। তবে এখন প্রতি বছর অনেক শিক্ষার্থী পাস করে বের হচ্ছে, এর বিপরীতে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানে শূণ্যপদ ক্রমশ কমছে। তাই সরকারি চাকরি সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। বেসরকারিখাতে প্রধানত মুরগির খামার, দুগ্ধ খামার ও প্রক্রিয়াজাত করা মাংস (প্রসেসড মিট) প্রতিষ্ঠানে কর্মসংস্থান হতে পারে। পশুর ওষুধশিল্পে উৎপাদন ও মোড়কজাত করা এবং বিপননে ভেটেরিনারি ¯Œাতকদের নিয়োগ করা হয়। ব্যাংকেও তাদের চাকরি হতে পারে। খামারে ঋণ দেয়ার বিষয়টি ব্যাংকের পক্ষ থেকে তাদের দেখভাল করতে হয়।

তবে তরুণ প্রজন্মের ভেটেরিনারি স্নাতকদের চাকরিমুখী প্রবণতা ত্যাগ করা উচিত। তারা মুরগি ও দুগ্ধ খামার এবং মাংসশিল্পে দারুণ অবদান রাখতে পারে। এসব খাতে বিনিয়োগ করলে তারা অনেক অনেক ভালো করবে।


তায়েব মিল্লাত হোসেন
Published at: রবি, আগষ্ট ১৮, ২০১৯ ১১:৩৮ পূর্বাহ্ন
Category: আলাপ
Share with others:
ad

Recent Posts

Recently published articles!